শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


‘বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন নয়, বরং কুরআনের আলোকে বিজ্ঞান বুঝার চেষ্টা করুন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।।
প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম: জামিয়াতুন নূর আল কাসিমিয়া, উত্তরা, ঢাকা 

রজব মাস রাসূলের সা. মেরাজের মাস। দশম হিজরীর এই মাসেরই কোন এক রজনীতে আল্লাহপাক তাঁর হাবিব সা. কে মক্কা থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বাইতুল মোকাদ্দাসে নিয়ে যান। সেখান থেকে সাত আসমান ভ্রমন শেষে সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম, পুলসিরাত পরিদর্শন করে পূনরায় সুবহে সাদিকের আগেই জন্মভূমি মক্কায় ফিরে আসেন। এ আল্লাহর এক কুদরতি খেলা। সায়্যিদুল মুরসালিন সা. এর এক আশ্চর্য মোজেজা।

আরবীতে ‘আব্দুন’ বলা হয় ঐ অস্তিত্বকে যার মাঝে বডি, শরীর এবং রূহ, প্রাণ উভয়টাই বিদ্যমান। শুধু বডি বা শুধু রূহকে আরবীতে ‘আব্দুন’ বলে সম্বোধন করা হয় না। সুতরাং কুরআনে কারীমের এই আয়াত সুস্পষ্ট দলীল যে নবী কারীম সা, স্ব-শরীরে মেরাজে গমন করেছিলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে নয়। এস্থানে এসে অনেক ইসলামিক স্কলার নামধারী মুফাসসির এই আয়াতের ভূল ব্যাখ্যা করেন। ভারতবর্ষের নন্দিত মুফাসসির মাওলানা আকরাম খাঁ ও এখানে এসে হোঁচট খেয়েছেন। তার লিখিত কুরআনে কারীমের তাফসীরে তিনি ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন মেরাজ নাকি স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছিলো।

এটা আল্লাহর এমন এক খেলা যেখানে এসে আধুনিক বিজ্ঞান পরাভূত নস্যি। এটা এমন এক মোজেজা যার সামনে সাইন্স পর্যদুস্ত। দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান এই শ্বাশত সত্যকে অস্বীকার করে আসছিলো। তাদের যুক্তি ছিল যে, পৃথিবী পার হতে এমন কয়েকটি স্তর অতিক্রম করতে হয় যা সম্ভব নয়।

যেমন ‘বায়ুচাপ বা মধ্যাকর্ষণ’- যা কোন কিছুকে প্রবলভাবে জমিনের দিকে আছড়ে ফেলে। ‘হিমপ্রবাহ’- যা যে কোন কিছুকেই মুহূর্তের মধ্যে জমিয়ে ফেলে। ‘অনল প্রবাহ’- যা নিমিষেই জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। এগুলো অতিক্রম করে পৃথিবীর বাহিরে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বান্দা! এগুলো তো আমার সৃষ্টি, আমার কাছে তো এগুলো কিছুই না, নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তো আমারই হাতে, আমিতো জানি কোন স্তর কিভাবে অতিক্রম করতে হয়।’

আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতের হাত বাড়িয়ে দিলেন, তার রহমতের দুয়ার খুলে দিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানীরা রকেট আবিষ্কার করল এবং সে বাহনে চড়ে চাঁদে গেল। চাঁদে গিয়ে এখন প্রাণের তালাশ করে। মঙ্গলে গিয়ে মঙ্গলের মাটি এনে বছরকে বছর গবেষণা করে আর গোঁফ নাচিয়ে বলে ‘জগৎ তো জয় করেই ফেললাম খোদারে মানার আর কি দরকার?’ (নাউজুবিল্লাহ)

ব্যাঙ যেমন তার কুয়ার পাড়ে বসে বলে, এই কুয়াই হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলরাশি! এবং কুয়ারপাড়ের ছোট ছোট মাটির ঢিবি কে বলে, এগুলোই হল বিশ্বের উচু উচু হিমালয়! অথচ সে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর দেখেনি এবং সে সম্পর্কে কিছুই জানেনা। সে দেখেনি বাংলাদেশের মেঘনার গভীরতা পদ্মার স্রোত। সে দেখেনি যমুনার বহতা, এমনকি তার পিছনের বাড়ির ছোট্ট পুকুরটাও সে দেখেনি। এই বিজ্ঞানীরা তো দেখছেই শুধু মঙ্গল আর চাঁদ! মহাকাশে যে আরও লক্ষ কোটি গ্রহের বিচরণ আছে, সে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই নেই। আরও যে লক্ষ কোটি গুন বড় বড় গ্রহ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে সে সম্পর্কে তারা কেবলই অজ্ঞ!

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আধুনিক বিশ্বের অত্যাধুনিক বিজ্ঞানীরা! চাঁদে তো পৃথিবী পার হয়েই গিয়েছো, মঙ্গলে তো পৃথিবী অতিক্রম করে যাওয়া লাগছে, প্রবল বায়ুচাপ কিভাবে অতিক্রম করলে? তা কি তোমাদের জমিনে আছড়ে ফেলেনি? হিমপ্রবাহ কি করে সামাল দিলে? তা কি তোমাদের বাহনকে জমিয়ে ফেলেনি? উত্তপ্ত স্তর কি করে অতিক্রম করলে? তা কি তোমাদেরকে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়নি?

তোমরা এত গতি দিয়ে এসব স্তর অতিক্রম করেছো। কত ছিল তোমাদের গতি? একটি রকেটের গতি সেকেন্ডে সাত মাইল বা প্রায় বারো কিলোমিটার।

আমার আল্লাহ তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে বোরাকের মাধ্যমে জগত ভ্রমণ করিয়েছেন সেই বোরাকের গতির ইতিহাস শোনো। বোরাক শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ ‘বারকুন’ থেকে, বারকুন মানে হল বিদ্যুৎ। অর্থাৎ সেই বোরাকের গতি ছিল বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। বিদ্যুৎ বা আলোর গতি হল সেকেন্ডে এক লক্ষ ছি‌‌য়াশি হাজার মাইল বা তিন লক্ষ কিলোমিটার। আর বোরাকের প্রতিটা কদম ছিল তার দৃষ্টি সীমার শেষ সীমানায়। অর্থাৎ তার দৃষ্টিতে যতটুকু ধরা পড়তো তার শেষ সীমায় তার কদম পরতো। আমরা খালি চোখে লক্ষ মাইল দূরের সূর্যকে দেখি, কোটি মাইল দূরের নক্ষত্ররাজিও আমাদের দৃষ্টির সীমায় ধরা দেয়। তাহলে এই দৃষ্টিসীমা পলকে অতিক্রম করা সেই বোরাকের কত বড় ছিল তার কদম? কি ছিল তার গতি? কল্পনা করা যায়?

হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে তার ভাইয়েরা হিংসায় যে কুয়ায় নিক্ষেপ করেছিল সেই কুয়ার গভীরতা ছিল চৌদ্দ হাত।সাত হাত পর্যন্ত রশি দিয়ে নামিয়ে উপর থেকে ভাইয়েরা রশি কেটে দিল, বাকি আছে মাত্র সাত হাত! নিচে পড়তে কতক্ষণ লাগবে? এক ঘন্টা না ত্রিশ মিনিট না ত্রিশ সেকেন্ড? ৩০ সেকেন্ডও তো লাগবেনা! পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে সাত আসমানের উপরে সিদরাতুল মুনতাহায় হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বিদ্যমান‌।

আল্লাহ বলেন, ও জিবরাইল! আমার ইউসুফ! হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সে কোটি কোটি গুণ মাইল দূর থেকে রওনা হয়ে সাত আসমান অতিক্রম করে পৃথিবীর পুরুত্ব পাড়ি দিয়ে সাত হাত নিচে ধাবিত হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই নিজের তুলতুলে হাতে নিয়ে নিলেন। সুবাহানাল্লাহ! ও দুনিয়ার মানুষ! গতি কাকে শিখাও? যুক্তি কাকে দেখাও? তিনি তো সকল যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে তিনবার شق صدر বা ‘বক্ষবিদারণ’ সংঘটিত হয়েছে। দীর্ঘ বারো শত বছর যাবত বিজ্ঞানীরা অস্বীকার করে আসছিল। এই যুক্তিতে যে এইভাবে বুক মাঝ দিয়ে ফেড়ে ফেললে এমন কিছু শিরা-উপশিরা কেটে যাবে যেগুলো কাটলে ধমনীর সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষ মারা যাবে। সুতরাং এই বক্ষবিদারণ সত্য হওয়া সম্ভব নয়। বারো শত বছর পর আল্লাহ তায়ালার কুদরতের হাত বাড়িয়ে দিলেন, দেখিয়ে দিলেন open heart surgery. ওপেন হার্ট সার্জারি তো মানুষের বুক মাঝ দিয়ে ফেড়েই করে। কোথায়? এমন কোন শিরা-উপশিরা তো কাটা পড়ে না যার দরুন ধমনীর সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়! তোমাদের যুক্তিতে তোমরাই হেরে গেলে!

ও দুনিয়ার মানুষ! বিজ্ঞানের আলোকে কোরআনকে নয় বরং কোরআনের আলোকে বিজ্ঞান বুঝো! হেদায়েত পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার আমল করার তৌফিক দান করুন।

গত শুক্রবার ২৬ ফেব্রুয়ারি জুবার বয়ানে প্রদত্ত বয়ানের শ্রুতিলিখন মুহা. মাহমুদুল হাসান নাহিয়ান।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ