বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


আম্মার জন্যই ছোট্ট বয়সে আমারও হজ্বের সৌভাগ্য হয়: মুফতি তাকি উসমানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি রোববার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ৩২ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ উমর ফারুক ইবরাহীমী।]


পূর্ব প্রকাশের পর: আতিকা আপা স্বামীর ইন্তিকালের পর স্বীয় তিন কন্যাকে নিয়ে দেওবন্দ থেকে পাকিস্তানে চলে এসেছেন। তার আসার পর জ্যাকব লাইনের বাসা আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল।

হযরত আব্বাজান রহ. ব্রান্স রোডের সন্নিকটে ক্যাম্বল এস্টেরয়েডের একটি বিল্ডিংয়ে প্রসস্থ একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেন। সেটি ইকবাল মনজিল নামে খ্যাত ছিল। আমরা সেখানে চলে গেলাম। আমরা পাঁচবছর (১৯৫১ ইং থেকে ১৯৫৬ ইং) পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম। এই পাঁচবছর কয়েকদিক থেকে আমাদের জন্য বেশ বরকতময় ছিল। সেসময়ই করাচি আমাদের স্থায়ী আবাসভূমি নিশ্চিত হল।

বাল্যকালে আমার প্রথম হজ্বের সফর। এই বাসায় স্থানান্তরিত হবার পর এটিও একটি নিয়ামত ছিলো যে হযরত আব্বাজান রহ. এর হজ্বের একান্ত ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটেছে। একবছর পূর্বে জ্যাকব লাইনের কোয়ার্টারে থাকাবস্থায় তিনি হজ্বের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও তাঁর পাসপোর্ট এবং টিকিট ইত্যাদি চুরি হয়ে যাওয়ায় তিনি হজ্বে যেতে পারেননি, এবছর আব্বাজান ফের দৃঢ় সংকল্প করে রেখেছেন।

সেই সফরে আমার আম্মাজান রহ. এবং আমাদের ভাইজান (জনাব মাওলানা মুহাম্মদ জাকি কাইফি সাহেব রহ) ও সফরসঙ্গী হলেন। আমার বয়স তখন আট বছর। আমি বিহীন আম্মাজানের কোন সফরই যেনো সম্ভব ছিলনা। সেজন্য সেই ছোট্ট বয়সে আমারও হজ্বের সৌভাগ্য হয়েছে। সুতরাং ৩১ জুলাই ১৯৫১ ইংরেজি আমরা এই মুবারক সফরে রওয়ানা হয়ে গেলাম।

হযরত হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ এর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত এক বুযুর্গ আলহাজ্ব যফর আহমাদ সাহেব থানবী রহ. সেসময় 'পান ইসলামিক স্টিম শিপ কোম্পানি'র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। সে কোম্পানির একটি নৌযান ছিলো। সেটাকে 'সাফিনায়ে আরব' বলা হতো। সেটা হজ্বের মৌসুমে হাজিদের আনা-নেয়া করতো।

জাহাজের উপরের তলায় তিনি আমাদের জন্য একটি বড়সড় কেবিন বুক করিয়ে দিয়েছিলেন। কেবিনের একপাশে তিনি সস্ত্রীক ও তার ছেলে মুশাররফ আলী সাহেব এবং একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ছিলেন। অন্যপাশে আব্বাজান রহ. এর সাথে আমরা ছিলাম। সে বয়সে হজ্বের মতো পবিত্র সফরের সামান্য অনুভূতি তো ছিলো।

কিন্তু তার সাথে নৌযানে আরোহন ও সফরের মুগ্ধতাও দারুণভাবে জড়িয়ে ছিলো। আলহাজ্ব যফর আহমাদ সাহেবের পুত্র ও কন্যাও আমার প্রায় সমবয়সী ছিলেন। ফলে লৌকিকতা কাটিয়ে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। বিশালাকারের নৌযান যেন আমাদের গোল্লাছুটের মাঠ বনে গেল। হৈ-হুল্লোড় শেষে যা সময় বাঁচতো আমি হজ্বের কিতাব থেকে তাওয়াফের দোয়াসমূহ ইয়াদ করে নিতাম। প্রায় এক সপ্তাহের সামুদ্রিক সফর ছিলো নেহাত মনোমুগ্ধকর ও চিত্তরঞ্জন। আমাকে দারুণভাবে বিমোহিত করেছিলো।

একপর্যায়ে আমি আব্বাজান রহ. ও অন্যান্যদেরকে দেখলাম, তারা কেপ্টেন থেকে ইয়ালামলামের সামনে দিতে জাহাজ কখন অতিক্রম করবে তা মালুম করে নিচ্ছেন। ( সেসময় পর্যন্ত তাহকিক এটিই ছিল যে নৌযান যখন ইয়ালামলামের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই ইহরাম বাঁধা আবশ্যক। কিন্তু পরবর্তীতে এসে এই তাহকিক বদলে গেছে। বিস্তারিত বিবরণ জাওয়াহিরুল ফিকহে রয়েছে।)

সুতরাং যখন জানা গেলো যে জাহাজ ইয়ালামলাম পৌছে গেছে সবাই ইহরাম বেঁধে নিলেন। আমাকেও ইহরাম পড়িয়ে দেয়া হলো। সেসময় গোটা জাহাজ লাব্বাইকের মধুর ধ্বনিতে মুখরিত ছিলো। পরের দিন আমরা জেদ্দায় পৌছে গেলাম।

চলবে ইনশাআল্লাহ....

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ