মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


‘উলুমুল হাদিসের ইতিহাসে দেশের জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

‘এ আনন্দ ও সম্মাননা পুরো দেশবাসীর’

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল  দেশের উচ্চতর গবেষণা বিভাগ মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়ার আমীনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেক লিখিত হাদিস শাস্ত্রের প্রাথমিক বিষয়াদি নিয়ে আরবি ভাষায় রচিত ‘আল মাদখাল ইলা উলূমিল হাদিস’ নামক কিতাবটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা।

বাংলাদেশি একজন লেখকের কিতাব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দাপট দেখিয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের রাজধানী কায়রোর আন্তর্জাতিক বই মেলায়। ‘এ আনন্দ ও সম্মাননা পুরো দেশবাসী’র- বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েই এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর উলুমুল হাদিস বিভাগের শিক্ষক মুফতী আবদুল্লাহ নাজীব।

‘গত জুলাই-এ মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত বই মেলায় ‘আল মাদখাল’ কিতাবটি বেষ্ট সেলার হয়েছে। কিতাবটির প্রকাশক দার আর রায়াহীন নিজের পেইজে খবরটি পোষ্ট করার পর খবরটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। অনেকেই নিজ আইডিতে বা কমেন্ট বক্সে আনন্দ প্রকাশ করেন। শেয়ার করেন নিজ নিজ আইডিতে । খোদ ‘দার আল-রায়াহীন’-এর পেইজে তাদের অন্য সব বেস্ট সেলার কিতাবের সাথে ‘আল মাদখাল ইলা উলুমুল হাদিস শারিফ’- এর নাম উল্লেখ করার পর কিতাবের লেখককে নিয়ে সেখানে কমেন্টে যে পরিমাণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে তাও চোখে পড়ার মতো’ বলছিলেন তিনি।

উচ্ছ্বসিত মুফতী আবদুল্লাহ নাজীবের ভাষায়, ‘এ আনন্দ শুধু আমার একার নয়, বরং সবার , দেশ বাসীর’।।

যে কারণে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত ‘আল মাদখাল ইলা উলূমিল হাদিস’

কিতাবটি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিস শারীফ’ কিতাবটি দেশের বাইরের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বের হাতে অনেক আগেই পৌঁছেছিল, আরবের অনেক শায়েখকে দেখেছি তারা মারকাযে এসে কিতাবের লেখক শায়খুল হাদীস ওয়াস সুন্নাহ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং সাগ্রহে আল মাদখাল কিতাবটি সংগ্রহ করেছেন ‘।

এছাড়া ইতোমধ্যে ভারত, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের দারুল উলূম ও জামিয়াতে কিতাবটি নেসাবের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাই সহজলভ্যতার জন্য দেশের বাহির থেকে ছাপানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিতাবটি দারুর রায়াহীন থেকে ছাপানো হচ্ছে এ খবর পেয়ে তখনই আমরা আনন্দিত ছিলাম, কিতাবটি বেষ্ট সেলার মার্যদা লাভে আমরা সত্যিই উচ্ছ্বসিত’- আওয়ার ইসলামকে বলছিলেন মুফতী আবদুল্লাহ নাজীব।

‘কিতাবটি বহির্বিশ্বে ইলমি মহলে সাড়া জাগানোর অনেক কারণের মধ্যে রয়েছে বর্তমান সময়ে কিতাবের লেখক শায়খুল হাদীস ওয়াস সুন্নাহ মাওলানা আব্দুল মালেক-এর পরিচিতি শুধু দেশ নয়; দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহিমাহুল্লাহ, শায়খ আব্দুর রশিদ নোমানী রহিমাহুল্লাহ, শাইখুল ইসলাম মুফটি তাকি উসমানি, শায়খ আওয়ামা-এর মতো মানুষদের হালকায়ে তিনি ব্যাপক পরিচিত। লেখকের পরিচিতিও কিতাবের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ’।

‘হাদিস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূল ব্যাখ্যাকারীদের  বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ জবাব’

‘সাম্প্রতিক সময়ে সালাফি ঘরনার অনেকেই হাদিস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। উসূলে হাদীসের প্রয়োগ ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রান্তিকতার শিকার হয়েছেন। উলূমুল হাদিসের অনেক মৌলিক চিন্তার ভূল ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাদের অনেকে। তাদের চিন্তা ধারায় অনেকে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। সালাফি ঘরনার লোকজনের এই বিচ্যুতির বিপরীতে ভিন্ন চিন্তার বলিষ্ঠ জবাব দরকার আছে বলে অনেকেই ভেবে থাকেন। এ বিষয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে অনেকেই মানুষকে সতর্ক করে গেছেন এবং করছেন। তবে উলুমুল হাদিসের প্রাথমিক স্তর থেকে নিয়ে রাবী ও হাদীসের তাসহীহ ও সাযঈফ সংক্রান্ত আলোচনাগুলো ধারাবাহিক ভাবে মুতাকাদ্দিম মুহাদ্দিসগণের সঠিক চিন্তা এবং বর্তমান সালাফিদের প্রান্তিকতার নিবর ও সরব খন্ডন হয়েছে এই কিতাবটিতে। এক সাথে এভাবে ধারাবাহিক উপস্থাপনা অন্য কিতাবে তেমনটি দেখা যায় না। কিতবাটির জনপ্রয়িতার এটিও একটি বড় কারণ- বলছিলেন মুফতী আবদুল্লাহ নাজীব।

আরো পড়ুন: মিসর আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘বেস্ট সেলার’ মাওলানা আবদুল মালেকের বই

তিনি আরো যুক্ত করেন, উলূমুল হাদীস নিছক আক্ষরিক অর্থে কিছু উসূল বা নীতির নাম নয়। এখানে ইমামগণের চিন্তা চেতনা এবং যাওক ও ইজতিহাদের বেশ প্রভাব রয়েছে। তাই উলুমুল হাদিসের সঠিক ব্যবহার জানার জন্য ইমামগণের চিন্তা চেতনা ও ইজতিহাদ সঠিকভাবে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে যারা উসুলুল হাদীসের ভুল প্রয়োগ করছে, তারা মূলত এ গুণের অভাবেই তা করে যাচ্ছে। আল মাদখাল কিতাবটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এদিকে পাঠকে সজাগ ও সচেতন করা হয়েছে। আলোচনার বাকে বাকে পাঠকের ফিকিরের তারবিয়াত করা হয়েছে।

   ‘উলুমুল হাদিসের শিক্ষার্থীদের জন্য এতে আছে ধাপে ধাপে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা’

উলুমুল হাদিসের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ধাপে ধাপে যে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, এ কিতাবটিতে সে বিষয়গুলো সুবিন্যস্ত ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন আরও বিভিন্ন কারণে কিতাবটি সমাদৃত হয়েছে’ বলছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার উলুমুল হাদিস বিভাগের উসতায মুফতী আবদুল্লাহ নাজীব।

যে কোনো পাঠক গভীরভাবে অধ্যায়ন করলেই বুঝেতে পারবেন ‘আল মাদখাল কিতাবটিতে উলুমে হাদিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যতটা আলোচনা করা হয়েছে তার থেকে বেশি উলুমুল হাদিস বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে শুরু থেকেই একজন তালিবে ইলমের জেহেনকে যেভাবে প্রস্তুত করা দরকার সে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে’ বলছেন তিনি।

‘মোটকথা একজন তালিবে ইলমের জন্য সহিহ পদ্ধতিতে উলুমুল হাদিস শেখার বিষয়ে সহজ কিতাব হচ্ছে আল মাদখাল’।

কিতাবটির অনন্য সব বৈশিষ্ট্য

কিতাবের বৈশিষ্ট্য বিষয়ে মুফতী আব্দুল্লাহ নাজীব বলছেন, কিতাবটি উলূম হাদীস বিষয়ে ইতিদালী চিন্তা ও মানষিকতা তৈরি করে। এটি একটি অন্যতম বৈশিষ্ট। বর্তমানের নানাবিদ প্রান্তিকতার মাঝে এমন একটি কিতাবের খুবই প্রয়োজন ছিলো। যা আল্লাহ তায়ালা হযরতের মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়েছেন।

তিনি বলছেন, ‘তুরুকু তাখরিজিল হাদিস বর্তমানে উলুমুল হাদিসের স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। পূর্ববর্তীদের যুগে একে আলাদা গণ্য করা হতো না, তখনকার সময়ে উলুমুল হাদিসের তালেবে ইলমরা বিষয়টিকে আমলিভাবে নিজেরাই শিখে নিতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণেই এটা আলাদা অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ বিষয়ে যারা শুরুর দিকে কিতাব লিখতে শুরু করেছেন তাদের মধ্যে গবেষক আলেম মাওলানা আবদুল মালেক অন্যতম। তিনি কিতাবটি আল্লাহ তাআলার রহমতে নিজের অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা থেকেই সংকলন করেছেন। অন্য কারও কিতাবের সাহায্য নেননি। এছাড়া তিনি যখন লিখেছেন তখন এ বিষয়ে মাত্র কয়েকটি কিতাব ছিল’। কিতাবটির ভূমিকায় শায়খ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

এছাড়া বিভিন্ন আলোচনায় নতুন নতুন অনেক তথ্য যোগ করা হয়েছে। যা অন্য কিতাবে পাওয়া ভার। অনেক পুরনো আলোচনার নতুন উপস্থাপনাও কিতাবটির বড় একটি বৈশিষ্ট।

মুফতী আব্দুল্লাহ নাজীবের চোখে আল মাদখালের অন্যতম আরেকটি একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; ভাষার সাবলীলতা ও সহজ-সরল উপস্থাপনা। দেখে বোঝার উপায় নেই এই কিতাব কোন আজমীর (অনারবি) লেখা। আরবের অনেক শায়েখ নিজেরাই এর স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

 ‘উলুমুল হাদিসের ইতিহাসে দেশের জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়’

তার ভাষায়, উলুমুল হাদিসের প্রতিটি নাও (অধ্যায়ের) ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস আছে, এক্ষেত্রে উলুমুল হাদিসের তুরুকু তাখরিজিল হাদিস এই অধ্যায়ের সূচনা ও ইতিহাস নিয়ে যদি আমরা আলোচনা করতে চাই তাহলে গর্বের সাথেই বলতে পারবো; নিজেদের যোগ্যতা ও প্রতিভার ভিত্তিতে এ বিষয়টিকে সমৃদ্ধ করতে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশি আলেম মাওলানা আবদুল মালেক।

‘এ বিষয়ের ইতিহাস লিখতে গিয়ে বাংলাদেশে থেকেই আমরা বাংলাদেশের একজন আলেমের নাম লিখতে পারবো- এটা অন্যরকম গর্বের জায়গা’।

আরো পড়ুন: আল মাদখাল: ‘একসাথে এক কিতাবে এমন জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পাওয়া বিরল’

তার মতে, ‘তুরুকু তাখরিজিল হাদিস বিষয়ে পরবর্তীতে এবং বর্তমানেও অনেকে কিতাব লিখছেন; তবে আল মাদখাল এবং সেসব কিতাবের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। পরবর্তীতে হয়তোবা তুরুকু তাখরিজিল হাদিস বিষয়ে মাওলানা আব্দুল মালেক ও অন্যান্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে আলাদা প্রবন্ধও লেখা যেতে পারে’।

‘এ সম্মাননা আশা জাগানিয়া’

তিনি বলছেন, ‘কিতাবটি বহির্বিশ্বে সমাদৃত হওয়ার বিষয়টি আমাদের প্রাপ্তির পাশাপাশি আশাও জাগায়। বর্তমানে যারা ইলম চর্চা করছেন, গবেষণা করছেন। তারা শায়েখের এই কিতাবের মাধ্যমে আরবি ভাষায় কিতাব লেখার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুটোই উপলব্ধি করতে পারবেন’।

মুফতী আব্দুল্লাহ নাজীব বলছেন, ‘আল মাদখাল-এর জনপ্রিয়তার মাধ্যমে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হল, দেশে থেকেও নিরবে গঠনমূলক মৌলিক খেদমত করলে তা আহলে ইলমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই; আল মাদখালের লেখক শায়েখ মাওলানা আবদুল মালেক তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ