বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


সুন্দর বাক্যবিনিময়ে প্রস্ফুটিত হয় উত্তম চরিত্র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুহাম্মাদ আবু সালেহ।।

সুন্দর বাক্যবিনিময় ভদ্রতার পরিচায়ক। মানব চরিত্রের মাধুর্য, সৌন্দর্য্য এবং উৎকর্ষতার পাশাপাশি নিম্নতা ও নিচতা পরিমাপেরও অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে তার ভাষা। ভাষা তিক্ত ও কঠোর হলে তার আঘাত হয় অতি ভয়ানক, তার ক্ষত অনেক গভীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পক্ষান্তরে বিনম্র এবং সুন্দর আচরণ মন গলিয়ে দিতে পারে কঠিন হৃদয়ের মানুষের অন্তরও। সকল নবী-রাসূল ভাষার মাধ্যমে তাঁদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমান অবাধ প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে পাশ্চাত্যের তথাকথিত সভ্য দাবিদারদের নৈতিক স্খলন ও চারিত্রিক রোগ-ব্যধি আমাদের মধ্যেও অনুপ্রবেশ করছে। আমরা নিজেদের অলক্ষ্যেই ক্রমশ ধাতস্থ হয়ে উঠছি তাদের বাচন, কথকতা এবং প্রকাশভঙ্গিতেও। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের ভাব, ভাষা এবং আচার আচরণ ও প্রকাশভঙ্গিতে তাদের অন্ধানুকরণ অনেকাংশেই আজ বিকশিত ও প্রতিভাত।

চরিত্র তখনই সুদৃঢ় হয় যখন এর ভিত্তি স্থাপিত হয় গভীর জ্ঞান এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে অন্যতম শক্তিশালী একটি মাধ্যম ভাষা। এ কারণে কথোপকথন হতে হবে সুন্দর, শ্রুতিমধুর এবং মার্জিত। সুন্দর ভাষা ও কথোপকথনের কিছু কলাকৌশল উল্লেখ করা হলো।

অর্থহীন বাক্যবিনিময় বর্জনীয়: কথোপকথনের আকর্ষণ নির্ভর করে বক্তব্যের উদ্দেশ্যের উপরে। সুতরাং, বক্তব্যের উদ্দেশ্য যত মহৎ হবে বক্তব্য ও কথোপকথন তত সুন্দর, শ্রুতিমধুর, মনোমুগ্ধকর এবং আকর্ষণীয় হবে। তাই অর্থহীন বাক্যবিনিময় থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- 'ক্কওলুল খইরি আওয়িস সমতি', অর্থ- 'হয় উত্তম কথা অন্যথায় নিরবতা'। অর্থাৎ, আপনার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথা হবে অর্থপূর্ণ এবং উত্তম। এমন উত্তম কিছু বলার না থাকলে আপনার নিরব থাকাই উত্তম।

মিথ্যা সকল পাপের মূল: সর্বদা সত্য কথা বলা নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিতে হবে। কেননা, মিথ্যা সকল পাপের মূল। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- সবচেয়ে বড় খেয়ানত হলো, তুমি তোমার মুসলমান ভাইকে এমন একটি কথা বললে যা সে সত্য বলে মনে করল অথচ তা মিথ্যা। -আবু দাউদ

কথা কাজে মিল থাকা চাই: কথাবার্তায় ওইসব বিষয় শামিল থাকা চাই যে বিষয়ে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। নিজের বক্তব্যের সাথে কাজের মিল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। বক্তব্য ও কাজের বৈপরীত্য থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় এতে সমাজে বে-আমলীর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কথা ও কাজের বৈপরীত্যের নিন্দা করে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা মানুষকে ভালো কথা শোনাও অথচ নিজেরা তা ভুলে যাও! -সুরা বাকারা : আয়াত- ৪৪

বাক্য প্রয়োগে কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা কাম্য নয়: বাক্য প্রয়োগে কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কেননা, এসব মানুষের সাথে সম্পর্ক জোড়ার পরিবর্তে সম্পর্কের ভাঙন সৃষ্টি করে। নিজের সত্তাকে অন্যের সামনে সহজ-সরলরূপে প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে।

উত্তম কথা মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ: মন ভাঙে, হতাশা এবং ভীতির সৃষ্টি করে এ ধরনের বাক্যের পরিবর্তে আশা সঞ্চারক এবং কল্যাণকর কথা বলা চাই। বক্তার প্রধান উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কল্যাণ কামনা তাহলে সে সামাজিক জীবনে মানুষের জন্য উপকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হবে। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- বান্দার যবান থেকে কোনো সময় ভালো কথা বের হয়, যা আল্লাহর পছন্দের কারণ। বান্দা এটাকে তেমন গুরুত্বই দেয় না। অথচ আল্লাহ তাআলা এর বদলায় তার মর্যাদা বুলন্দ করেন। -সহীহ বুখারী

বাক্যে নম্রতা ও কমনীয়তা থাকা বাঞ্চনীয়: বাক্যে কমনীয়তা ও ঋজুতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের মতো জালিমের সাথেও নরম ভাষায় কথা বলার আদেশ দিয়েছিলেন হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে। ইরশাদ হয়েছে, فَقُوۡلَا لَہٗ قَوۡلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّہٗ یَتَذَکَّرُ اَوۡ یَخۡشٰی

‘তাদের সাথে নরম ভাষায় কথা বলবে’। -সূরাহ, ত্ব-হা-, আয়াত- ৪৪

উপরোক্ত আয়াতে ফেরাউনের মত মহা দুর্বৃত্ত এবং পাপিষ্ঠ ব্যক্তির সাথেও বিনম্র আচরণের নির্দেশ থেকে সহজেই বুঝে নেয়া সম্ভব যে, সাধারণ মানুষের সাথে কেমন হওয়া উচিৎ আমাদের আচরণ। মুসলমানগণ পরস্পরের মধ্যে কী ধরনের বাক্যবিনিময় করবে তা বলাই বাহুল্য।

শ্রেণিভেদে সকলের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ হওয়া উচিত: শ্রোতার বয়স, মেধা, মানসিক অবস্থা এবং যোগ্যতার প্রতি লক্ষ্য রেখে কথা বলা বিধেয়। শিশুদের সাথেও আদব বজায় রেখে কথা বলতে হবে এবং তাদের সাথে দর্শন বা ফালসাফার ঘুরানো প্যাঁচানো কথাবার্তা বলা উচিৎ নয়। এমনিভাবে মা-বাবার সাথে কথা বলার সময় আল্লাহর নির্দেশ পালনে যত্নবান থাকতে হবে। তাদের সামনে ‘উফ্’ শব্দটিও উচ্চারণ করা যাবে না, কঠোরতা করা যাবে না, উত্তেজিত বা বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। সর্বদা আদব ও ইহতেরামের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে উত্তম চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন। সুন্দর বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে সকলের প্রিয়ভাজন হওয়ার কিসমত নসিব করুন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ