বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


তাকমিল পরীক্ষার রুটিনে পরিবর্তন চায় পরীক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা অথরিটি ‘আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে অনুষ্ঠিত কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এর প্রকাশিত রুটিনের পরিবর্তন চায় শিক্ষার্থীরা। আজ আওয়ার ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক শিক্ষার্থী এ পরিবর্তনের দাবি করেন।

কওমি মাদরাসার এ শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত রুটিনে দেখা যায়, শুক্রবার ছুটির দিনও পরীক্ষা আছে। ৭ এপ্রিল এক দিনে দুই পরীক্ষা রাখা হয়েছে। ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষা। একই দিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় পরীক্ষা হবে। পরের দিন সকালে আবার সাড়ে তিন ঘণ্টার আরেকটি পরীক্ষা রয়েছে।

বিষয়টি তাকমিল পরীক্ষার্থীদের বেশ ভাবাচ্ছে। বিষয়টি অনেক চাপের মনে হচ্ছে তাদের কাছে। এত চাপ কিভাবে সামলাবেন? এ নিয়েই চিন্তিত তারা!

নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই মাড়িয়ে আমরা দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আগামী ৩১ মার্চ শুরু হচ্ছে আমাদের তাকমিল পরীক্ষা। এ পরীক্ষাটি জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পিছনের অন্যান্য কোনো শ্রেণিকেই সরকার স্বীকৃতি দেয়নি। তবে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার স্বীকৃতি সরকার কর্তৃক ঘোষণা হয়েছে। তাই এটি জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা খুবই জরুরি। আর পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়। আমাদের যে রুটিন প্রকাশিত হয়েছে তাতে পরীক্ষার মাঝখানে কোনো সময়  রাখা হয়নি। আবার একই দিন রাখা হয়েছে দুটি পরীক্ষা। সরকারি ছুটির দিন শুক্রবারেও আছে পরীক্ষা। এতে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি।’

পরীক্ষা শুরু হলে শরীরের প্রতি খেয়াল নেওয়ার কিংবা ঠিকমতো ঘুম-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন না শিক্ষার্থীরা। এতে পরীক্ষা চলাকালিনই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন অনেক শিক্ষার্থী। এমন আশঙ্ক করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত (নেগরান) পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে থাকা হল পরিচালকগণও।

ঢাকার একটি মাদরাসার মুহাদ্দিস পদে শিক্ষকতা করেন মোহাম্মদ এনামুল হাসান (ছদ্মনাম)। তার পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পড়েছে নোয়াখালীর একটি মাদরাসায়। তিনি আওয়ার ইসলামকে জানান, ‘ঢাকার একটি মসজিদে জুমার দায়িত্ব আছে আমার কাধে। কিন্তু শুক্রবারে পরীক্ষা থাকায় জুমার নামাজ পড়াতে পারবো না। মসজিদ কমিটি বিষয়টি মেনে নিবেন কি না জানি না। এখন কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে নিলেই আমাদের জন্য ভালো হয়।’

এমন অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হোক। পিছিয়ে দেয়া হোক পরীক্ষার সময়কাল।

এই বিষয়ে আল হাইয়াতুল উলিয়ার অফিস সম্পাদক মাওলানা অসিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আগামী ৩১ মার্চ বুধবার পরীক্ষা শুরু হয়ে পরের সপ্তাহের বৃহষ্পতিবার ৮ এপ্রিল শেষ হবে হাইয়াতুল উলিয়ার তাকমিল পরীক্ষা। এখন যদি একদিন পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয় তাহলে পরীক্ষার মাঝে দুটো শুক্রবার পড়ে যায়। আবার রমজানের কাছাকাছি সময় চলে আসে। আর আমাদের অভিজ্ঞতা হল আমরা দুই শুক্রবারে কখনোই পরীক্ষা নেই না। এখন যদি পরীক্ষার তারিখ আরো পেছানো হয়, তাহলে রমজান এর কাছাকাছি সময়ে চলে আসবে। একটি পরীক্ষা চলাকালীন দুটো শুক্রবার আবার রমজান চলে আসা এসব বিষয় বিবেচনা করেই আমরা এই তারিখটা নির্ধারণ করেছি। এজন্য লাগাতার পরীক্ষা নিয়ে অল্প সময়ে পরীক্ষা শেষ করে দিতে চাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ৩০ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষার রুটিন নিয়ে সর্বোচ্চ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করছেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই রুটিনের পক্ষে। তাই আমরা তাদের বিষয়টিকে বিবেচনা করে তাদের পরীক্ষার রুটিন ঠিক রাখতে চাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ৩০ মার্চ মঙ্গলবার। কিন্তু চাঁদ দেখা না যাওয়ায় একদিন পিছিয়ে ৩১ মার্চ করা হয়েছে। আর এতেই তৈরি হয়েছে এই বিড়ম্বনার। আমরা শিক্ষার্থীদের আহবান করবো, আপনারা যথাসময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন। রুটিন মোতাবেক ঠিক সময়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।’

উল্লেখ্য, আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর সরকারস্বীকৃত ইসলামী শিক্ষাবোর্ড। সরকার গত ১১ এপ্রিল ২০১৮ সালে এই বোর্ডের অধীনে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে (ইসলামী শিক্ষা ও আরবি) মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা দেয়। জাতীয় সংসদের ২০১৮ সনের ৪৮ নম্বর আইনে এ মর্যাদা দেয়া হয়।

বর্তমানে কওমি মাদরাসার ছয়টি বোর্ডের সব ক’টি দাওরায়ে হাদিস জামাত ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে নিবন্ধিত।

বোর্ডগুলো হলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস, বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ