[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।
আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি রোববার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ২৮ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ উমর ফারুক ইবরাহীমী।]
পূর্ব প্রকাশের পর: অপরদিকে সেসময়ে আমাদের ভাইজান (জনাব মুহাম্মদ জাকি কাইফি রহ.) স্থায়ীভাবে লাহোর চলে গেলেন।
সেখানে তিনি 'ইদারায়ে ইসলামিয়াত' নামে একটি কুতুবখানা প্রতিষ্ঠা করেন। লাহোরে তার প্রথম সন্তান জন্মের সম্ভাবনা ছিলো। (জন্মের পর যার নাম রাখা হয়েছিল মুহাম্মদ মাসউদ গাওয়াস। এবং জন্মের কিছুদিন পরই তার ইন্তিকাল হয়ে যায়।) সেকারণে আম্মাজান লাহোর সফর করেছেন।
আমি তার আহ্লাদী সন্তান হওয়ায় তিনি আমাকে রেখে সফর করতেননা। মুহতারাম বড় ভাই হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ রফি উসমানি সাহেব মাদ্দাযিল্লুহুম, যাকে আমি ঘরোয়া বে-তাকাল্লুফ পরিবেশে "ভাই রফি" বলে ডাকি, এই স্মৃতিচারণেও সংক্ষিপ্ততা এবং বে-তাকাল্লুফি কখনো এভাবেই সম্বোধন করবো।
সে সফরে তিনি মাহরাম হিসেবে আম্মাজানের সাথে সফরসঙ্গী হলেন। দুইমাস আম্মাজানের সাথে আমাদেরকে সেখানে থাকতে হয়েছে। ভাই সাহেব যেহেতু সেসময় কুরআন হিফয করছিলেন তাই তিনি জামিয়া আশরাফিয়ার এক উস্তাযের কাছে হিফযের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। কিন্তু আমার পড়াশোনা আগে থেকেই অনিয়মিত ছিলো।
তাই আমার পড়াশোনার জন্য কোন নিয়মতান্ত্রিকতা খোঁজার প্রয়োজন ছিলোনা। তবে আম্মাজানের যখনি কিছু সময় পেতেন তিনি আমাকে বেহেশতী গওহার এবং সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া পড়াতে বসে যেতেন। বাকি সময় ঘোরাফেরা, খেলাধুলায় কেটে যেতো।
সেই সময়েরই একটি ঘটনা কখনও ভুলা সম্ভব নয়। প্রচণ্ড শীতের মওসুম। অধিকাংশ সন্ধ্যায় ভাই রফি সাহেব, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মতীন খতীব সাহেবের রহ. সাহেবযাদা মরহুম মুহাম্মদ মঈন সাহেবের সাথে ল্যারেন্স গার্ডেনের "গুলশানে ফাতিমা"য় প্রমোদ ভ্রমণে যেতেন।
গার্ডেনটি সে সময়ে অত্যন্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং সাজানো-গোছানো, পরিপাটি ছিলো। আমিও কখনো কখনো তাদের সাথে চলে যেতাম। গার্ডেনের মাঝখানে একটি লেক ছিলো।
একবারের ঘটনা, তারা উভয়ে খোশগল্পে মজে ছিলেন। আর আমি সে লেকের পাড়ে নির্মিত রেলিঙের উপর হাঁটার অনুশীলন শুরু করে দিলাম। কিছুক্ষণ সফলভাবেই অনুশীলন চললো।
হঠাৎ রেলিঙ থেকে পা ফসকে থপাস করে লেকে পড়ে গিয়ে পানিতে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। ডিসেম্বরের অসহনীয় ঠাণ্ডা ছিলো। লেকের পানিও ছিলো বরফের মতো। চোখের পলকেই যেনো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছিলাম। লেক যদিও অতো গভীর ছিলনা, কিন্তু আমার মতো ছোট্ট বালককে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
ভাই রফি সাহেব এবং ভাই মুঈন সাহেব অনেক সময় নিয়ে আমাকে আধমরা অবস্থায় লেক থেকে টেনে তুললেন। কিন্তু ভেজা কাপড়চোপড়ে পুরো শরীর কাঁপছিলো, এবং শীতের তীব্রতার দরুন দুই পাটির দাঁতে ঠুকাঠুকি লাগছিলো। কাপড় পরিবর্তন করার মত কোন ব্যবস্থাও ছিলনা।
ভাই রফি সাহেব মাদ্দাযিল্লুহুম তখন শীত থেকে বাঁচতে শেরওয়ানি পরে ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বদলা দান করেন! তিনি নিজের শেরওয়ানি খুলে আমাকে পরিয়ে দিলেন। কে জানে, কিভাবে তারা আমাকে বাসায় এনে আগুনের সেঁকা দিয়েছেন!
এরপর আমার প্রাণে প্রাণ ফিরেছে। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো সেই সবক তো আমি সেদিনই পেয়ে গিয়েছিলাম যে, তিনি ইরশাদ করেন- من رعي حول الحمي اوشك ان يقع فيه
কিন্তু হায়! যদি নিজের আ'মাল ও আখলাকেও এই শিক্ষাটুকুর প্রতিফলন ঘটাতে পারতাম!
চলবে ইনশাআল্লাহ....