শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ফেরা: ফেরারি দুই পাখি যেভাবে ফিরেছে নীড়ে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খাদিজা ইসলাম।।

অসাধারণ এক বই, ‘ফেরা’। লেখিক, সিহিন্তা শরীফাহ এবং নাইলাহ আমাতুল্লাহ। সম্পাদনা করেছেন, শরীফ আবু হায়াত অপু। শার'ঈ সম্পাদনা করেছেন, সানাউল্লাহ নজির আহমদ। প্রকাশনী, সরোবর,সমকালীন। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১২০ প্রচ্ছদ, সিদ্দিকী সানজিদা সাঈদ কথা। প্রথম প্রকাশ,  শাবান ১৪৩৭ হিজরি।

প্র্যাকটিসিং খ্রিস্টান থেকে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়ে উঠার জীবন্ত গল্প ফেরা বইটি। বইটির লেখক সিহিন্তা শরীফাহ এবং নাইলাহ আমাতুল্লাহ। তারা দুজন যেভাবে ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন তারই বর্ণনা করেছেন বইটিতে। বইটিতে ইসলামের সৌন্দর্যের পাশাপাশি খ্রিস্টানদের ইসলাম সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা ও উঠে এসেছে। খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাসী দু বোন কেমন করে স্রষ্টা কে চিনেছে,ইসলাম ই একমাত্র সত্য ধর্ম এটা জানার পর কতটা ত্যাগ, ধৈর্য, কষ্ট নিয়ে খ্রীষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠেছে ত,সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় রীতনীতির ভাবধারার বিশদ বর্ণনা ফেরা বইটি।

বাবা, মা দুজনেই চাকুরী জীবি। সেই সুবাধে দুই বোন বেশির ভাগ সময় একই সঙ্গে থাকা হত। বড় মেয়েটা একটু ভাবুক।সবকিছু নিয়ে ভাবতেই আগ্রহী। বই পড়তে ভীষণ ভালো বাসত, শান্তশিষ্ট,ধর্ম পালনে ও একনিষ্ঠ । জেসাস ক্রাইস্টের ভক্ত। তাদের পিতা মুসলিম ঘরে জন্ম ছিলেন। প্রেমের টানে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান হয়েছিলেন। ছোট থেকেই চারপাশে খ্রিস্টানরপরিবেশে বড় হয়েছেন। কতটা ধর্ম ভুক্ত হলে একজন মানুষ আযানের শব্দ শুনে চিৎকার চেচামেচি করে। জানতেন বাবা মুসলিম ঘরের সন্তান। দাদুবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখলেন মুসলিমরা তার বাবাকে মারতে এসেছিল । তখন তাদের মনে হচ্ছিল মুসলিমরার 'সন্ত্রাসী'।

সকল খারাপ কাজ মুসলিমদের দ্বারা সংগঠিত হয়। মা প্রতিনিয়ত মুসলিমদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে বলতেন, তীব্র ঘৃণা নিয়ে নিয়ে বড় হয়েছেন দু বোন। খ্রীষ্টধর্মের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে সবাই অনেক ভালোবাসত। একদিন স্কুলে এক মুসলিম সহপাঠীর কাছ থেকে ইসলাম বই নিয়ে পড়া শুরু করলেন। সবকিছু কেমন জানি খটকা লাগছে। মুসলিমদের সাথে পড়াশোনা করাতে মাঝেমধ্যে কোরআন তেলাওয়াত শুনত। কুরআন তিলাওয়াত গুলো অন্তর ঠান্ডা করে হয়ে যেত, যতই শুনত আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে যেত।

এভাবেই দিনকে দিন ইসলামকে জানার আগ্রহ হলো। আল্লাহ পাক হয়তো এভাবেই চিন্তাশীল তৈরি করে তার প্রিয় বান্দাদের ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসেন । বড় মেয়েটি তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেন সত্য ধর্ম কোনটা? বাবা উত্তরে বলেছিলেন মা তুমি বড় হয়ে জেনে নিবা কোনটি সত্য ধর্ম।আবিষ্কার করলেন বাইবেলে সৃষ্টির বর্ণনায় কি বিশাল ভুলই না রয়েছে! তাঁর চিন্তার নিস্তরঙ্গ জগতে দোলা লাগলো।

মায়ের কড়াকড়িতে ঘরের বাইরের জগতে বিচরণের সুযোগ কম থাকায় বইই ছিল তাঁর জগত। পড়তে থাকলেন সব বই।যতই বই পড়তে লাগলেন ততই মনে হলো খ্রিষ্টান ধর্ম বানানো ধর্ম আশপাশের বিভিন্ন ঘটনায় আর বই পড়ার প্রভাবে একটা সময় ধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ আস্তে আস্তে উঠে যেতে থাকলো। কলেজে ওঠার পর ধর্মের প্রতি তাঁর ভক্তি আরো কমতে থাকে।

ইন্টারনেটে ঘেঁটে ইসলাম সম্পর্কে জানতে গিয়ে কখন যে শান্তির ধর্মে আবদ্ধ হয়ে গেলেন টেরই পেলেননা। আল্লাহ তাঁর বান্দীকে পথ দেখাতে থাকেন একটু একটু করে। কলেজ পাশ করে ভর্তি হলেন প্রাইভেট এক ভার্সিটিতে যেখানে বাধ্য হয়ে তাকে পড়তে হল ইসলামের ওপর কিছু কোর্স। হঠাৎ টাকার অভাবে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারলেন না। টাকার অভাবে পরের সেমিস্টারও একই দশা। তখন মন খারাপ না করে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে লাগলেন।

পড়তে লাগলেন মা বাবার অগোচরে ইসলাম সম্পর্কে। পিস টিভিতে জাকির নায়কের লেকচার দেখতেন।বুখারি শরিফ পড়তেন দু বোন লুকিয়ে। এতদিনে তারা বুঝে গেল ইসলামই সত্য ধর্ম।প্রতিনিয়ত ইসলাম পালন করতে তাদের মনে টান অনুভব করে।বড় বোন লুকিয়ে কলেমা পড়ে মুসলিম হয়ে গেলো।এখন প্র্যাকটিসিং মুসলিম হতে হবে তার মাথায় সেই চিন্তা ঢুকে গেলো নামাজ, রোজা, অযু করা শিখতে হবে। তাই রাতের আধারে নামাজ শেখার জন্য বই পড়া শুরু করল।ইসলামিক চ্যানেল গুলোতো হুজুরদের ওয়াজ শুনত।ততদিনে ফেসবুকে ও তাদের ইসলামি বান্ধবী হয়ে গেছে।

তাদের কাছে ও শিখত।এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ধর্ম পালন করবে।ইদানিং মায়ের মনে সন্দেহ হয়,রাত জেগে তারা কি করে,কেনইবা এত ঢিলেঢালা জামা পড়ে। মুসলিমদের মতো মাথায় হিজাব দিয়ে থাকে। খ্রিস্টান ধর্মভুক্ত সে মেয়ে কে আর দেখা যায় না গির্জাতে।খ্রিস্টানদের কোনো রীতিনীতি তে সে থাকেনা। চোখের সামনে মেয়ে কে এমন দেখে মায়ের সন্দেহ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। মেয়ে ইসলাম সম্পর্কে বুঝাতে আসে।

তাতে সন্দেহ নয় বুঝেই গেছেন মেয়ে মুসলিম হয়ে গেছে। তার মা বলছে তুই মুসলিম হলে আমি আত্মহত্যা করব।একদিকে মা আরেক দিকে ইসলাম কে আকরে ধরে বাচার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মেয়েটি। ছোট বোন ও ততদিনে বড় বোনের সাথে মিশতে মিশতে মুসলিম হয়ে গেছে।

ছোট মেয়ের মুসলিম হওয়াটা মা টের পাননি। রোজার দিন চলে আসল কিভাবে রোজা রাখবে?এইদিকে কলেজ ও বন্ধ।টিউশনের নাম করে সারাদিন বাহিরে থাকত।সন্ধ্যা, সেহরি লুকিয়ে লুকিয়ে করত মা যেন টের না পায়। প্রতিদিন রোজা রাখলেও শুক্রবারে রোজা রাখার কোনো উপায় ছিলনা, কেননা শুক্রবার ছুটির দিন মা বাবা দুজনেই বাসায় থাকত।

বলে রাখা ভালো তাদের পিতা খ্রিস্টধর্মের রীতিনীতি ও পালন করতনা। তার মাকে বিয়ে করার জন্যই নাম মাত্র খ্রিস্টান, তবে সে মুসলিম ধর্ম ও পালন করতনা। ছুটির দিনে রোজা রাখতে পারতনা। সারাদিনের কাজা নামাজ রাতের আধারে লুকিয়ে পড়ত।

হঠাৎ তার মা একদিন এসে দেখে মেয়ে জায়নামাজে। বুঝতে বাকি রইলনা মেয়ে মুসলিম হয়ে গেছে। কিছুতেই তার মা মেনে নিতে পারছেনা প্র্যাকটিসিং একজন খ্রিস্টান থেকে মেয়ে টা কিভাবে মুসলিম হয়ে গেছে। ভাবত মেয়ের হয়ত কোনো মুসলিম ছেলের সাথে রিলেশন আছে।আসলে মেয়ে র রিলেশন হয়ে গেছে সৃষ্টিকর্তার সাথে।

চোখের সামনে মা কে প্রচুর কান্না করতে দেখে। মেয়ের ও কষ্ট হচ্ছে প্রচুর। ঐ সময় টা তার খুব কষ্টে গেছে বুঝতে পারলনা কিভাবে কি করবে।না না আমি সত্য ধর্মের সন্ধান পেয়েছি কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি এটাকে বিলীন করবনা।

কিছু দ্বীনি বোনের পরামর্শে দ্বীনি একজন ছেলেকে বিয়ে করে নিল।চাচার সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে। মা কিছুতেই মানতে চাইল না। ছোট বোনটার মুসলিম হওয়ার কথা শুনে মা পুরোই হতাশ হয়ে গেছে। দুটো মেয়েই আমার মুসলিম হয়ে গেছে।ছোট মেয়েটি ও দ্বীনি ছেলে দেখে বিয়ে করে নিয়েছে। সব ভালোবাসা কে ছাপিয়ে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা জিতে গিয়েছে।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ