বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


সোনার বাংলা গঠনে মাদরাসা শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হারুন আনসারী তালুকদার
লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক

এই প্রশ্নটি শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের মাঝে উত্থাপিত হওয়া উচিত যে, এই দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো কেনো মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শুধু নেতিবাচক খবরই পরিবেশন করে? এই সেক্টরে কি কোন ভাল দিক নেই? কিংবা এখানে তুখোড় মেধাবীদের দেখা মিলে না যারা শিক্ষাকে প্রকৃতই জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করে সমাজকে আলোকিত করছে?

দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় একই সাথে বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, এখানে সিংহভাগ মানুষ আসলে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা অবদান সম্মন্ধে সঠিক ধারণা রাখেন না। তারা এই শিক্ষার স্পিড সম্মন্ধেও ওয়াকিবহাল নন। উল্টো, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে তাদেরকে অজ্ঞ, আনাড়ি ও অচল ভেবে তাচ্ছিল্য করেন! মনে করেন যে, এরা শুধু দয়াদাক্ষিণ্যের পাত্র!

এটা যে এইসব সো কল্ড শিক্ষিতদের কতো বড় মুর্খতা, অভব্যতা, জ্ঞানহীনতা এটি নিয়ে ভাববার ফুরসতও এদের নেই। কারণ এরা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির।

স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রাপথের শুরুতে সেই ৫০ বছর আগে থেকেই এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজো তা চলছে পুরোদমে। ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়া সুযোগ পেলেই মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে শুধু নেতিবাচক খবরই প্রচার করে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই খবরগুলোকে ক্যারিক্যাচার করে রংচং মিশিয়ে পুরো মাদ্রাসা ব্যবস্থাকেই বিতর্কিত করতে তাদের এই ঘৃণ্য প্রয়াস। মাদ্রাসা নিয়ে কখনো ইতিবাচক খবর পরিবেশিত হয়না এসব মিডিয়ায়। অথচ।করোনাকালে যখন সন্তান তাঁর পিতার লাশ ফেলে যাচ্ছিলো, তখন এইসব মাদ্রাসা পড়ুয়ারাই স্বেচ্ছায় তাঁদের লাশ দাফনে এগিয়ে এসেছিল জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে।

এদেশের মূলধারার মিডিয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট নজরে পড়ে না? বরং থেমে থেমে তিলকে তাল বানানো হয়েছে তাদের হাতে। মাদ্রাসাকে  শিশু নির্যাতনের পাদপীঠ হিসেবে জাহির করতে অতিরঞ্জিতভাবে তারা উদ্দেশ্যমুলক একের পর এক খবর পরিবেশন করেই যাচ্ছে। তারপরেও কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের মনে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্মন্ধে নেতিবাচক প্রচারণাকে স্থায়ী করতে পারেনি। এই কারণটিও ভেবে দেখার মতো জ্ঞান ওদের নেই?

ওই যে শুরুতে বলেছি, মাদ্রাসা শিক্ষার স্পিড সম্মন্ধেই ওরা বেখবর। হেদায়েতের নূর কি জিনিস, রাসুলের সিলসিলা কি জিনিস, মাদ্রাসার শিক্ষাই বা কি জিনিস; এসব ওরা ধারণাও করতে পারেনা। তাই মাদ্রাসা নিয়ে সবসময় জুজুর ভয় কাজ করে। সেজন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা কল্পকাহিনী ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। মিথ্যাচারকেই ওরা উপজীব্য করে নিয়েছে। কতো বড় জালেম হলে মানুষ এভাবে দুশমনি করতে পারে!

আফসোস! ওদের লেজুর হিসেবে জুটে যাওয়া কিছু বদনসিব! যারা মুসলমানের ঘরে জন্মেও হেতায়েত বঞ্চিত! এইসব ইসলামবিদ্বেষীদের অব্যাহত প্রপাগাণ্ডার অন্তঃরহস্য না বুঝে তারাও না বুঝে শয়তানের প্ররোচনার ফাঁদে পা দেয়। এরা হয়তো মসজিদেও যায়, রোজাও রাখে, কেউ হয়তো হজ্বও করেছেন; কিন্তু ইসলামবিরোধীদের ষড়যন্ত্র এরা ধরতে পারেন না কিংবা ধরার মতো বোধবুদ্ধি নেই। কিংবা দুনিয়াবি সাময়িক প্রলোভনে এরা শয়তানের সুরে সুর মেলায়।

এইসব মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দ্বীন সম্মন্ধে, ইহকাল পরকালের জীবন সম্মন্ধে, খোদার ইচ্ছা ও মদদ সম্মন্ধে, মানুষের আসল উদ্দেশ্য সম্মন্ধে পুরোই বেখবর। এদের শত্রুতা শুধুই ইসলামের সাথে। এদের ভাষায়, সাধারণ শিক্ষা বাদ দিয়ে শুধু ইসলামী শিক্ষা অর্জনের কারণেই মাদ্রাসা শিক্ষা পিছিয়ে আছে। মাদ্রাসা ভবিষ্যতের ইসলামি স্কলার বানানোর পাদপীঠ। হওয়াটাই এদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ।

বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশে যেখানে স্বাক্ষরতার হারই নিম্নমুখী সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষা কোটি কোটি শিশুকে অক্ষর জ্ঞানদানের সাথে নৈতিক শিক্ষাও প্রদান করে আসছে। মানুষের মতো মানুষ গড়ে তুলছে। সোনার বাংলার সোনার মানুষ গঠনে এসব মাদ্রাসা নিরবে নিভৃতে যেই অবদান রেখে চলেছে তা অকল্পনীয়। বাপ মরা এতিম আর গরিবের নাড়ি ছেড়া ধন এখানে পড়তে আসে। তাদের মধ্যে লাখে দু'একজনের স্খলন হলেই পুরো মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই কটাক্ষ করে অপপ্রচার চালানো কতটুকু ন্যায়সঙ্গত? এদের বাইরে সামর্থবান পরিবারের ছেলেরাও কিন্তু মাদ্রাসায় পড়ে যারা এই লাইনের সাথে উচ্চ শিক্ষাও অর্জন করেন। তারা নিজেকে জাহির করে বেড়ান না।

এই যে বাংলাদেশ দেখছি আমরা, যেটি আগে পূর্ব পাকিস্তান এবং তারও আগে ইস্ট বেঙ্গল ছিল; সেখানে শত শত বছর ধরে মৌলভি মওলানা সাহেবগণই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আলেম ওলামা আর পীর মাশায়েখদের পুণ্যভূমি আমাদের এই জন্মভূমি।
তাই প্লিজ, মাদ্রাসা নিয়ে নোংরামি করবেন না।

আরেকটি কথা, মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার মতোই চলতে দিন। মুরুব্বিরা যেভাবে চান সেভাবেই মাদ্রাসা চলবে। এখানে বাইরে থেকে লেজে গোবরে তালগোল পাকানোর চেষ্টা ভাল হবে না। এই দেশে সরকারী সিস্টেমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের নামে যেই আলিয়া পদ্ধতি চলছে সেটি দেখেছেন তো? এই আলিয়া পদ্ধতিতে সাধারণ শিক্ষাও আছে কিন্তু দেখা গেছে ছাত্ররা কোনটিই (সাধারণ বা ধর্ম) মজবুতভাবে শিখতে পারে না।

আমাদের এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে সুনাগরিক তৈরিতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যে কতো বিশাল ভুমিকা রেখে চলেছে সেটি নিয়ে বিশদ পরিসরে আলাপ হওয়া দরকার। সরকারের উচিত এই অবদানের স্বীকৃতি দেয়া। হুজুরদের গড়পড়তায় সমালোচনার প্রবণতা পরিহার করা জরুরি।

একটি বিষয় আমাদের মগজে ঢোকানো জরুরি যে, এদেশে মাদ্রাসার বিরোধিতা মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরোধিতারই অংশ। যেটা ভারতে চলছে। এই প্রচারণা সুকৌশলে বিভিন্ন সেক্টরে এমনভাবে চালানো হয় যে, অনেক মুসলিম পরিচয়ধারীও না বুঝে বিভ্রান্ত হয়ে ওদের সুরে সুর মেলায়।

আসলে এদেশের মাদ্রাসার ছেলেরা। এই সোনার বাংলার সোনার সন্তান। এই দেশ, এই মাটি তাদের কাছে পবিত্র আমানত। সোনার বাংলা গঠনে তাদের এই ব্যাপক অবদানকে স্বীকার করে নিতে হবে। তাদের নৈতিকতারও মূল্যায়নের অধিকার আছে এই মাটির সন্তান হিসেবে।

লেখক: সম্পাদক, ফরিদপুর টাইমস ও নয়া দিগন্তের ফরিদপুর প্রতিনিধি

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ