বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ফেসবুকে আসবেন: লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী? মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন।। 

বিগত ১৩ এপ্রিল ২০২১ রোজ মঙ্গলবার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম (Ourislam24.com)-এর সম্পাদক মাওলানা হুমায়ুন আইয়ুব সাহেব যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় এসেছিলেন সাক্ষাতের জন্য। বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হল। এক কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ফেসবুকে হক কথা প্রচার করার বিরাট সুযোগ রয়েছে, প্রয়োজনও রয়েছে। ফেসবুক দাওয়াতী কাজ করার এক বিরাট অঙ্গন।

আল-হামদু লিল্লাহ আমাদেরও প্রচুর লোক রয়েছে ফেসবুকে, অনেক মেধাবীরাও এখানে কাজ করছেন। অনেকেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন। পাশাপাশি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রচুর লোক এমন আছে ফেসবুকে যাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক নেই।

তাদের কাজই হল কার কী দোষ পাওয়া যায় সেগুলো খুঁজে খুঁজে একত্র করা আর সেগুলো অন্যদের শেয়ার করা, ব্যস। ঘুমানোর পূর্বে আর ঘুম থেকে উঠে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতেরও আগে অন্তত আধা ঘন্টা করে ফেসবুক দেখতেই হবে, নইলে পেটের ভাত হজম হবে না। কিন্তু কেন এই ফেসবুক দেখা তার কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য তাদের নেই।

হুমায়ুন আইয়ুব সাহেবের কথায় ফেসবুকে উদ্দেশ্য লক্ষ্যহীনভাবে চলার কারণে মনের কষ্ট প্রকাশও ছিল, আবার তার আড়ালে দিক-নির্দেশনাও ছিল। তার কথায় মূলত দুটো দিক-নির্দেশনা ছিল। এক. ফেসবুকে বিচরণের পেছনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকা চাই। দুই. মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ানো বা অনুরূপ নেতিবাচক লক্ষ্য উদ্দেশ্য অবশ্যই না থাকা চাই। ভাবলাম এ দুটো বিষয় নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ লেখা দাঁড় হতে পারে।

বস্তুত ফেসবুকে মানুষ কত উদ্দেশ্যে বিচরণ করে তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রেমপ্রীতি করা তো একটা কমন উদ্দেশ্য রয়েছেই। এ ছাড়া বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম ব্যবসার উদ্দেশ্যে কাজ করে। কেউ বাজারে উঠে আসার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম আত্মপ্রচারমূলক অডিও ভিডিও ছাড়ে। কেউ আছে কার কী কী দোষ পাওয়া যায় সেগুলো খুঁজে খুঁজে অন্যদের শেয়ার করার কাজে ব্যস্ত। কেউ আছে শুধু অন্যের সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত। কেউ আছে নিজের রূপ চেহারা দেখানো নিয়ে ব্যস্ত।

তারা বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে ছবি তুলে তা স্টোরিতে ছাড়ছে। এর পেছনে কী মহৎ (?) উদ্দেশ্য তা তারাই ভালো জানেন। কেউ কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছাড়াই যখন যা মনে চায় অবলীলায় তাতে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অবস্থা হল চলতে চলতে দেখল এক স্থানে ধর্মীয় কোন বিষয় নিয়ে ইট ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তো ব্যস মারো একটা ইট। কিংবা দেখল কিছু লোক কারও কাপড় নিয়ে টানাটানি করছে ব্যস মারো একটা টান।

আবার জ্ঞান চর্চা ও আদর্শ বিস্তারের মহতী লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়েও অনেকে কাজ করে যাচ্ছেন। এভাবে মন্দ ভাল কত লক্ষ্য উদ্দেশ্যে কতজন কাজ করে তার কোন ইয়ত্তা নেই। কার কী লক্ষ্য উদ্দেশ্য তা নিজেরটাই প্রত্যেকে ভাল জানেন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাই দ্বীন ধর্ম ও আদর্শ-বিরোধী লক্ষ্য উদ্দেশ্য যেন রাখা না হয়। কিংবা লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন চলাও যেন না হয়।

মানুষের জীবনে সব কাজের পেছনেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকা চাই এবং অবশ্যই ভালো লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকা চাই। অবলীলায় জীবন চালানো কিংবা গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া মহৎ জীবনের ধারা হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়।

ফেসবুকে কত রকম অনিয়ম বিশৃঙ্খলা রয়েছে তারও কোন ইয়ত্তা নেই। প্রতিপক্ষের আত্ম-মর্যাদায় আঘাত দিয়ে কথা বলা, টিকা-টিপ্পনী কাটা, প্রতিপক্ষের মান-হানিকর কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন- এগুলো তো মামুলি, রীতিমত অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ পর্যন্ত প্রয়োগ করা হচ্ছে। ছুতোনাতা অজুহাতে প্রতিপক্ষকে কাফের ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়াও দেয়া হচ্ছে। যার যোগ্যতা নেই সেও যোগ্য ব্যক্তিদের সমালোচনা করছে।

বড়দের সমালোচনা করতে আদব-তমিজেরও বালাই থাকছে না। মানুষের দোষ খুঁজে খুঁজে সেগুলো অন্যদের শেয়ার করে কুরুচিকর আনন্দ উপভোগ করা হচ্ছে। অন্যের কেলেংকারি জানতে পারলে প্রমাণিত হোক না হোক তা ছড়াতে মজা বোধ করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম বিশৃঙ্খলার কোনটাই শরীয়তসম্মত নয়, নীতিসম্মত নয়, সুরুচিসম্মত নয়, বিবেকসম্মত নয় বরং অনেকটাই পাপের। তা সত্ত্বেও ইসলামের লেবাসে এগুলো করা হচ্ছে এবং ভাল জ্ঞানে করা হচ্ছে।

ফেসবুকে যারা বিচরণ করেন, তাদের মধ্যে যারা আলেম রয়েছেন, সমঝদার রয়েছেন, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন রয়েছেন তারা যদি এ জাতীয় অন্যায় ও পাপমূলক পোস্ট দেখলে তা লাইক শেয়ার না করে বরং প্রত্যেকে কমেন্ট করেন যে, এরকম বলা বা এগুলো প্রচার করা পাপ, আর পাপের পন্থায় ইসলামের কাজ হয় না, তাহলে এ জাতীয় পোস্ট নিরুৎসাহিত হবে, এগুলোর পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে।

যারা আলেম, সমঝদার ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন তাদের দায়িত্বও রয়েছে শরীয়তবিরোধী কাজ দেখলে জবান দ্বারা সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা। এভাবে শরীয়তবিরোধী, নীতিবিরোধী ও বিবেকবিরোধী তৎপরতাগুলো প্রতিহত করার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুকে বিচরণ করলে ফেসবুক থেকে রকমারি তথ্য আহরণও হবে, সাথে সাথে দ্বীনী দাওয়াত ও গর্হিত তৎপরতা ইসলাহের ছওয়াবও হবে।

উল্লেখ্য- ফেসবুক একটা জগাখিচুড়ি ফিল্ড। এখানে শিক্ষিত, যোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন ও রুচিসম্পন্ন লোকের পাশাপাশি অশিক্ষিত, অযোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও কুরুচিপূর্ণ লোকেরও সমাবেশ রয়েছে এবং তাদের সংখ্যা নগন্যও নয়। তাদের দ্বারা এই ফিল্ড যাচ্ছে তাই হয়ে যাচ্ছে। তাই এই ফিল্ডে ইসলাহী তৎপরতা চালানোর প্রয়োজন অনেক বেশি।

এখানে বাজে লোকের সংখ্যা বেশি, এর ইসলাহ করা সম্ভব নয়- এমনটা ভেবে একেবারে হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। কারণ যেভাবেই হোক প্রচুর লোক জ্ঞান চর্চার সহজ ফিল্ড হিসেবে ফেসবুককে বেছে নিয়েছে এবং শতভাগ লোককে ফেসবুক থেকে বিরত করাও আপাতত সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

তাই পুরো ইসলাহ সম্ভব না হলেও যতটুকু সম্ভব তার চেষ্টা থেকে বিমুখ না হওয়া চাই। আরবী বাগধারায় আছে- ما لا يدرك كله لا يترك كله অর্থাৎ পুরো পাওয়া যাবে না বলে পুরোটাই ছেড়ে দেয়া হবে না। বোঝানো হয়েছে পুরো না পাওয়া গেলেও যতটুকু পাওয়া যায় তার জন্যই চেষ্টা চালানো চাই।

এতক্ষণ ফেসবুকে ইসলাহী তৎপরতা চালানোর প্রয়োজন সম্বন্ধে বলা হল। ফেসবুকের ন্যায় টুইটার ইউটিউব প্রভৃতি অন্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও ইসলাহী তৎপরতা চালানোর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। আল্লাহ্ আমাদের ভাল কিছু করার তাওফীক দান করুন। আমীন! [লেখকের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।]

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ