শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

জালালাইন জামাতের সমাপণী পরীক্ষার প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দরজায় কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাবর্ষের পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। কমে এসেছে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময়। তাই অল্প সময়ে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কলাকৌশল বিষয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষাপরামর্শ ‘পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও সেরা ফলাফলের কৌশল’। ধারাবাহিক পর্ব- ১৮

লিখছেন দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার উস্তাযুল হাদিস, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজেল ‘মাসুম আবদুল্লাহ’


(গত পর্বের পর)

দরসিভাবে যোগ্যতার ভিত দৃঢ় ও সুসংহত করার সর্বশেষ জামাত শরহেবেকায়া। আর জালালাইন জামাত হল মূল ফল ও আসল অর্জন কুড়াবার পথে পা রাখার জামাত। কুরআন-হাদিস তথা ইসলামি জ্ঞানভান্ডার থেকে উপকৃত হবার যোগ্যতা লাভের জন্য বিগত বছরগুলোর পড়াশোনা। আর জালালাইন জামাত থেকে-ই শুরু হয়ে যায় মূল লক্ষ্য ইলমে ওয়াহি হাসিলের পথযাত্রা।
তাই অন্য জামাতের পড়া-লেখার তুলনায় এ জামাতের পড়াশোনা হতে হবে একটু বেশি শৃঙ্খলিত ও মার্জিত। স্বপ্ন-শেখর ছোঁয়া ও স্বপ্ন-ধরার আনন্দে উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত।

অতএব—শুধু পরীক্ষায় নয় বরং জীবন সাধনার লক্ষ্য পূরণের প্রয়োজনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে নিয়মতান্ত্রিক হাড়ভাঙ্গা মেহনত ও কঠোর অধ্যাবসায়। নিচে এ জামাতে ভালো ফলাফল ও সফলতা লাভের কিতাবভিক্তিক কিছু কৌশল ও করণীয় তুলে ধরা হল—

তাফসিরুল জালালাইন ১-২-৩
১. শব্দের তাহকিক-সহ সাবলীল অনুবাদ রপ্ত করবে। সাবলীল অনুবাদ শেখার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জালালাইনের বাংলাটি খুবই চমৎকার।
২. আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও শানে নুযুল গুছিয়ে লিখে রপ্ত করবে। এ ক্ষেত্রে উস্তাদের আলোচনা মনে রাখার চেষ্টা করবে।
৩. আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বা আয়াত সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়েল ও হুকুম-আহকাম বুঝে শুনে পড়বে ও লিখে মনে রাখার চেষ্টা করবে।
৪. আয়াতাংশ বা আয়াতে থাকা ছোট ছোট বাক্যের মহল্লে ই’রাব ও তরকিব রপ্ত করবে।
৫. আয়াত বা সুরার ফজিলত এবং তার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা-উপদেশ সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখবে ও রপ্ত করবে।
৬. দীর্ঘ নেসাব হলেও ভবিষ্যত জীবনের দিকে তাকিয়ে পঠিত পুরো অংশ রপ্ত করার চেষ্টা করবে। একদম অপারগ হলে—সে-সব জায়গা থেকে সাধারণত প্রশ্ন আসে কিংবা বেশি আসে—অতিরিক্ত যত্নসহ সেসব জায়গা আত্মস্থ করার প্রতি মনোযোগি হবে।
৭. কিতাবে বর্ণিত বিভিন্ন কেরাত ও ই’রাব ও তাহকিক বিশেষ গুরুত্বসহ আত্মস্থ করবে।
৮. প্রতিটি আয়াতের সঠিক তাফসির আয়ত্ত করবে। মতোবিরোধপূর্ণ তাফসিরে বিশুদ্ধতম মতটিও রপ্ত করবে। কোনো আয়াতের তাফসিরের ক্ষেত্রে তাফসিরকারের কোনো অসর্কতা বা ভ্রম হলে চিহ্নিত করবে। এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা ও জবাব রপ্ত করবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করবে এবং প্রশ্নের ধরণ ও ব্যপ্তি উপলব্ধি করে উত্তর লেখার অনুশীলন করবে।

হিদায়া ১-২
১. প্রতিটি মাসায়ালা বুঝে পড়বে। প্রথমে মতন তারপর শরাহ আয়ত্ত করবে। মতন-শরাহ মিলেয়ে মাসয়ালা হল করবে। প্রয়োজনে কিতাবের হাশিয়া দেখবে। সহজ সরল অনুবাদের জন্য ইসলামি ফাউন্ডেশনের বাংলা হিদায়া পড়বে। আর কিতাবের ইবারত হলের জন্য ‘ইনায়াহ’ দেখতে পার। সূরতে মাসয়ালা ও ইমামদের মতামত, দলিল ও খণ্ডন ইত্যাদি তফসিলের জন্যে ‘আশরাফুল হেদায়া দেখা যেতে পারে। সংক্ষেপে রপ্ত করার জন্য কিতাবের হাশিয়াও দেখা যেতে পারে।
অবশ্য আরবিতে পরীক্ষার উত্তর লিখলে আরবি কিতাব মুতায়ালা করবে। আর বাংলায় উত্তর লিখলে উত্তরের উপস্থাপনা শৈলি রপ্তের জন্য বাংলা দেখবে। তবে যে-কোনো লাইব্রেরির বাংলা দেখবে না। সচেতন উস্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করে নেবে—কোন্ লাইব্রেরির বাংলা দেখবে।
২. তুলনামূলক কঠিন মাসয়ালাগুলো বিশেষ যত্নসহ পড়বে। পরস্পরে মুজাকারা করবে। সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে অনুশীলন করবে।
৩. খুঁটি-নাটি ও ছোট-খাট মাসয়ালাসমূহ বিশেষ গুরুত্বসহ আত্মস্থ করবে।
৪. নিত্য প্রয়োজনীয় ও প্রচলিত মাসয়ালা-মাসায়েলের হুকুম বুঝে-শুনে ঠান্ডা মাথায় আয়ত্ত করবে।
৫. পুরো কিতাবের আরবি ইবারত সঠিক হরকত দিয়ে বার বার পড়বে—যাতে তা মুখস্থের মতো হয়ে যায়।
৬. বিভিন্ন প্রসঙ্গে উল্লেখিত দোয়া-কালাম অরবিসহ সঠিক হরকত দিয়ে মুখস্থ করবে। অর্থসহ লিখে অনুশীলন করবে।
৭. নানা পরিভাষার শাব্দিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা এবং তার প্রকারগুলো গুছিয়ে সুন্দর করে লিখে মুখস্থ করবে।
৮. যে সব মাসয়ালায় ইমামদের মতোবিরোধ রয়েছে—সেসব মাসয়ালা ইমামগণের মাযহাব, প্রত্যেকের দলীল এবং ভিন্ন মাযহাবের ইমামদের দলিলের জওয়াবসহ রপ্ত করবে। বিশেষ করে কিতাবের শুরুর দিকের মাসয়ালাগুলো।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী অনুশীলন করবে।
১০. যে সব অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে—সে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে দক্ষ অভিজ্ঞ কোনো উস্তাদকে দেখাবে।

নুরুল আনওয়ার (সুন্নাহ)
১. কিতাবটি পড়ার পূর্বে ‘খুলাসাতুল আনওয়ার’ কিতাবটি সংগ্রহ করে পড়ে নেয়া যেতে পারে। এতে করে ‘নুুরুল আনওয়ার’ কিতাবের পরিভাষা ও তার পরিচয় সহজেই রপ্ত করা যাবে।
২. পুরো কিতাবটি সহি হরকত দিয়ে বুঝে-শুনে পড়া ও বিষয়বস্তু মুখস্থ করা। সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে মুখস্থ বেশি উপকারি বলে মনে হয়। কিতাবটি সহজে বোঝার জন্য কাশফুল আসরার দেখা যেতে পারে। হাশিয়াও এর বিকল্প হতে পারে।
৩. প্রতিটি পরিভাষার সংজ্ঞা, হুকুম ও উদাহরণ মুখস্থ করবে।
৪. মতোবিরোধপূর্ণ মাসয়ালায়—ইমামদের শুদ্ধ সঠিক নাম, তার মতামত, দলিল, দলিলের আঙ্গিক ও প্রতিপক্ষের দলিল ও তার দলিলের খণ্ডন বুঝে-শুনে খাতায় লিখে আয়ত্ত করতে হবে।
৫. উসুলের পরিচয় ও বিবরণ, তার থেকে বের হওয়া হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েল আলাদা আলাদা যত্নসহ রপ্ত করবে।
৬. কোনটি কিসের উদাহরণ, কিভাবে উদাহরণ এবং উদাহরণের যাবতীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ অনুশীলন করবে।
৭. কিতাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন আয়াত, হাসি, আয়াত বা হাদিসের টুকরা, কবিতা, কবিতার পংক্তি ও চরণ এবং আরবি উদাহরণের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় আলোচনা ঠান্ডা মাথায় বুঝে শুনে রপ্ত করবে।
৮. পুরো কিতাবের একটি নকশা ও ছক এঁকে কিতাবের বিষয়বস্তু ও প্রতিটি আলোচনা সারসংক্ষেপ খাতায় লিখে মুখস্থ করবে ও পরস্পরে একে অপরকে শোনাবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে তার উত্তর লিখে কোনো দক্ষ অভিজ্ঞ ও দরদি কোনো উস্তাদকে দেখাবে।

আল ফাওযুল কাবির
১. পুরো কিতাব সঠিক হরকত দিয়ে বুঝে বুঝে পড়বে।
২. মুখস্থের বিষয়গুলো নির্ভুলভাবে লিখে মুখস্থ করবে।
৩. প্রতিটি আলোচনার সারসংক্ষেপ বের করে খাতায় লিখে আয়ত্ত করবে।
৪. বিভিন্ন পরিভাষা, নানা আকিদা, বিশেষ বৈশিষ্ট ও ভ্রান্তির নিরসনগুলো ভেবে চিন্তে আত্মস্থ করবে।
৫. তাফসিরের নানা উসুল ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রপ্ত করবে। এ ক্ষেত্রে তাফসিরকারদের ও লেখকের কোনো স্বতন্ত্র মত থাকলে—বিশেষ গুরুত্বসহ তা আয়ত্ত করবে।
৬. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে সে মোতাবেক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং বেশি বেশি অনুশীলন করবে।

দিওয়ানুল মুতানাব্বি
১. শব্দার্থ মুখস্থ করবে। শব্দের একবচন ও বহুবচন আয়ত্ত করবে। শব্দের বাব-বহস সিগাহ ও ব্যবহার বুঝে বুঝে পড়বে। বাক্যরচনা করার অনুশীলন করবে।
২. প্রতিটি শে’র বিশুদ্ধ হরকত দিয়ে তাহকিক ও অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়বে। বার বার পড়বে—যাতে কিতাবের বাক্যগুলো হুবহু মুখস্থের মতো হয়ে যায়।
৩. শেরগুলোর প্রেক্ষাপট, শা’য়ের, যারজন্য রচনা করা হয়েছে—তার নাম ও পরিচয়, কবিতার মর্ম-ব্যাখ্যা ও তার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা-উপদেশসহ সাজিয়ে গুছিয়ে আয়ত্ত করবে।
৪. আরবি বাক্যের বাংলা ও বাংলা বাক্যের আরবি করার নিয়ম-রীতি রপ্ত করে ব্যাপক অনুশীলন করবে।
৫. যে কোনো ১০-১৫টি শে’র অর্থসহ নিভুলভাবে খাতায় লিখে মুখস্থ করবে।
৬. বিভিন্ন শে’র এর ছোট বাক্য বা বাক্যাংশের মহল্লে ই’রাব ও তারকিব করার নিয়ম-রীতি আয়ত্ত করে তারকিব করার অনুশীলন করবে।
৭. বিভিন্ন আরবি প্রশ্ন তৈরি করে আরবিতে তার উত্তর তৈরি করার অনুশীলন করবে।
৮. শূণ্যস্থান পূরণ করার চর্চা করবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে পরীক্ষার জন্য হাতে-কলমে পূর্ণপ্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

আকিদাতুত তহাবি
১. পুরো কিতাব বুঝে বুঝে সঠিক হরকত লাগিয়ে পড়বে।
২. বিভিন্ন দলের বিশুদ্ধ নাম, নামকরণের কারণ, উদ্ভব, ক্রমবিকাশ ও বিস্তার এবং তাদের বিশেষ আকিদা ও ভ্রান্ত আকিদাসমূহ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রপ্ত করবে।
৩. আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পরিচয়, নামকরণের কারণ, বৈশিষ্ট্য ও আকিদা পৃথক পৃথকভাবে কিতাবের ধারাবাহিকতায় মুখস্থ করবে।
৪. বিভিন্ন আকিদার শাখা-প্রশাখা, কোরআন-হাদিস ও যৌক্তিক দলিল সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে আত্মস্থ করবে।
৫. ইমাম তহাবির বিস্তারিত জীবনী মুখস্থ করবে।
৬. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে অনুশীলন করবে। (চলবে)

এ আয়োজনের বাকি পর্ব আমাদের  ‘শিক্ষাঙ্গন’ ক্যাটাগড়িতে।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ