শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


নাইটিঙ্গেল মোড়ের মাঝখানে আমি তাকে আবিষ্কার করেছি বহুবার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাসউদুল কাদির।।

সেদিন হযরত নূরউদ্দীন আহমদ গহরপুরী রহ. স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে হাজিরা দিতে নাইটিঙ্গেল মোড় পার হবার আগেই নজরে পড়লো রিকশা খুঁজছেন মুফতী ওয়াক্কাস রহ.। কাকরাইল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের মাঝখানে আমি তাকে আবিষ্কার করেছি বহুবার। ছোট্টসময়ে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.-এর পল্টনের মদিনা অফিসে অনেকবার সাক্ষাৎ হয়েছে তার সঙ্গে। কথা শুনেছি। দেশের একজন সাবেক এমপি এবং সাবেক ধর্মমন্ত্রী হয়েও বরাবরই তাকে রিকশা খুঁজে খুঁজেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এটা খুব আগের গল্প না।

আমার বাসার খুব কাছের একটি মাদরাসায় মুফতী ওয়াক্কাস রহ. প্রায়ই আসতেন। শবেবরাতে তার জন্য খুব দুআ হলো। আমি পথে ছিলাম। মুফতী ওয়াক্কাস রহ.-এর জন্য এমন মায়াবী একটি দুআয় আমার মনে হয়েছিল, তাহলে কি আমরা এ মুরুব্বীকেও হারাচ্ছি? এরপর দুদিনও গেল না।

আমরা কেউই পৃথিবীতে থাকবো না। পৃথিবী থাকবার জায়গা নয়। মুসাফিরি জীবনেও নেতৃত্বসংকটের চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় ইঁচড়েপাকা সমাজের রৌদ্ররূপ দেখে মুফতী ওয়াক্কাস রহ.কে বার বার হয়তো মনে পড়বে।

ভেঙে খান খান তাবলীগ ইস্যুর গল্প আমি কখনো লিখিনি। একত্র তাবলীগের বিশ্বইজতেমায় অনেকবার গিয়েছি। একবার আলেমদের জন্য বিশেষায়িত ট্যান্ডে মুফতী ওয়াক্কাস রহ.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। এটা প্রায় একযুগ আগের কথা। স্বাধীনতা ও ইসলাম নিয়ে একজনের লেখার উপর তিনি খুব ক্ষিপ্ত হলেন। অবাক হয়ে আমি তাকিয়ে থাকলাম। এই আলেমও তাহলে এতদূর পড়াশোনা রাখেন। তারুণ্যকে পড়েন। তিনি কী বলছেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিলো না।

তরুণদের নিয়ে তাদের ভাবনা ছিলো। তারা কতটুকু করে যেতে পেরেছেন, কতটুকু সাফল্য পেয়েছেন তা হিসাব কষলেই বেরিয়ে যাবে। সবসময় আমাদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। বাস্তবতার সঙ্গে মিলে না। তবে মুরুব্বীগণ সবসময় তরুণদের আগ্রহকে মূল্যায়ন করেন। তরুণরা কী ভাবছে তা-ও জানবার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের উজ্জ্বল সাক্ষী ছিলেন মুফতী ওয়াক্কাস রহ.। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর সঙ্গে মরহুম চরমোনাই পীর মাওলানা ফজলুল করীম রহ.-এর একটা ছবি বার বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে আসছিলো ইদানীং।

এ যে একত্র থাকার গল্প আমরা লিখি, পড়ি, মানুষকে উপদেশ দিই-এর চর্চা নিজেদের মধ্যে কতটুকু বাস্তবায়নের চেষ্টা করি? বাবরি মসজিদ ইস্যুতে তুমুল আন্দোলনের পরও নরসিমা রাওকে ঠেকাতে ঘোষণা করা বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ.।

দ্বিখণ্ডিত অথবা খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত জমিয়তের গল্প এখন বলবার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনে মুফতী ওয়াক্কাস রহ.-এর মতো ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ খুব কম দেখেছি। সবিশেষ মৃত্যুঅবধি তিনি লড়ে গেছেন।

মুফতী ওয়াক্কাস রহ.-এর চেহারায়ও উম্মতের জন্য দরদিয়া একটা মনোভাব ছিলো। নতুনভাবে তার জীবনযুদ্ধের গল্পগুলো আমাদের সামনে আসার দরকার। আমি মনে করি, মুফতী ওয়াক্কাস রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাই আগামী প্রজন্মের জন্য বড় পাথেয় হবে। কারণ, এ আলেম-রাহবার বিশেষত স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। তাকে হারিয়ে উম্মতের যে ক্ষতি হলো-তা পূরণ হবে না। তবে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বের করে আনতে পারলে বড় একটা এ্যাসেড হতে পারে।

আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সবরে জামিল ইখতিয়ার করার তাওফিক দিন। আমীন।

লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক আমার বার্তা ও প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ (শিক্ষা, সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলন)

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ