শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


দান-সদকার মাস ‘মাহে রামাদান’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কেফায়াতুল্লাহ ফাহিম: আর কয়েকদিন পর শুরু হবে সিয়াম-সাধনার মাস রমজান। রমজানের অন্যতম আমল হল দান- সাদকা। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদাচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

দানের মাস মাহে রামাদান

রমজানে দান অন্য সময়ে দান করার চেয়ে বেশি উত্তম ও সাওয়াবের কাজ। রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেন। রমজানকে দানের মাস হিসেবেও হাদিসে বলা হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসসমূহের তুলনায় অত্যাধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। আর এই দান-সাদকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, বাতাসের গতিবেগের চেয়েও তা দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো! (বুখারী শরীফ: কিতাবুস সাওম)।

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন। (ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ইমান) হাদিসদ্বয়ে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় যে, রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান-সাদকা করা সুন্নত। আর এতে অবশ্যই অনন্য ফজিলত রয়েছে।

হাদিসের দর্পণে এসেছে, রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। এই সূত্র অনুসারে, রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ‘ফরজ’ হিসেবে আল্লাহ তায়ালার নিকট গণ্য হবে। দান-সাদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র রমজানেই এই ‘সুযোগ’ সীমাবদ্ধ।

দান-সদকার কিছু আদব রয়েছে

ক. আল্লাহর জন্য ইখলাস ঐকান্তিকতা। তাই সাদকা দেয়া হবে একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশে, যাতে থাকবে না কোনো রিয়া ও সুনাম অর্জনের ইচ্ছা।লোক দেখানো আমল আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

খ. সাদকা গ্রহীতাকে খোঁটা ও কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, ইরশাদ হয়েছে: {হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল করো না।} [সূরা আল বাকারা:২৬৪]

সাদকা কাদের দিব?

যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায় তাদেরকে সাদকা দেওয়া যাবে। কুরআনে ৮ ধরনের ব্যক্তিকে যাকাত ও সাদকা দিতে বলা হয়েছে__

১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।
২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।
৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মহব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান। এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫} ৫- দাস মুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাতিল।

৬- ঋণগ্রস্তের জন্য। ৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। ৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

ধরুন এখন কিয়ামত সংগঠিত হলো। আর আমরা সবাই সৃষ্টির স্রষ্টার সামনে মাথা নত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে দাড়ি পাল্লা নিয়ে মাপা হচ্ছে।কার কতটুকু আমল রয়েছে। তো এক লোক আসলো যার কোন নেক কর্ম নেই। তার হাত-পা কাঁপছে। কি হবে তার পরিণতি? সে তো সঙ্গে কিছু নিয়ে আসেনি কেবল গুনাহ ছাড়া। এহেন পরিস্থিতিতে যখন পাল্লায় তার গুনাহ মাপা হবে তখন গুনাহের পাল্লা গুনাহের ভারে নিচের দিকে নামতে থাকবে। ঠিক সেই সময়ে এই সাদকাই তাকে বাঁচাবে। কারণ একমাত্র সাদকা (সাদকায়ে জারিয়া)মৃত্যুর পর চলতে থাকে।এই ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল চালু থাকে।

ক. সাদকায়ে জারিয়া। খ. ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয়। গ. সুসন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম শরীফ)

অপর হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত কাআব ইবনে উজরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকা পাপ নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।’(তিরমিজি)

পরিশেষে এইটুকুই অনুরোধ থাকবে যে,এই করোনা মহামারীতে যেভাবে আমাদের কাছের মানুষগুলো বিদায় নিচ্ছে তাদের সাথে কি টাকা, পয়সা কিছু যাবে? কখনোই না।একমাত্র তাদের আমল যাবে।আর সাদকা এমন একটি আমল যা কিয়ামত পর্যন্ত থাকে। তাই আসুন আমরা বেশি বেশি দান-সাদকা করি আর মৃত্যুর জন্য তৈরি হই।

লেখক: তরুণ লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর