শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


আত্মশুদ্ধির মাস রমজান সমাগত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মনজুর সা’দ।। দেখতে দেখতে আবারও এসে গেলো আমাদের সেই কাঙ্খিত মাস মাহে রমজান। পবিত্র মাস। সংযমের মাস। সওয়াবের মাস। দোআ কবুলের মাস। মহিমান্বিত মাস। বিশ্বের সকল মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির মাস। নিঃসন্দেহে এই মাসটি অন্য এগারো মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। আরবি মাসসমূহের নবম মাস হচ্ছে, পবিত্র মাহে রমজান মাস।

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যুগে যুগে নবি রাসুলগণ রোজার বিধান পালন করেছেন।রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি শব্দ হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় সওম হলো,আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা।

রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো। এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য, গুনাহ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী হওয়া, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।

রোজার প্রতি উৎসাহিত করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহকারে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’সহীহ বুখারি।

রোজা রাখা আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন কবিরা গোনাহ। বিনা কারণে রোজা না রাখলে ওই রোজার কাজা ও কাফফার উভয়টি আদায় করার বিধান দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা কারণে রোজা ভঙ্গকারীর জন্য শাস্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন।হাদিসে এসেছে হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে (পা উপরে আর মাথা নিচের দিকে) ঝুলছে। তাদের গাল কাঁটা। আর তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? (প্রশ্নের উত্তরে) বলা হলো- এরা সেসব ব্যক্তি যারা বিনা কারণে রমজান মাসের রোজা নষ্ট করেছে। (ইবনে খুযায়মাহ)

রোজাদারদের জন্য দু'টি খুশীর সংবাদ

হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলে পাক সা. ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি তার ইফতারের সময়, অপরটি হলো আল্লাহ্ তাআলার দিদার বা সাক্ষাতের সময়। হাদিসে এও উল্লেখ রয়েছে, ইফতারের সময় মহান আল্লাহ তায়ালা দোআ কবুল করেন।

রোজার পাশাপাশি তারাবির প্রতি উৎসাহিত করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে রমজানের রাতে ইমানের সঙ্গে নেকির আশায় দন্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’সহীহ মুসলিম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের এক রাতে মসজিদে তারাবি পড়লেন। সাহাবিরাও তার সঙ্গে জামাতে শামিল হলেন। দ্বিতীয় রাতে মুকতাদির সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবির জন্য মসজিদে এলেন না। ফজরের পর সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি, কিন্তু এ নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি।মুসলিম।

নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে কেউ মারা গেলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের মহানিয়ামত দান করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই আল্লাহর জিম্মায় থাকে। এর এক প্রকার হলো মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। মসজিদের গমনরত অবস্থায় সে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। আর মসজিদ থেকে ফিরে এলে সে পুণ্য ও প্রতিদান পাবে।’ আবু দাউদ।

মসজিদে গমনকারী আল্লাহর মেহমান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলমান ভালোভাবে অজু করে মসজিদে গমন করলেই সে আল্লাহর মেহমান। আর মেহমানকে সম্মান করা মেজবানের দায়িত্ব।’ মুজামুল কাবির।

ইবাদতের জন্য মসজিদে যতবার আসা-যাওয়া করবে, আল্লাহ তার জন্য তত জান্নাতি মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে গমনাগমন করবে, প্রতিবার গমনাগমনের বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন।’ মুসলিম।

যেহেতু করোনা পরিস্থিতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।এবং একজন মুমিন সদা-সর্বদা আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করবে, কিন্তু অবশ্যই সতর্ক থাকবে।

রাব্বে কারিম সারা বিশ্বের সকল মুসলমানদেরকে (কোভিড-১৯) করোনা মহামারিতে সুন্দর ও সুস্থ্য ভাবে রমজান মাসের রোজা রাখা ও তারাবী সালাত আদায় করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ,ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ