শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


জগলুল হায়দারের তিনটি ছড়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সব মনে রাখা হইব
জগলুল হায়দার

তুমি রাত লিখো আমরা চাঁদ লিখুম
তুমি জেলে ভরো আমরা তার দেয়াল ফাঁইড়াও লিখুম
তুমি মিথ্যে এফআইআর লিখো আমরাও জুলুমের প্রতিটা ঘটনা লিখুম
তুমি আমগো খুন করো আমরা অশরীরী আত্মা হয়েও লিখুম
আর তুমি আদালতের কুরসিতে বইসা প্রহসনের চুটকি লিখো
কিন্তু আমরা পথে ও দেয়ালে ইনসাফের কথা লিখুম
আর আমরা সেসব এতোটাই গর্জনে বলুম যে কালাও তা শুনতে পাইবো।
আর এতোটাই সাফ লিখুম যে অন্ধও তা পড়তে পারবো।
তুমি কালাকানুন লিখো তো আমরাও লিখুম লাল গোলাপ।
তুমি জমিনে যতোই জুলুম লিখবা আরশে বিপ্লবের ফয়সালা ততোই দ্রুত লেখা হইব।
সব মনে রাখা হইব, সবকিছু মনে রাখা হইব
আর তুমার বন্দুক ও বুলেটে
যে ভাইয়েরা আমার শহীদ হইছে
তাদের স্মরণে দিলের ভিতর বরবাদির ক্ষোভ ভইরা রাখুম।
সব মনে রাখা হইব, সবকিছু মনে রাখা হইব
আর তুমি চেতনার নামে মিথ্যা লেইখা যাইবা
এইটা আমরা মালুম আছি।
কিন্তু আমগো খুনে সত্য অবশ্যই লেখা হইব।
সব মনে রাখা হইব, সবকিছু মনে রাখা হইব।
আর ভরদুপুরে পাবলিকের টেলিফোন ইন্টারনেট মোবাইল বন কইরা
পুরা শহরকে শীত রাত্রির কুয়াশা-চাদরে নজরবন্দী কইরা
হাতুড়ি হাতে আতকা আমার ঘরে ঢুইকা
আমার ছোট্ট জীবনে কিয়ামত নামাইয়া
আমার প্রিয়তম সন্তানকে সড়কের মাঝে খুন কইরা
আর তাতে সামান্য বিচলিত না হইয়া তুমি তুমার সমাবেশে হাসছো।
সব মনে রাখা হইব, সবকিছু মনে রাখা হইব।
আর দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মিঠা মিঠা কথায়
সবকিছু ঠিক আছে বইলা ক্রমাগত তোতলানি
আর রাত হইতেই হক পিয়াসী জনতার উপ্রে লাঠি চার্জ
গুলি চালনা, আমগো উপ্রে হামলা কইরা আমগোই হামলাকারি বলা!
সব মনে রাখা হইব, সবকিছু মনে রাখা হইব।
আর আমি আমার হাড্ডি মাংশে লেইখা রাখুম এইসব জুলুমের বিবরণ
তুমি আমার নাগরিকতার কাগজ চাও
আমি আমার অস্তিত্তের প্রমাণ অবশ্যই দিমু
এই সংগ্রাম চলবো তুমার পতনের আখেরি ওয়াক্ত পর্যন্ত
আর ইতিহাস তা মনে রাখবো চিরকাল।
এইটাও মনে রাখা হইব কিভাবে তুমি দেশ আর জাতিকে বিভক্ত করছো
আবার এও মনে রাখা হইব কিভাবে আমরা দেশকে একতাবদ্ধ করতে চাইছি;
এও মনে রাখা হইব।
আর ইতিহাস যখনই কাপুরুষতা নিয়া কথা বলবো তখন উদাহরণ হিসাবে তুমার এই কীর্তিগুলার কথা বলবো।
আর যখনই বীরত্বগাথা নিয়া কথা বলবো তখন উদাহরণ হিসাবে আমগো নামই মনে করবো।
কিছু লোক তো ছিল যাদের অদম্য স্বপ্ন লোহার হাতুড়িও ভাঙতে পারে নাই।
কিছু লোক তো ছিল শত ভীতিতেও যারা নীতিচ্যুত হয় নাই।
কিছু লোক তো ছিল শত প্রলোভনেও যারা বিক্রি হয় নাই যেমুন তুমরা হও।
কিছু লোক তো ছিল যারা অসম্ভব পরিস্থিতিতেও ঈমানের লগে মেরুদণ্ড সোজা কইরা ছিল;
যারা নুহুর প্লাবনের পরও বাঁইচা থাকে ।
কিছু লোক তো ছিল যারা নিজের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও বাঁইচা থাকে।
চোখ ভুইলা যাইব পলক ফেলতে
পৃথিবী ভুইলা যাইব তার আহ্নিক আবর্তন
আমগো অধিকার হরণের করুণ কাহিনী আর
আমগো ফাটা গলার আওয়াজকে মনে রাখা হইব।

শাপলা চত্বর
জগলুল হায়দার

শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
নয় তো মোটেও পালানো
শাপলা চত্বর বুকে বুকে
নুতুন আলো জ্বালানো।
শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
নয় মোটে লেজ গুটানো
শাপলা চত্বর নবীর শানে
রক্ত গোলাপ ফুটানো।
শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
নয় সারেন্ডার কখনো
শাপলা চত্বর জাগর আজো
যেমন ছিল তখনো।
শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
শহীদ স্মৃতি কুড়ানো
শাপলা চত্বর বিপ্লবী দিন
সবুজ নিশান উড়ানো ।
শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
পিছিয়ে মেলা আগানো
শাপলা চত্বর ঈমানে ফের
বাংলা গোটা জাগানো।
শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর
রক্তে আজাদ আঁকানো
শাপলা চত্বর ইতিহাসের
নুতুন দিশায় তাকানো।

স্বাধীনতা পূর্ণ করো
জগলুল হায়দার

গোলামী নয় স্রেফ আজাদি
এই আমাদের লক্ষ্য ছিলো
সেই স্বপ্নেই মানুষ সেদিন
স্বাধীনতার পক্ষ ছিলো।
কিন্তু দেশের স্বাধীনতা
ওদের হাতে জব্দ হলো
সেই নিয়া এই এক দশকে
একটা কি টু শব্দ হলো?
হয়নি তেমন তাই তো এমন
দাসত্ব দাগ পষ্ট করে-
স্বাধীনতার নামেই শালা
স্বাধীনতা নষ্ট করে।
আজকে আবার ডাক দিয়ে যাই
দিল্লী দাপট চু্র্ণ করো
গ্রহণলাগা স্বাধীনতা
লড়েই এবার পুর্ণ করো|


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ