শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


অসহায় মানুষগুলোকে আল্লাহ ভাল রাখুক!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারান্নুম ইসলাম।।
গোপালগঞ্জ>

সবার জীবনে আনন্দের কিছু মুহূর্ত আসে। যে আনন্দ মুহূর্তের স্মৃতি কখনো ভুলা যায়না। ঠিক তেমনিভাবে কিছু কষ্টের মুহূর্ত আসে যার স্মৃতি ও কোনদিন ভুলা যায় না। কিছু পাওয়ার আনন্দ থাকে যা ব্যক্ত করা যায় না। কিছু না পাওয়ার কষ্ট থাকে যা কখনও বোঝানো যায় না।

না জানা আমার এই মনে বারে বারে প্রশ্ন জাগে আমার জীবনে আনন্দ আর পাওয়া টাই বেশি? নাকি কষ্ট আর না পাওয়াটাই বেশি? তবুও যেন জীবনের হিসাবের খাতা মিলাতে পারিনা। আর উত্তরও আমার জানা হয়না।

তখন মাঝে মাঝে মনে হয় এত উত্তর মিলিয়ে কি হবে? আমি তো খারাপ নেই। একরকম চলে যাচ্ছে! ভালো আছি। কিন্তু তারা? তারা কেমন আছে? যারা ওই ছোট্ট খুপরিতে রাত কাটাচ্ছে, দিনের পর দিন পার করছে, বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অসহায়ভাবে।

না খেয়ে না পরে জীবন পার করছে, ব্যস্ত এই শহরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তখনের ওই অবসর সময়টুকু তারা কি আমার মত বসে বসে নেয়ামতের তৃপ্তির ঢেকুর তুলে এই সৌখিন ভাবনা ভাবছে যে আমি কেমন আছি ? নাকি ভাবছে এর পরের বেলার আহার কি হবে,?

আমরা নিজেদের মতো নিজেরা ভালো থাকতে চেষ্টা করি, তাদের নিয়ে একটু ভাবার সময়ও আমাদের হয় না। তাদের এই অসহায় দৃষ্টি আমাদের দিকে পড়লেও যেন আমরা বিরক্ত বোধ করি। বিরক্ত ভঙ্গিতে মুখ ফিরিয়ে নেই। শুধু আমরা ভালো থাকতে চাই আমাদের মত করে।

তাদের ওই দুঃখের কথা ভাববার ফুরসত ও আমাদের নেই। ভাবতে গেলে বোধ হয় আমরাও ওই দুঃখের ভাগিদার হয়ে যাব আজ। আমাদের ভাবনা এমন,আহ কতই না সুন্দর আমাদের বিবেক!! অতীতের স্মৃতির পাতায় লেখা ছোট্ট একটি ঘটনা মনে পড়ছে।

বছর পাঁচেক আগের কথা। আম্মুর সাথে নানু বাড়িতে যাচ্ছিলাম। মাঝে এক জায়গায় দশ মিনিট এর জন্য বাস থামলো। এক অসহায় ব্যক্তি উঠলো বাসে। সবার থেকে কিছু পাওয়ার আশায়। দুই-একজন পাঁচ দশ টাকা করে দিল। এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নামার জন্য উঠে দাঁড়ালো!

ঐ লোকটির সাথে হালকা একটু ধাক্কা লাগলে অসহায় লোকটি মৃদু হেসে দিল। ভদ্র লোকটি রাগমূর্তি হয়ে চিৎকার করে বলে উঠল। এখানে কি চান? দেখছো না নামবো। সড়ে দাঁড়াও এখান থেকে। আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

লোকটার এমন অপ্রত্যাশিত চিৎকারে ফিরে তাকালাম। দেখি শার্ট থেকে বোধহয় ময়লা ঝাড়ছে। অসহায় লোকটার অপরাধ এতোটুকুই, যে তার হাত ওই ভদ্র লোকটির শার্টে লেগেছে,। লোকটিকে শার্ট টি ঝাড়তে দেখে আমি অসহায় লোকটির হাতের দিকে তাকালাম। সত্যিই কি তার হাতে ময়লা আছে? ওই লোকটার দিকে ওভাবে তাকানোর কথা মনে পড়লেই ,ইচ্ছে হয় এখন নিজের চোখ উপড়ে ফেলি, উফফ কেমন আমি!

ভদ্রলোকটি কে যাওয়ার সুযোগ করে দিল ঐ লোকটা। তখন পাশের একজন এর কাছে এসে দাঁড়াতেই লোকটি ১০ টাকার একটি নোট বের করে দিল। অসহায় লোকটি টাকা হাতে নিয়ে অনেক দোয়া করলেন। বললেন, বাবা ভালো নেই তাই তো তোমাদের বিরক্ত করতে আসি।

কথাটা যদিও তখন বুঝিনি তবে এখন একটু বুঝতে পারি। আহ কতই না কষ্ট লুকায়িত ছিল ওই ছোট্ট একটি কথার মধ্যে। লোকটা বলতে গিয়ে এক রকম, কেঁদেই দিলেন।

আম্মু বললেন ব্যাগ থেকে ২০ টাকা নিয়ে দাও। কিন্তু আফসোস হচ্ছিল তখন যখন দেখলাম ভাংতি টাকা নেই। আমি আম্মুকে বললাম একটা পানি কিনে নিয়ে আসি আর ওনাকে বিশ টাকা দিয়ে আসি? আম্মুর যেন সম্মতি দিতে একটু ভাবতে হলো, বা ইচ্ছা করলো না , তবুও বললেন আচ্ছা। আমি নিচে নামতেই লোকটি'ও বাস থেকে নেমে পড়লো। আস্তে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

আমি পানি কিনে টাকা টা ওনার কাছে দেওয়ার জন্য একটু এগোলাম। তার মধ্যেই বাস ছেড়ে দিল, সবে ছেড়ে দেওয়া বাসটির দিকে কাঁদো কাঁদো দৃষ্টি তে তাকিয়ে সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেল পানিতে। তবে চোখের পানি নিচে গাল বেয়ে পড়তে হলো না, তার মধ্যেই বাস থেমে গেল। হেলপার আমাকে নেয়ার জন্য এগিয়ে আসলো।

হারিয়ে যাওয়া মানিক ফিরে পেলে মানুষ যেমন খুশি হয়, তার থেকে বেশি খুশি হয়ে বাসে উঠে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম ,।

লোকটির হাতে বিশ টাকা দিতেই তার চোখে-মুখে অদ্ভুত এক খুশি দেখেছি, যে খুশি তখন আমার মুখ থেকে কত টাকা দিয়ে দেখতে হতো জানি না,অথচ লোকটি আমার থেকে কত বড়। তার খুশি কত অল্পতেই, একই পৃথিবীর বাসিন্দা মোরা, তব তাদের পথ চলা টা ভিন্ন , কিন্তু এমন কেন? কার জন্য? বা কাদের জন্য? কে দায়ী এর জন্যে?

উত্তর গুলো বোধহয় খুব কঠিন, তাই জানি না। এসব ভাবলে সব কিছু এলোমেলো লাগে , ক্ষণিকের এই দুনিয়াকে একেবারেই মিথ্যে মনে হয়, কি লাভ এত এত স্বচ্ছন্দময় জীবন যাপন করে ।আজ এই দুনিয়াতে আমরা খুশি, এবং মিথ্য সফলকাম,আর ওই লোক গুলো অসহায়, হয়তো পরকালে তারাই হবে সফলকাম, আর আমরা হবো হতভাগা বা হতভাগি। তাহলে আসল সফলকাম আমরা ?নাকি তারা?

আল্লাহর শুকরিয়া ওই অসহায় মানুষগুলোর থেকে আমরা অনেক ভাল আছি, তবে আমাদের এই ভালো থাকা যেন আমাদের অভিশাপ না হয়ে দাঁড়ায় । আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে পরকালে ও আমাদের ভালো থাকতে হবে ,এই ভাবনা টুকু আল্লাহ আমাদের অন্তরে গেঁথে দিক।

সেদিন এর ওই অল্প সময়ের কিছু প্রাপ্প পাওয়া কিছু কষ্ট কিছু খুশি, আমাকে এখন বোঝাই যে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি আর কষ্টের মধ্যেই পার হয়, তবে কম অথবা বেশি, এই কষ্ট দুঃখের মধ্যে থেকে, অথবা সুখ-শান্তির মধ্যে থেকেও পরকালেও যেন আমরা সফল হতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন। আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিক। সঠিকভাবে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুক। আর ওই অসহায় মানুষগুলো, যারা ভালো নেই তাদেরকে আল্লাহ ভাল রাখুক। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ