মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


যেভাবে কেটেছিল মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী রহ. এর জীবনের শেষ দিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসমাঈল বিন মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী রহ.।।

চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) আব্বু অন্যান্য দিনের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন। নাজিরহাট মাদরাসায় সেদিন শূরার বৈঠক ছিলো। আব্বু ঐ শুরায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাথে আমিসহ আরো দু'জন খাদেম ছিলো। সেখান থেকে যোহরের পর যখন হাটহাজারিতে ফিরে আসি তখনও আব্বু সুস্থ। মাদরাসায় পৌঁছে আব্বু আছর পর্যন্ত বিশ্রাম নিলেন।

[caption id="" align="aligncenter" width="308"]No photo description available. এ কিতাবটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার কম্পিউটার ছাপা দরসি কিতাব সম্পর্কে জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]

বাদ আছর যথারীতি রুমে বসলেন এবং সাক্ষাৎপ্রার্থী ওলামা, তলাবা, ফুযালাদের সাথে কথা বললেন। মাগরিবের পর একটু ক্লান্তি বোধ হলে আধা ঘন্টা শুয়ে থাকলেন। এরপর কয়েক জন উস্তায এসে আব্বুর সাথে দেখা করে গেলেন। তারপর প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী খানাপিনা করলেন। রাত ১১ টার দিকে আমাকে ডেকে স্বাভাবিকভাবে কথা বার্তা বললেন। তখনও আমি আব্বুর মাঝে মৃত্যুর কোন আলামত দেখতে পাইনি।

আমাকে বসিয়ে ইস্তেফানামা লিখালেন। সে ইস্তেফানামাতে আব্বুকে সকল যিম্মাদারি থেকে ফারেগ করে শুধুমাত্র ফতোয়া বিভাগের দায়িত্ব দেয়ার জোর দাবি জানালেন এবং আগামিতে যেন তা ব্যতিত অন্য কোন এদারি বা ইহতেমামি (মাদরাসার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পত্র) দায়িত্ব দেয়া না হয় তাও লিখলেন। এবং সেটার ১২ টি ফটোকপি করিয়ে খামে ভরলেন।

এ ইস্তেফানামার ব্যাপারে আব্বু হয়তো ইস্তেখারা করেছিলেন, কারণ আমরা দেখেছি আব্বু ছোট থেকে ছোট-বড় থেকে বড় যেকোন বিষয়ের জন্য ইস্তেখারা করতেন, এমনকি কাকে খাদেম হিসেবে রাখবেন, কাকে রাখবেন না এ ব্যাপারেও আব্বু ইস্তেখারা করতেন।

ঐ রাতে নিয়মানুসারে তাহাজ্জুদও পড়লেন। আব্বুর কখনো তাহাজ্জুদ মিস হত না। প্রতিদিনই নিজে অযু করে তাহাজ্জুদের সালাত এবং যিকির-আযকার আদায় করতেন, এদিনও তার ব্যতিক্রম হল না বরং অন্যদিনের তুলনায় এদিনের যিকির একটু উচ্চ আওয়াজে হয়েছিল।

[caption id="" align="aligncenter" width="297"]May be an image of text এ কিতাবটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার কম্পিউটার ছাপা দরসি কিতাব সম্পর্কে জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]

আমরা মনে করেছিলাম ,আব্বু আমাদের ফজরের সালাতের জন্য ডাকছেন, পরে ভালো করে খেয়াল করলে দেখি, তিনি উচ্চস্বরে যিকির করছেন! যিকির করতে করতে ফজরের সময় হয়ে গেলে তিনি নামায পড়ে মুনাজাত করলেন। ফজর ও আসরের পর মুনাজাত ছিল আব্বুর নিয়মিত আমল। সেদিনের মুনাজাত ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি লম্বা। এরপর তাসবিহ তাহলিল ও معمولات يومية (দৈনন্দিন আদায়কৃত দোয়া দরুদ এর আমল) আদায় করলেন।

আটটার দিকে সকালের নাস্তা করলেন। নাস্তা খুব সামান্য খেয়েছিলেন, কিন্তু খুব হাসি খুশি ছিলেন। তখনও আমরা তাঁর মাঝে কোনো ব্যথা বা মৃত্যুর কোনো আলামত দেখিনি। নাস্তা শেষে আব্বুর খাদেম মাওলানা হুমায়ুনের মাধ্যমে হযরত মাওলানা ইয়াহয়া সাহেবের কাছে ইস্তেফানামা পৌঁছালেন৷ কিছুক্ষণ পর সে পৌঁছেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করেন, তিনি বলেন আমি পৌঁছেয়েছি।

[caption id="" align="aligncenter" width="376"]No photo description available. এ কিতাবটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার কম্পিউটার ছাপা দরসি কিতাব সম্পর্কে জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]

আব্বু সবসময়ই নাস্তার পর ১/২ ঘন্টা ঘুমান। তাই সেদিনও আমরা তাঁকে শুইয়ে দিলাম।

এর মাঝে সূরা কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন, মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী। রেজুলেশন শোনানোর জন্য শোয়া দশটার দিকে একজন এসে আমাকে বললো, আব্বুকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৷

আমি আব্বুর রুমে প্রবেশ করে আব্বুর অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকজন উস্তায ও খাদেমকে ডাকলাম। অতঃপর আব্বুকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানকার চিকিৎসকরা জানালেন, আব্বু আর নেই। ইন্তেকাল করেছেন। انا لله وانا اليه راجعون

আল্লাহ আমার আব্বুকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন, আমিন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ