বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

রমজানের ফজিলত ও হাসিলের উপায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মো. আব্দুল মান্নান ।।

আরবি বার মাসের মধ্যে রমজান মাস অত্যাধিক ফজিলতপূর্ণ। মাসটি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আসে। এ মাসকে সামনে রেখে বিশ্ব মুসলিমের ঘরে ঘরে চলছে উৎসবের আমেজ। এটাকে নেকী কামাইয়ের সীজন বলা হয়। এ মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক বালেগ মুসলমান নর নারীর উপর ফরজ। এ বিষয়ে কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও রোজা বা সওম বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হলো। যাতে তোমরা মুত্তাকীন বা খোদাভীরু হতে পার। মুত্তাকীন বা খোদাভীরু হতে পারলে তার সফলতার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা সকল পথ খুলে দেন এমনকি তাকে এই পরিমাণ দান করেন যা সে কখনো কল্পনাও করতো না।

আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজানের শুরুর দিকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেন, হে নেকীর প্রত্যাশী, অগ্রসর হও, নেকীর কাজ কর। আর হে পাপের অভিলাষী, এখন থেকে থাম। অন্যায় পাপাচার থেকে বিরত থাক। নবী করীম (সা.) বলেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, কিন্তু রোজা এর উর্ধে। কেননা, বান্দাহ আমারই সন্তোষ্টি লাভের জন্য যৌন সম্ভোগ ও খানাপিনা হতে বিরত থেকে রোজা রাখে।

সুতরাং এর পুরস্কার আমিই দিব। এই হাদীসটির পরের অংশে বলা হয়েছে- রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ। প্রথম আনন্দ ইফতারের সময় আর দ্বিতীয়ত: আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। হাদীসটিতে বলা হয়েছে, সারাদিন রোজা রাখার পর ক্ষুধার যাতনায় রোজাদারের মুখের ভিতর থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়ে আসে উহা আল্লাহ তা’য়ালার নিকট মিসক বা কস্তুরীর সুগন্ধি হতেও প্রিয়। রোজা মন্দ থেকে আত্মারক্ষার জন্য ঢালস্বরূপ। রোজা রাখা অবস্থায় কেহ কাউকে গালিগালাজ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তোমাদের কেহ যেন রোজার দিনে ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি কেহ তাকে গালি দেয় তবে সে যেন বলে আমি রোজাদার। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

এ মাসের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। বায়হাকী শরীফের এক হাদীসে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি রমজানের প্রথম রোজা রাখে আল্লাহ তা’য়ালা বিগত রমজান থেকে এই দিন পর্যন্ত তার জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এমনকি প্রত্যেকদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা ওই রোজাদারের জন্য ইস্তিগফার করতে থাকেন। আফসোস!

তাদের জন্য, যারা এত ফজিলতের রোজা নিজেরা রাখেন না এমনকি তাদের সন্তানাদিকেও রাখতে উৎসাহিত করেন না। আমাদের সমাজে এমন কিছু অভিভাবক রয়েছেন যারা স্বাস্থ্য নষ্টের ভয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের রোজা রাখতে দেন না। অথচ ইবনে মাজাহ শরীফে হুজুর (সা.) বলেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত আছে। শরীরের যাকাত হলো রোজা। সুতরাং রোজা রাখলে স্বাস্থ্য কিছু কমবেই। তাই বলে রোজা থেকে বিরত থাকা বা রাখা যাবে না। তিনি আরো বলেন, রমজানের প্রথম রাত্রে আসমানের (রহমতের) দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এমনকি রমজানের শেষদিন পর্যন্ত তা খোলা থাকে। আর শয়তান যাতে শয়তানী না করতে পারে সেজন্য তাকে শিকলে আবদ্ধ করে রাখা হয়।

একটি হাদীসে আছে, রমজানের রাত্রে যে মুমিন তারাবীহের নামাজ পড়বে তার প্রত্যেক সিজদার পরিবর্তে তাকে দেড় হাজার সাওয়াব দান করা হবে এবং বেহেশতে তাকে লাল ইয়াকুত পাথরের একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ওই বাড়িখানার ষাট হাজার ফটক থাকবে এবং প্রত্যেক ফটকে লাল ইয়াকুতমন্ডিত স্বর্ণের একটি করে প্রাসাদ থাকবে। প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নফল আদায় করল সে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করার সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্যমাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, এটি ধৈর্য্যরে মাস। আর ধৈর্য্যরে বিনিময় একমাত্র জান্নাত। এটা বন্ধুত্ব, সাহায্য, সহানুভূতি ও সমবেদনার মাস। যে ব্যক্তি এই মাসে তার কাজের লোকের কষ্ট লাঘব করে দিবেন আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন ও দোজখ থেকে মুক্তি দান করবেন।

এ মাসে ঈমানদারের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে। এমনকি ওই রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে যাকে সে ইফতার করালো। এতে ইফতার করনেওয়ালা রোজাদারের সাওয়াবের কোন কমতি হবে না। যদিও সে সামান্য একটি খেজুর বা খুরমা দিয়ে অথবা এক গ্লাস পানি দিয়ে ইফতার করাক না কেন। বায়হাকী শরীফের হাদীসে আরো বলা হয়েছে, এই মাসের প্রথম ভাগ আল্লাহর রহমত, মধ্যম ভাগ আল্লাহর ক্ষমার সময় ও শেষ ভাগ হলো দোজখ থেকে মুক্তিলাভের সময়।

নবী করীম (সা.) বলেন, যে এই মাসকে পেল অথচ তার গুনাহ ক্ষমা করাতে পারলো না, সে বড়ই হতভাগা। নেশাখোর, মদখোর, সুদখোর ও মা-বাবার অবাধ্য সন্তানসহ এ ধরনের পাপীদের আল্লাহ ক্ষমা করেন না। এমনকি যে ব্যক্তির সামনে নবীজীর নাম উচ্চারণ করা হলো অথচ সে তাঁর উপর দুরূদ পাঠ করলো না ফেরেশতা তার ধ্বংসের জন্য দোয়া করেছেন আর নবীজী আমীন বলেছেন। কাজেই যারা এ ধরনের পাপের সাথে জড়িত তারা যেন জরুরিভিত্তিতে নীরব নিরিবিলি জায়গায় বসে কান্নাকাটি করে তাওবা করে নেন। রোজা রাখার আগে শেষ রাতে সাহরী খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তোমরা সাহরী খাও।

কেননা, এতে তোমাদের জন্য বরকত রয়েছে। এই পবিত্র মাসে এমন একটি রাত্র রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আর সেই রাত্রটিকে বলা হয় লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। বিশেষ করে উহাকে রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ করতে বলা হয়েছে। এজন্যেই রোজার শেষ দশকে নবী করীম (সা.) উম্মতকে মসজিদে অবস্থানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ই’তিকাফ বা অবস্থান করল সে যেন দুইটি হজ্ব ও ওমরাহ আদায় করল। মাসনাদে আহমাদ শরীফে আছে, যদি কোন ব্যক্তি পূণ্যলাভের আশায় বেজোড় ওইসব রাত্রিতে ইবাদত করে তবে আল্লাহ তা’য়ালা তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। রমজানের এক অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া বা পুড়িয়ে দেওয়া।

বলা হয়, যে ব্যক্তি পবিত্র রমজানের রোজাগুলো যথাযথভাবে রাখবে আল্লাহ তা’য়ালা তার গুনাহগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবেন। শুধু তাই নয়, যে ব্যক্তি মাত্র এই একটি মাস রোজার হক আদায় করে রোজাগুলো রাখবে আল্লাহ তা’য়ালা তর সমস্ত গুনাহ মাফ করে তাকে অলী বানিয়ে নিবেন। দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পর যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরল সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া নিষ্পাপ শিশুর মত গুনাহমুক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরল। এসব সাওয়াব পেতে হলে গুনাহ ও অপকর্ম হতে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। রোজাকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে। যেসব কাজ করলে রোজা মাকরূহ বা নষ্ট হয়ে যায়, সেসব কাজকর্ম করা যাবে না। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অন্যায় আচরণ ছাড়ল না, তার রোজা রাখায় আল্লাহর কোন সন্তোষ্টি নেই।

রোজাকে মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে যেমনিভাবে পেটকে খানাপিনা থেকে ও দেহকে যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রাখতে হয় তেমনিভাবে চক্ষুকে মন্দ জিনিস দেখা থেকে, কানকে মন্দ কথা শোনা থেকে, জবানকে মন্দ কথা বলা থেকে, মাথাকে মন্দ চিন্তা করা থেকে এবং হাত-পাসহ সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও মন্দ পথে পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখতে হবে। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির আযকার, তাসবীহ তাহলীল ও জনকল্যাণমূলক কাজে সময় ব্যয় করতে হবে। তবেই পরিপূর্ণ রোজার সাওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করে রোজাগুলো রাখার তাওফীক দান করুন।

লেখক: ইমাম ও খতীব, দিউ বায়তুস সালাম জামে মসজিদ ও প্রিন্সিপাল, দারুল ইহসান কাসিমিয়া (এক্সিলেন্ট) মাদরাসা, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।

আওয়ার ইসলামে আপনার মূল্যবান লেখাটি পাঠাতে মেইল করুন-newsourislam24@gmail.com

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ