বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


রোজার ক্রটি মার্জনা করে সাদকাতুল ফিতর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জামীল আহমাদ।।

একজন রোজাদার ব্যক্তি দিনের বেলায় পানাহার করেনি, স্ত্রী ব্যবহার করেনি, যার কারণে তার রোজা নষ্ট হয়নি, কিন্তু পরনিন্দা চর্চা করেছে, অশ্লীল কথাবার্তা বলেছে, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলেছে, এতে রোজার ত্রুটি হয়েছে।

এ থেকে রোজাকে পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ করার জন্যই সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারন করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন রোজাদার ব্যক্তির রোজা পালন করতে গিয়ে এমন কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, যার কারণে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় না, কিন্তু রোজার ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। রোজার এ ত্রুটি মার্জনার জন্যই সাদাকাতুল ফিতর।

পারস্পরিক সমবেদনার মাস রমজান। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদকা করতেন। সিয়াম সাধনা শেষে আসে ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং এ আনন্দে যেন মুসলিম জাতির প্রতিটি সদস্য শরিক হতে পারে এ জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে সাদকাতুল ফিতর।

দীর্ঘ এক মাস উপবাস থাকার পর আল্লাহ মেহেরবাণী করে ঈদের দিনে পানাহারের অনুমতি দিয়েছেন, তারই শুকরিয়াস্বরূপ সাদাকাতুল ফিতর।

হত দরিদ্র মানুষগুলো সারা বছরই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে থাকে। কমপক্ষে ঈদের দিনের একদিন যাতে তারা ঈদ আনন্দে সকলের সাথে শরিক হতে পারে সাদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সেই সুযোগটা করে দেওয়া একজন খাটি মুসলমানের সঠিক আমল।
হাদিস শরিফে রয়েছে- নবীজি (সা.) রোজাকে অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথাবার্তা ও কার্যকলাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য এবং মিসকিনদের কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য সাদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। (আবু দাউদ)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তোমরা গরিব দুঃখীদের এই ঈদের দিনে অন্যদের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বিরত রাখো। (বায়হাকি)

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ দেন লোকদের ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে।’ (বুখারি) তবে ফিতরা দেয়ার সময় শুরু হয় রমজানের শেষ দিনে সূর্য ডোবার সাথে সাথেই। সাহাবিদের মধ্যে অনেকেই ঈদের দুই এক দিন পূর্বে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (বুখারি) হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) তার উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের ওপর মাথা পিছু এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব সাকাতুল ফিতর হিসেবে ফরজ করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি-মুসলিম)

টাকা-পয়সা দ্বারা ফিতরা না দেয়ার চেয়ে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেয়া উত্তম। নবীজি (সা.) এর যুগে মুদ্রা হিসেবে দিনার এবং দিরহামের প্রচলন ছিল তা সত্ত্বেও নবীজি (সা.) মুদ্রা দ্বারা ফিতরা নির্ধারণ না করে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন। খাদ্যবস্তু দ্বারাই ফিতরা আদায় করা সুন্নত। আর এটাই অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মত।

রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিপূর্ণতার জন্যই আবশ্যক করা হয়েছে এটি। ইমাম ওয়াকি ইবনুল জাররাহ বলেন, রমজান মাসের জাকাতুল ফিতর নামাজের সিজদায়ে সাহুর সমতুল্য। অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে যেমন সিজদায়ে সাহু দিলে এটা পূর্ণ হয়ে যায় তেমনি রোজার মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সাদকাতুল ফিতর দিয়ে এর প্রতিকার হয়। তাছাড়া ধনী-গরিব উভয়ে যেন অন্তত ঈদের দিন উত্তম পোশাক ও উন্নতমানের খাবার খেতে পারে এ জন্যই ফিতরার ব্যবস্থা।

আল্লাহ জানেন তার দুর্বল বান্দা পূর্ণভাবে রোজার হক আদায় করতে পারবে না। তাই তার রোজাগুলো সঠিক হিসেবে গণ্য করার জন্য সম্পূরক ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। আবার এতে উপকার হচ্ছে সমাজের অসচ্ছল পরিবারগুলোর। ঈদের দিন সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তিটির ঘরও যেন আনন্দে ভেসে যায়, ধনী-গরিব সবাই মিলেমিশে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার এক ইনসাফি পরিবেশ গড়ে ওঠে এটিই ফিতরার মূল প্রেরণা।

জাকাতের জন্য সম্পদের বর্ষপূর্তি শর্ত হলেও ফিতরায় এ শর্ত নেই। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নিজের পক্ষ থেকে, নিজের প্রাপ্ত এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে এবং নিজের সেবক-সেবিকাদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। সন্তান বা অধীনস্থরা অমুসলিম হলেও তাদের ফিতরা আদায় করা আবশ্যক।

রাসূল (সা.) বারবার বলেছেন- ‘যার সক্ষমতা রয়েছে, অথচ সে ফিতরা আদায় করল না; সে যেন ঈদগাহে না আসে। গরিবের জন্য যার দরজা সংকুচিত, সে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের ক্ষতি করল।’ গম বা আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির- এ পাঁচটি জিনিস বা তার মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। সামর্থ্যানুসারে সবার উচিত উৎকৃষ্ট জিনিস সাদকা করা।

রাসূল (সা.)-এর সময়ে সামর্থ্যানুযায়ী সবাই উত্তম পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা সাদকায়ে ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দিয়ে অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা পনির বা এক ‘সা’ কিশমিশ দিয়ে। আর এক ‘সা’-এর ওজন ছিল নবী করিম (সা.)-এর ‘সা’ অনুযায়ী। [মুয়াত্তা মালেক]।

সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, দাতার কাছে যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। [বুখারি]।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সাদকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: উস্তাযুল হাদীস দারুল উলূম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসা,ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর