শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


গবেষণা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাব দিলো টিআইবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদনের ওপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাব দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার (১৪ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি তার জবাব তুলে ধরে।

টিআইবি গত ৮ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে গত প্রতিবেদনটির ওপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১২ জুন কিছু মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টিআইবির রিপোর্টটি আগাগোড়াই ভুল তথ্যসংবলিত’ এবং ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে টিআইবি মনগড়া সমালোচনা করেছে’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, এই গবেষণা সম্পন্ন করার জন্য টিআইবি সামাজিক বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং প্রতিটি তথ্যের সত্যতা একাধিক সূত্র থেকে যাচাই করেছে। গবেষণায় প্রত্যক্ষ উৎস হিসেবে সারা দেশের ৮টি বিভাগের ৪৩টি জেলা, এবং প্রতিটি জেলা থেকে দ্বৈবচয়িতভাবে এক বা একাধিক (মোট ৫৯টি) টিকা কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে।

সেসব কেন্দ্রের টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সরাসরি/প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তুলে আনা হয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে ২১ ধরনের পেশা/জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা করা হয়, দৈবচয়নের ভিত্তিতে জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১২ ধরনের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মোট ৩শ ১৭টি প্রতিষ্ঠান/দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা গ্রহণ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সাংবাদিকদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণায় ব্যবহৃত প্রতিটি তথ্যের সূত্র দেওয়া হয়েছে। কাজেই ‘প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য সংবলিত’ এবং ‘ঘরে বসে তৈরি করা’ এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

টেস্টিং নিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, ‘টিআইবি বলেছে দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র ১টি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট টেস্টের সম্প্রসারণ হলেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার এখনো ৩০টি জেলার মধ্যে সীমিত রয়েছে। সর্বমোট ১২৯টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারের মধ্যে ৭৮টি পরীক্ষাগার ঢাকা শহরের মধ্যেই অবস্থিত এবং ৭৭টি বেসরকারি পরীক্ষাগার। ফলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ খুব বেশি সম্প্রসারিত হয়নি এবং এখনো দেশের ৩৬টি জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার না থাকায় প্রতিবেদন পেতে কোথাও কোথাও এখনো ৪ থেকে ৫ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে (মূল প্রতিবেদন, পৃ. ১০)।

বেড সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘টিআইবি বলেছে দেশে আইসিইউ বেডসংখ্যা বাড়েনি’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, কোভিড মোকাবিলায় একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হলেও এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বিশেষত জেলা পর্যায়ে কোভিড চিকিৎসেবায় সংকট তৈরি হয় (মূল প্রতিবেদন, পৃ. ১১)।

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা অনেকের কাছেই এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্য খাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম করেছে, তাদেরই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলা কার্যক্রম নিয়ে টিআইবির গত দুই পর্বের গবেষণাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্রয় ও সরবরাহে অনিয়ম-দুর্নীতি লক্ষ্য করা গেছে, যা একদিকে প্রয়োজনীয় সরবরাহের ঘাটতি তৈরি করছে, অপরদিকে এসব মানহীন উপকরণ নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ ছিল।

ভ্যাকসিন ক্রয় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টিআইবি ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে, যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে, ভারতের সঙ্গে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট টিকা দিতে পারেনি’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেক্সিমকো ফার্মার কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসারে ক্রয় পরিকল্পনা ও ক্রয় চুক্তি সম্পাদন নোটিশ সিপিটিইউর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

মন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তারা (টিআইবি) কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে, কিন্তু করোনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য তারা করেনি। কারণ, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রচারণা বা ভূমিকাই রাখেনি’।

এর জবাবে টিআইবি বলেছে, করোনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে (মূল প্রতিবেদন, পৃ. ৭-৯)।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ