মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


বিদায়ের পথে সাধনার মাস রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জামীল আহমাদ।।

করোনা ভাইরাসের মহামারীর সময়েই অতিক্রম করছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস। এ দুর্যোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে এ সময় মহান স্রষ্টার কাছে বিশেষ প্রার্থনার সুযোগ এসেছে। রহমতের রমজান, মাহে রমজান দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে এসে আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই, কতটুকু মর্যাদায় রোজা পালন করতে পেরেছি!

বলা হয়ে থাকে, রোজার কোনো সওয়াব নেই, কারণ রোজাদারের পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজেই দিবেন। রোজাদারের জন্য আল্লাহ নিজে হয়ে যান মেজবান, আর মেজবান হন তার মেহমান। এ জন্যই এ মাসটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত বরকতের মাস।

রমজানের বিশেষ নির্দেশনা সংযম পালন ও দানের মাধ্যমে অশেষ পূণ্য লাভেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এই রমজানেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই ঘরে থাকার এ সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তৈরি হয়েছে কোরআন চর্চার অবারিত সুযোগ। নিশ্চয়ই এই কোরআন সর্বাধিক সরল পথের সন্ধান দেয়। তাই এই ভয়াবহ সময় দ্রুত অতিক্রম করার জন্য রমজানে আমরা মুখ, চোখ, কান, নাক, অন্তরের সর্বোচ্চ সংযম পালনের পাশাপাশি কোরআন চর্চা, অসহায়ের দান ও মুক্তির জন্য দোয়া করবো বেশি করে।

রোজা মানে শুধু উপবাস নয়, ইসলাম ধর্মের প্রতিটি কাজের মতোই রোজার উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ এবং তার রসূলের সন্তুষ্টি। সে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে দেহ-মনকে একান্তভাবে প্রস্তুত করতে হবে একাগ্রতা দিয়ে, নিবিষ্টতা দিয়ে।

রমজানুল মোবারক হচ্ছে আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক ঐশী উৎসব। দুনিয়ার সব অঞ্চলের সব শ্রেণীর সব মুসলমান সমভাবে এ উৎসবে শরিক হয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, পণ্ডিত-মূর্খ, শাসক-প্রজা ও ধনী-গরিব সবাই ইহ ও পরকালীন কল্যাণ অর্জনের এ প্রতিযোগিতায় সমান উৎসাহী হয়। মনে হয় যেন গোটা মুসলিম উম্মাহ শান্তি ও কল্যাণের স্নিগ্ধ জ্যোর্তিময়তার এক বিস্তৃত শামিয়ানার নিচে ঠাঁই নিয়েছে।

বছরের এগারোটি মাস মানুষ তার বৈষয়িক ব্যস্ততায় মনোনিবেশ করে, এ ব্যস্ততাই হয় তার সব মনোযোগের কেন্দ্র। ফলে তার অন্তরে আধ্যাত্মিক ক্রিয়া-কর্মে উদাসীনতার আবরণ পড়তে থাকে। রমজান মাসের ইবাদতে তা সরে যায়। এক মাসের সিয়াম সাধনার মূল কথা হল, পবিত্র এ মাসে মানুষ দৈহিক খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে এবং তার নফসের গতি মন্থর করে আধ্যাত্মিক পথচলার গতি বেগবান করবে। এভাবে দেহ ও আত্মা উভয়ের ভারসাম্য ঠিক হয়ে সে খাঁটি মুমিন বান্দা হয়ে উঠবে।

ঈমানি দুর্বলতার কারণে সিয়ামের ব্যাপারে যারা অলস, তারাও মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে রোজা রাখতে বাধ্য হয় কিংবা রোজা না রাখলেও প্রকাশ্য পানাহার চালিয়ে যেতে ইতস্তত ও লজ্জিত বোধ করে। ফলে অনুকূল ও স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে হৃদয়ের শক্ত জমিন হয়ে ওঠে কোমল ও উর্বর। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিপালকের ইবাদত ও আনুগত্য প্রকাশ এবং মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমবেদনায় কোমল হয়ে ওঠে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে রোজা রেখেছে, অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘সিয়ামরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়। কেউ যদি তাকে অশালীন কথা বলে কিংবা তার সঙ্গে অকারণে বাদানুবাদে লিপ্ত হতে চায় তবে সে যেন এ কথা বলে দেয়, আমি রোজাদার।’ তাই এ ইবাদতের মৌসুমে আমাদের দেহ-মনকে সিয়ামের মাধ্যমে পরিপাটি করে তুলতে হবে। ইবাদত ও পরোপকারের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে আত্মার বলিষ্ঠতা।

প্রিয় পাঠক! দেখতে দেখতে রমজান প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। রহমত, বরকত পেরিয়ে নাজাত বা ক্ষমার দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে রমজানে আমাদের প্রাপ্তি কী?

এমন প্রশ্নের হিসাব মেলাতে গেলে প্রথমে পবিত্র কুরআনের এ আয়াতটি দেখা যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা বাকারা-১৮৩)

বোঝা গেল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে রোজা ও রমজান দান করার উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন মুত্তাকি হতে পারি। মুত্তাকি বলা হয়- সকল অন্যায় কাজে আল্লাহর ভয় এতটা প্রবল হওয়া যে, এই ভয় তাকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।

এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারব। রমজান চলে যাচ্ছে আর আমরা কতটুকু মুত্তাকি হয়েছি? মানুষ ঠকানোর যে প্রতিযোগিতা, প্রতারণা, অহংকার, মিথ্যা, বাটপারি সর্বোপরি আমার, আমার বলে যে ধ্যান জ্ঞান তা থেকে কতটুকু পবিত্র হতে পেরেছি? দুনিয়ার মোহ থেকে আমরা কতটা বের হতে পেরেছি?

লেখক: মুহাদ্দিস

-এটি


সম্পর্কিত খবর