মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


তখন মক্কা খুব ছোট্ট একটি শহর ছিলো, স্মৃতিগুলো ভুলতে পারি না!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি রোববার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ৩৫ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ উমর ফারুক ইবরাহীমী।]


পূর্ব প্রকাশের পর: হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পরও কিছুদিন আমাদের মক্কা মুকাররমায় থাকতে হয়েছিল। সেই দিনগুলোতে আমি আমার আম্মাজানকে তওয়াফ করাতে নিয়ে যেতাম। এতদিনে তাওয়াফের প্রায় সবগুলো দোয়া আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আমি শব্দ করে পড়তাম, আমার থেকে শুনেশুনে তাওয়াফরত অনেক মহিলারাও দোয়াগুলো পড়তে থাকতেন।

মক্কা মুকাররমা সেসময় ছোট্ট একটি শহর ছিল। আমাদের যাতায়াত হারাম শরীফের বাইরে সন্নিকটেই একটি ছাদযুক্ত মার্কেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি এই বাজারকেই سوق المدی অথবা سوق اللیل বলা হতো। (বর্তমানে নতুন সংস্করণে এই বাজারের সব অস্তিত্ব মিটে গেছে।)

হাজি সাহেবের একমাত্র পুত্র ধীরেধীরে আমাদের বন্ধু বনে গেলেন। তিনি আতরের জগতে বিখ্যাত নাম "السرتی” এর মালিক ছিলেন। (বর্তমানে তার পুত্র অর্থাৎ হাজি সাহেবের নাতি এই ব্যবসার মালিক।)

হাজি সাহেবের পুত্র কখনো আমাদেরকে সেই বাজারে নিয়ে যেতেন। সেসময়ে পাকিস্তানি ষোল আনায় এক রুপি হতো। আর এক রিয়ালের মূল্যমান ছিলো বিশ আনা। সেই বাজারে এক রিয়ালে একটি শরবত পাওয়া যেত। শরবতটি আমার খুবই পছন্দনীয় ছিল। তাওয়াফের ফাঁকে কিছু সময় পেলেই আমি শরবত খেতে দৌড়ে চলে যেতাম। এছাড়া ভিন্ন কোন ব্যস্ততা তখন আমার ছিলোনা।

মক্কা মুকাররমার পর মদীনা মুনাওয়ারায় যাবার সময় ঘনিয়ে এলো। জানা গেলো ওখানে যাওয়ার জন্য পাকা সড়ক নেই। আর বাসে যাওয়াটাও শংকামুক্ত নয়। কারণ, কাঁচা সড়কে ড্রাইভার বেপরোয়া গাড়ী হাঁকালে মুসাফিরদের মাথা গাড়ীর ছাদের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া গন্তব্যে পৌছুতেও সময় অনেক লেগে যাবে। সুতরাং আব্বাজান রহ. বিমানে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

সেজন্য আমাদেরকে ফের জেদ্দা আসতে হয়েছে। জেদ্দা পৌছে জানা গেল বিমান মাগরিব নিকটবর্তী যেকোনো সময়ে রানওয়ে ত্যাগ করবে। সুতরাং আমরা আসরের সময়ই বিমানবন্দর পৌছে গেলাম। বিমানবন্দরইবা কী ছিলো! একটি ছোট্ট ভবন, সব মুসাফিরদের স্থানসংকুলান কোনভাবেই সেখানে সম্ভব ছিলনা। তাই যাত্রীদের বাইরে বালুতে বসেই বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো।

আমরাও বালুতে কাপড় বিছিয়ে বসে পড়লাম। এটাই ছিল আমার বিমানে চড়ার প্রথম উপলক্ষ। স্বভাবতই মদীনা মুনাওয়ায় হাজিরির অভিলাষ ছাড়াও আজ আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা হবে- এই ভেবে শিশুসুলভ মন আনচান করছিল। মাগরিব পূর্বসময়ে বিমান ছেড়ে যাবার ঘোষণা থাকলেও মাগরিবের পর ঈশার সময় হয়ে গেলো, বিমান উড়ার কোন সংবাদ তখনো আসেনি। ঈশার পরও অপেক্ষার প্রহর ফুরায়নি। এভাবেই চারিদিকে রাতের পিনপতন নীরবতা নেমে আসলো। মুসাফিররা তখন ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

রাত বারোটার দিকে একজন বিমান প্রতিনিধি আসলেন। তার হাতে যাত্রীদের একটি তালিকা ছিল। তিনি একে একে যাত্রীদের নাম ডেকে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করছিলেন। সবার শেষে একজন মহিলার নামের পূর্বে ‘মুসাম্মাত’ লেখা ছিল।

বেচারা এটাকেও কারো নাম মনে করে বারবার ‘মুসাম্মাত, মুসাম্মাত’ বলে গলা ফাটাচ্ছিলেন। কিন্তু কে সাড়া দেবে এই নামে? তিনি বিমানবন্দরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ডেকেই চললেন। অবশেষে খুবসম্ভব আমাদের ভাইজান তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এটা কারো নাম নয়, বরং মহিলাদের নামের শুরুতে এটি লেখা হয়ে থাকে। যাইহোক, তার হাজিরা নিতে দেখে কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে, এবার হয়তো বিমানে আরোহনের ডাক আসবে।

কিন্তু তার ফিরে যাবার কয়েকঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিমানে চড়ার সুসংবাদ নিয়ে আর কেউ আমাদের ডাকতে আসেনি। সারারাত এভাবেই ফুরিয়ে গেছে। সুবহে সাদিকের সময়ে জানা গেল বিমান এখনি উড়তে যাচ্ছে এবং যাত্রীদের যারযার আসনে বসানো হচ্ছে।

আব্বাজান রহ. বললেন, এখন বিমানে চড়ার অর্থ হচ্ছে, আমাদের ফজরের নামায কাযা হওয়া। তাই তিনি ইচ্ছে করেই নামায পড়ে নেয়া যায় মতন সময় বিলম্ব করলেন। নামাযের পর আমরা বিমানে আরোহন করেছি। এটি একটি ছোট্ট ‘ডাকোটা বিমান’ ছিল। এটিই আমার জীবনের প্রথম বিমানে চড়ার উপলক্ষ ছিল, স্বভাবতই তখন আমার আনন্দের অন্ত ছিলনা।

চলবে ইনশাআল্লাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ