বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


লাভ জিহাদের নামে মুসলিমদের নিয়ে ষড়যন্ত্র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ওয়াসি সোলাইমান নদভি।।

আমাদের দেশ ভারতে খৃস্টান মিশনারিরা তাদের ধর্মের দাওয়াত দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ধর্মান্তরিত করার প্রক্রিয়াও চলমান দেশের সর্বত্র। দেশে তারাই লক্ষ্যবস্তুু ছিল প্রথম দিকে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে দেশ জুড়ে চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও মাথা চারা দিয়ে ওঠছে।

ইসলামোফোবিয়ার নামের বিশ্বজুড়ে ইসলামের যে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, আমাদের দেশেও এর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে ইসলামের রীতি-নীতি ও মুসলিমদের সামাজিকতার সুযোগ নিয়ে তালাক ইত্যাদিকে সামনে রেখে আরেক নগ্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে ‘লাভ জিহাদ’ এর নামে। ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে এটা নতুন কৌশল বলে মনে করছি।

আমাদের দেশে ২০১৩ সালে ‘লাভ জিহাদ’ কে রাজনৈতিক যুদ্ধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল যে, মুসলিম যুবকরা হিন্দু মেয়েদেরকে প্রেমের জালে আবদ্ধ করে বিবাহ করে জোড়পূর্বক ধর্মান্তরিত করছে। আমাদের জেলা মুজাফফরনগরে ঘটে যাওয়া এমনই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে এর প্রভাব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলিমদের দিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ তোলে নানানভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে। মুজাফফরনগরের ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে বারো জনকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত মানুষকে আহত ও ঘর-বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষের অনেক কষ্টে দিন গোজরান করতে হয়েছিলো। এখনো পর্যন্ত তারা বাস্তুহারা হয়ে মানুষের দারে দারে ঘুরছে। সেই পীড়াদায়ক, বিষাদময় স্মৃতি এখনো মানুষকে কাঁদিয়ে বেড়ায়।

লাভ জিহাদের বিষয়ে বলা হচ্ছে, ভারতীয় মুসলমানরা সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা করে হিন্দু মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে। পরে তাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর ধর্ম প্রচার করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে। অথচ বাস্তবতা হলো, ইসলাম ধর্মে ভিন্নধর্মী মুশরিক নারীকে বিবাহ করা অবৈধ বলা হয়েছে। এ ধরণের সম্পর্ককে ইসলাম অপছন্দ করে। হ্যাঁ, কেউ যদি আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করে, তখন তাকে বিবাহ করা বৈধ হবে। ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহকে খুশি করা ও সত্য অনুসন্ধান করা।

তবে যেমনটি বলা হয়ে থাকে, অত্যাচারীদের উদ্দেশ্য যখন খারাপ হয়ে যায় তখন কোনও যুক্তি বা দলিল সফল হয় না। ইউপি রাজ্যপাল আনন্দী বেনের স্বাক্ষরের সাথে সাথে আইনটি এখন কার্যকর হয়েছে। এই রাজ্যে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে আইন গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে। বর্তমানে লাভ জিহাদ বিরোধী আইনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এই ধরনের ধর্মান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই বিয়ে ‘শূন্য’ বা বাতিল বলে বিবেচিত হবে। যারা সেই ধর্মান্তরে জড়িত থাকবে, সেই দোষী ব্যক্তিদের আর্থিক জরিমানা ও সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদÐও প্রদান করা হবে।

যে সংস্থার অধীনে ধর্মান্তরিত হবে সেই সমস্ত সংস্থার নিবন্ধন প্রত্যাহার করা হবে। যারা সাধারণ পরিস্থিতিতে এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে, তাদের এক থেকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হবে। কারাভোগ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধরা হবে।

অর্ডিন্যান্সটিকে সাধারণভাবে লাভ জিহাদ বিরোধী আইন বলেই বর্ণনা করা হচ্ছে, যদিও লাভ জিহাদ শব্দটি অর্ডিন্যান্সের খসড়াতে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। ভারতে মুসলিম যুবকরা যখন কোনও হিন্দু মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করতে যান, সেটাকে বিজেপি ও দেশের বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী অনেকদিন ধরেই লাভ জিহাদ বলে বর্ণনা করে আসছে।

এই মূহুর্তে মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, কর্ণাটক এবং আসামেও কথিত ‘লাভ জিহাদ’ ঠেকানোর এই আইন পাসের পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে আসলেই জিহাদ বলে কিছু আছে, নাকি এটি কেবল সাম্প্রদায়িকের সিল লাগিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ? যে দেশের মুসলিম যুবকরা হিন্দু মেয়েদের প্রেমে জড়িয়ে ইসলামে প্ররোচিত করছে এবং মুসলমানদের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে অবিহিত করছে বিষয়টিকে, যদিও বাস্তবতা সম্পূর্ণ এর বিপরীত।

এটি নিখুঁত সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রচার বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিশন রেড্ডি লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, দেশে লাভ জিহাদের মতো কিছু নেই, এখনও পর্যন্ত কোনও গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কোনও প্রতিবেদন বা রিপোর্ট দেয়নি আমাদের কাছে। কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্যসরকার এ জাতীয় কোনও কিছুর অস্তিত্ব পায়নি। এটা সত্তে¡ও দেশে লাভ জিহাদের কতগুলি মামলা পাওয়া গেছে? আশ্চর্যের বিষয়, বিজেপি শাসিত তিনটি রাজ্য উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ এবং হরিয়ানায় কথিত লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন পর্যন্ত করা হয়েছে।

রাজ্য সরকারের এই আইন প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তা হলো দেশের সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্ট যখন প্রাপ্তবয়স্ককে কোনো ধর্মের পার্থক্য ছাড়াই বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। দুই জন পুরুষ বা দুই জন নারীকে একসাথে থাকতে অনুমতি দেয়। তবে লাভ জিহাদের নামে কেন এই আইন করা হচ্ছে? কথা এখানে পরিষ্কার! এখানে দেখানো হচ্ছে একটা কিন্তু ভিতরে রয়েছে অন্য কিছু। এখানে অন্য কিছুর প্রতি তাদের আসক্তিই সেটা প্রমাণ করে।

ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বলে-কোনও মানুষকে জোর করে ইসলামে প্রবেশের অনুমতি নেই। যদি কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইসলামে প্রবেশ না করে তাকে মুসলিম হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। ইসলাম গ্রহণ ও ধর্মান্তরের অর্থ কী? তদুপরি ইসলাম পর নারীর দিকে তাকাতেই নিষেধ করেছে। আর অমুসলিম নারীদের দিকে তো অনেক আগেই তাকানো নিষেধ। তবে কিভাবে একটি খাঁটি ধর্ম প্রেম ও রোম্যান্সের মতো অন্যায়কে অনুমতি দিয়ে জোড়পূর্বক বিবাহ বা ধর্মান্তরের অনুমতি দিতে পারে?

বিপরীতে দেশটিতে বর্তমানে মুসলিম মেয়েরা অমুসলিম ছেলেদের সাথে বিবাহ করার একটি বৃহত ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

এ ছাড়াও ম্যারিজ রেজিস্ট্রি অফিস গুলোর বিবরণ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা তৈরি করা দরকার। আমাদের মুসলিম নারী ও মেয়েদেরকে অমুসলিম ছেলেদের সঙ্গে পড়াশোনার বিষয়টি বন্ধ করা উচিৎ। তাদেরকে সতর্ক করে দেয়াটা খুবই জরুরী। মুসলিম মেয়েদেরর অমুসলিমদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য উপায়গুলো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া ও এ জাতীয় ঘটনাগুলি রোধ করা এখন সময়ের প্রধান দাবি।

একজন মুসলিম ছেলেকে অমুসলিম মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কোন মুসলিম মেয়ে অমুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে আসে, তাদের বলা উচিত যে, এটি পাপময়, পঙ্কিল এক জীবনধারা। শরিয়তের দৃষ্টিতে মুমিন ও মুশরিকের মধ্যে কোন বিবাহের অনুমতি নেই। এটি মুসলিম সমাজকেও প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সাধারণ শান্তির শ্রোত ধারা ব্যাহত করে। সূত্র: আরমোগান বাংলা

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ