বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


উপকারের কৃতজ্ঞতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোহাম্মদ ওয়াসিম হোসাইন।

সমাজে চলতে একে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সহযোগিতা শুধু বিপদ ও সংকটের মুহূর্তে প্রয়োজন হয় এমন নয়, বরং সহযোগিতা প্রয়োজন হয় খুশি ও আনন্দের প্রতিটি উপলক্ষেও। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে টিকে থাকি। ইসলামে বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে যে করোনা মহামারি চলছে এ সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। ইসলাম চায় আপনার পাশের মানুষটি যেন কষ্টে না থাকে। তার মসিবতে আপনি তার পাশে দাঁড়াবেন।

রাসুলে পাক সা. এর বিভিন্ন হাদিস এবং পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট, অন্যের উপকার করলে আল্লাহ খুশি হন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব। মানুষের উপকার করা যায় বিভিন্নভাবে। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্য লাভ করবেন। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে-কোনও যোগ্যতা দেনই এজন্যে যে, সে তা মানব-সেবায় নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।

পরোপকার যে পন্থায়ই করা হোক, আল্লাহ তা‘আলার কাছে তা কবুল হওয়া এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজরূপে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল- ইখলাস থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে করা এবং পার্থিব কোনও উদ্দেশ্য না থাকা। পার্থিব উদ্দেশ্য বলতে- যার উপকার করা হল তার কাছ থেকে কোনও বদলা পাওয়া কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করা বা অন্য কোনও রকমের সুবিধাভোগ হতে পারে। মু’মিনের পরোপকার এইসকল উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তার প্রাণের কথা হবে- ﺍِﻧَّﻤَﺎ ﻧُﻄْﻌِﻤُﻜُﻢْ ﻟِﻮَﺟْﻪِ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻟَﺎ ﻧُﺮِﯾْﺪُ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺟَﺰَﺁﺀً ﻭَّ ﻟَﺎ ﺷُﻜُﻮْﺭًﺍ

অর্থ: ‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।’-সূরা দাহ্র, (৭৬) : ৯

সহযোগিতা ও ভালো কাজের একটি ছোট তালিকা বর্ণিত হয়েছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে। হজরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমার ভাইয়ের চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হাসাও তোমার জন্য একটি সদকা। সৎকাজের প্রতি আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বাধাপ্রদানও সদকা।

পথ হারানো কাউকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াটাও তোমার জন্য সদকা। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল- এমন কাউকে সহযোগিতা করাও তোমার জন্যে সদকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা আর হাড্ডি সরিয়ে দেওয়াও তোমার জন্য সদকা। ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য সদকা। -জামে তিরমিজি: ১৯৫৬

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা. এর আরেকটি হাদিসে আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাকির আ. পরোপকারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, তিনটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হয়। এগুলো হলো, একজন মুসলমান যখন অন্য মুসলমানকে খাবার দিয়ে তার ক্ষুধা মেটায় আল্লাহ তখন ভীষণ খুশি হন।

এছাড়া কেউ যখন অন্যের সমস্যার সমাধান করে এবং কারো ঋণ পরিশোধ করে দেয় তখনও আল্লাহ খুশি হন।তারাই সংযমী, যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তোমরা দান, সদকা, সাহায্য-সহযোগিতা প্রকাশ্যে করো তাও ভালো, আবার তোমরা দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, এতিম, গরিব, অসহায়দের অতি সঙ্গোপনে চুপে চুপে দান করো তা আরও উত্তম।’

অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে দানের কোনো বিকল্প নেই। আর যিনি পরোপকার করেন তার ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, আত্মত্যাগের মানসিকতা গড়ে উঠে।এ ধরণের সৎ কাজ গোটা মানব সমাজকেই প্রভাবিত করে এবং পরোপকারের সংস্কৃতি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে সবাই উপকৃত হয়। সব মানুষ একে অপরের সহযোগী হয়ে যায়। লোক দেখে বাছাই করে পরোপকার করার প্রয়োজন নেই। যখন যেখানে সুযোগ তৈরি হবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণেও তিনি অধীনস্থ ও দুর্বলদের কথা উল্লেখ করেছেন।

বলেছেন, ‘অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার সৌভাগ্যের উৎস আর তাদের সাথে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যের উৎস। ’ -আবু দাউদ। অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) পরোপকার সম্পর্কে বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির সামনে ভালো কাজ করা সুযোগ আসে সে যেন এটাকে গুরুত্ব দেয়। কারণ কেউ জানে না যে, কখন এই সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সব সময় কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করা। আমরা প্রতিনিয়ত কারও না কারও কাছ থেকে উপকৃত হয়ে থাকি। সুতরাং উপকারভোগীর দায়িত্ব হলো- সহযোগিতা ও উপকারের বিনিময়ে ওই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এমন যেন না হয় আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, উল্টো তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, মানুষ উপকার করার, পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ ও মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। কেউ উপহার দিলে সম্ভব হলে তাকেও উপহার দেওয়া। তবে তা যেন নিজেকে ঋণগ্রস্ত মনে করে এ ঋণ থেকে উদ্ধারের নিয়তে না হয়।

কেউ আমাদের উপকার করেছে, সেই উপকার সম্পর্কে যে আমরা সচেতন তা ওই ব্যক্তিকে অবহিত করার এবং তাতে আনন্দ প্রকাশ করার একটি উপায় হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমরা আমাদের ভাষায় ”ধন্যবাদ” বলে থাকি। কৃতজ্ঞতা সময়, স্থান বা ধর্মের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজ নিজ ভাষায় উপকারী লোককে ধন্যবাদ বলে। ইসলামে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি আল্লাহ্‌ তাআলার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি তাহলে তিনি আমাদের প্রতি তাঁর কল্যাণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন : “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইব্রাহিম ১৪:৭

রাসুল সা. বলেন, আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত আছে, মহানবি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “যে কেউ মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহ্‌রও কৃতজ্ঞ হয় না। (তিরমিযি : ১৯৫৫; আবুদাউদ: ৪৮১১) বরং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে যতটুকু সম্ভব আপনিও তাকে উপহার দিন। তা যদি হয় তাহলে কার উপহার ছোট, কারটা বড়- তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা থাকবে না। আবার সামর্থ্য না থাকলেও কিংবা কষ্ট করে হলেও উপহার আমাকে দিতেই হবে- এ চিন্তাও করা যাবে না।

আওয়ার ইসলামে লেখা পাঠাতে মেইল করুন- newsourislam24@gmail.com

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ