মাহদী হাসান:
আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষ প্রেরণ করেছেন ইবাদতের জন্য। মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সবকিছুর উপর। নারী পুরুষের মধ্যে পুরুষকেও নারীর উপর মর্যাদা দিয়েছেন। হজরত উম্মে সালমা রা. একবার মহানবীর সা. কাছে অনুযোগ করে বললেন, পবিত্র কোরআনে পুরুষদের কথা যেভাবে এসেছে নারীদের কথা সেভাবে আসে না কেন?
তার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা সুরা আহজাবে পুরুষ ও নারীদের কথা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করে এই আয়াত অবতীর্ণ করেন ‘নিশ্চয় আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, ঈমান আনয়নকারী পুরুষ ও ঈমান আনয়নকারী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, খুশু-খুজু অবলম্বনকারী পুরুষ ও খুশু-খুজু অবলম্বনকারী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও নারীÑ এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার!’ (সুরা আহজাব : ৩৫; জামিউল মাসানিদ: ৭৭০৭)। আয়াতে বর্ণিত সৌভাগ্যবান এই ১০ শ্রেণি নারী-পুরুষের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
আত্মসমর্পণকারী: যে নারী ও পুরুষ একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদে বিশ^াস করে এবং তার প্রতিই জীবন সমর্পিত করে দেয়। নিজের জীবনকে প্রকৃত অর্থে একজন ‘মুসলিম’ হিসেবে গড়ে তোলে। এতেই মানুষের পার্থিব ও অপার্থিব সব কল্যাণ।
ঈমান আনয়নকারী: যে নারী ও পুরুষ একমাত্র আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। ঈমানের যে তিনটি স্তর রয়েছেÑ অন্তরে বিশ^াস করা, মুখে স্বীকৃতি দেওয়া এবং কাজে পরিণত করা; এটা প্রকৃত ঈমানের দাবি।
অনুগত: আল্লাহর আনুগত্য ও প্রার্থনায় যারা প্রশান্তি লাভ করে এবং যারা এ ব্যাপারে স্থির থাকে।
সত্যবাদী: একজন মুমিন তার জীবনের সব কথা ও কাজে সততার পরিচয় দেবে। তার জীবনে মিথ্যার চর্চা থাকবে না। এমনকি হাসির ছলেও মিথ্যা বলবে না।
ধৈর্যশীল: মুমিন বিপদ-আপদ, দুশ্চিন্তা, পাপ পরিহার ও আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দেবে। ধৈর্য মানুষের অন্তর আলোকিত করে এবং আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ় করে। আল্লাহ ধৈর্যশীল বান্দাকে পছন্দ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তাদের বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন।’ (তিরমিজি : ২৩৯৬)
খুশু-খুজু অবলম্বনকারী: যার আচার-আচরণ, কথা ও কাজে বিনয় প্রকাশ পায়, মূলত সে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে এবং পরকালের চিন্তা তাকে অহঙ্কার ও দম্ভ প্রকাশ করতে দেয় না।
দানশীল: অসহায় মানুষের জন্য যার অন্তর বিগলিত এবং যে তাদের প্রতি অনুগ্রহশীল। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সে তার সহায়-সম্পদ ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
রোজা পালনকারী: যে নারী ও পুরুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার নির্দেশ মতে নির্ধারিত সময়ে বৈধ পানাহার ও যৌনমিলন পরিহার করে চলে। রোজা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে, তার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহভীতি অর্জিত হয়। রোজার প্রতিদান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত।
লজ্জাস্থান হেফাজতকারী: যারা অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় নিজের জৈবিক চাহিদা পূর্ণ করে না এবং যাদের দেহভঙ্গিতেও অশালীন ও অশ্লীলতা প্রকাশ পায় না।
আল্লাহকে স্মরণকারী: যে নারী ও পুরুষ আল্লাহর স্মরণ ও ভালোবাসা দ্বারা নিজেদের অন্তর সজীব রাখে। আল্লাহর ইবাদত, জিকির, তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ যার কাছে পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির চেয়ে প্রিয় হয়। যে শোয়া, বসা ও চলন্ত অবস্থায় আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ পাঠ করে।
-এটি