শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লাহর নৈকট্যলাভে রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মেহেদী হাসান সাকিফ ।।

দুনিয়াতে আল্লাহ তালা সবকিছুর একটা মৌসুম দিয়েছেন। মৌসুমে সেই জিনিসটা পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায়।আল্লাহ ইবাদত বন্দেগির ক্ষেত্রেও মুমিনদের একটা মৌসুম দিয়েছেন আর সেই সময়ই হচ্ছ রমজান মাস।

নিঃসন্দেহে একজন মুমিন বান্দার অন্তর সদা-সর্বদা উদগ্রীব থাকে মহান আল্লাহ নৈকট্য লাভের জন্য। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার,পরকালীন পাথেয় অর্জনের এক উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে রমজান মাস।

এই সময়ে বান্দা তার যাবতীয় জাগতিক চাওয়া-পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে,অতীতের সকল পাপাচার পরিত্যাগ করে ইমানী জিন্দেগীর উত্তাপ গ্রহণ করবে,তাকওয়া অনুশীলন এর মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত-ইতাঅাতের শক্তি সঞ্চয় করবে,চিন্তাচেতনায় ও কর্মসাধনায়

আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে।মহান আল্লাহ বান্দাদের তার নৈকট্য লাভের জন্য বহু নেক আমলের সুযোগ রেখেছেন এই মহামান্বিত এই মাসে নিচে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

সিয়াম সাধনার মাস: মুসলিম উম্মাহর নিকট রমজান মাসের আগমন ঘটে সিয়াম পালনের আগমনী বার্তা নিয়ে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন- হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার (সুরা বাকারা: ১৮৩)

শরীয়তের পরিভাষায় ‘সওম’ বা ‘সিয়াম’-এর অর্থ হল, ফজর উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সঙ্গম ইত্যাদি যাবতীয় রোযা নষ্টকারী কর্ম হতে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা।

অবশ্য এই সংজ্ঞায় অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকাও শামিল রয়েছে। কারণ, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হল (আসল) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মূর্খতা প্রদর্শন করে, তাহলে তুমি (তার প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বল যে, ‘আমি রোযা রেখেছি, আমি রোযা রেখেছি ] (হাকেম, মুস্তাদ্রাক, বাইহাকী, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ, ইবনে হিববান, সহীহ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৫৩৭৬নং)

হাদিসেও নবী করীম সা. সিয়ামপালনকারীর অগণিত ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

১৯৫৮-আবূ হুরায়রাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ‘ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)[সহীহ : বুখারী ৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, আবূ দাঊদ ১৩৭২, নাসায়ী ২২০৫, ইবনু মাজাহ ১৬৪১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৭৫, আহমাদ ৭১৭০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫০৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৩২।

কুরআন নাযিলের মাস: পবিত্র এই রমজান মাসে আল্লাহতালা হেদায়াতের পথ ও নির্দেশিকা হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। এই রমজান মাস কিন্তু আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের জীবনেও ছিলো। তখন রমজান মাস এতটা মর্যাদাবান ও মহামান্নিত ছিলো না। রমজান মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ায় এই মাসের মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিয়ামত যত মূল্যবান, তার হক আদায় করার দায়িত্বও তত ভারি। আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে রহমত ও বরকতের জিনিষ। এই কিতাব মানুষের গোপন, প্রকাশ্য, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সকল ব্যধির ব্যবস্থাপত্র। গভীর অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়া লোকের আলোর মশাল। তাই এই কুরআন নাজিলের মাস মাহে রমজানে একটু প্রধান হক হচ্ছে- কুরআন পড়া, কুরআন বোঝা, কুরআন অণুযায়ী আমল করা ও অন্যকে এর দাওয়াত দেওয়া। কুরআন তিলাওয়াতকারীর ফযিলত বর্ণনা করে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুররআন শিখে ও অপরকে তা শেখায়" (বুখারি: ৫০২৭)।

ক্ষমা লাভের অফুরন্ত সুযোগ: রহমতের এই মাসে আল্লাহ তায়ালা তার অগণিত বান্দাদগণকে ক্ষমা করে থাকেন। বছরে আর এমন কোনো মাস নেই, যে মাসে মহান আল্লাহপাক তার এতো বান্দাদেগণকে ক্ষমা করে থাকেন। নবি (সাঃ) বলেন, (রমাদানে) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে"। (আহমাদ: ৭৪৫০)

কিয়ামুল লাইল বা তারাবীর সালাত: রমজান মাসের এই সালাতগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ নেকী অর্জন করতে পারি।অন্যদিকে যা আমাদের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের ক্ষেত্রের বড় ধরনের ভুমিকা রাখবে।

এই নামাজের মর্যাদা ঘোষণা করে নবীজি বলেছেন- যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাতজেগে (তারাবীর সালাত) আদায় করবে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।(বুখারী: ৩৭, মুসলিম :৭৩৮)

লাইলাতুলকদর: এই মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদরের মহামান্বিত রজনী।এই এক রাত্রির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে ও বেশী। আল্লাহ পবিত্র কুরঅানে বলেছেন- লাইলাতুল-কদর’ হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ (সুরা কদর ৩)

মুফাসসিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। [মুয়াসসার)

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বুখারী: ১০৯১, মুসলিম: ৭৬০, আবুদাউদ:

মহান আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত যে,আমরা এই রমজান অবধি আল্লাহ আমাদের হায়াত দিয়েছেন।আমাদের কত চেনামুখ যারা গত রমজানেও জীবিত ছিল। আজ তারা কবর দেশের বাসিন্দা। আমাদের কারো জীবনেও হতে পারে এই রমজান আমাদের জীবনের শেষ রমজান। তাই আমাদের সকলেরই উচিত, অবহেলায় সময়গুলো না কাটিয়ে বেশী বেশী আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্যায় করা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ