শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সমাজের প্রচলিত বিয়ে: ইসলাম কী বলে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উসমান বিন আ.আলিম

বিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। যুবক-যুবতীর চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান এবং তা অনেক সাওয়াবেরও বটে।

আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিয়ে, যা প্রত্যেক মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বিয়ে সম্পর্কে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন।বিয়ে সম্পর্কিত কুরআন এর এসব আয়াত আমাদের জন্য বিয়ের ব্যপারে পথ প্রদর্শক।

বিয়ে একজন নারী বা পুরুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। বিয়ে ছাড়া আমাদের জীবন আনন্দময় হওয়া বা পরিপূর্ণতা লাভ করা কঠিন। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বিয়ের মাধ্যমে আমরা যে প্রশান্তি লাভ করতে পারবো সে কথাও বলেছেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন কারীমে এই প্রসঙ্গে বলেন, আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রুম : আয়াত ২১)

স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। একজন ব্যতীত অন্য জনের চলা কষ্টকর। আর বিষয়টিকে বুঝানোর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অন্যত্র বলেন, তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)।

একজন পুরুষের জন্য আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরি। কারণ বিয়ে সম্পর্কিত খরচ এবং বিয়ে পরবর্তী যত সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করতে হবে তার সব কিছুই স্বামীর দায়িত্বে। এজন্য অনেক পুরুষই বিয়ের উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে চায় না বা বিয়ে করতে পারেনা।কিন্তু অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩)

এমনটি রাসুল সা.এর একাধিক হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা তখনই সুফল বয়ে আনবে, যখন বিয়েটা হবে ইসলামিক দিকনির্দেশনায়।যেখানে থাকবে না পশ্চিমাদের কোনো কৃষ্টি-কালচার। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে,আজ ইহুদী-খৃষ্টানদের বিয়ে বিষয়ক প্রথা গুলো আমাদের মুসলিম সমাজে এতটাই ছেয়ে গেছে যে,আমাদের সমাজে সেগুলো কে খুবই পছন্দ ও ভালো কাজ মনে করা হয়ে থাকে।সাথে সাথে একজন নেককার আদর্শ মুসলিম এর জন্য এরকম অপ্রয়োজনীয় কাজ করা কখনোই উচিত নয়।

একারণেই দেখা যায় যে,আজ মানুষ বিয়ে করে থাকে ঠিকই, কিন্তু এর ভেতর থাকেনা কুরআন হাদিসের বর্ণিত বারাকাত ।থাকেনা সংসারে প্রশান্তি।

নিম্নে বিয়ে বিষয়ক কিছু প্রচলিত প্রথা তুলে ধরলাম যা একজন আদর্শ মুসলমান এর জন্য পরিহার করা খুবই জরুরি। ১. ঋণ নিয়ে হলেও লোক দেখানোর জন্য প্রচুর টাকা খরচ করা। ২.বেপর্দার সাথে হাজারো গুনাহে লিপ্ত হয়ে প্যান্ডেল করে অনুষ্ঠান করা। ৩.বিয়েতে দাওয়াত খেতে আসলে টাকা দেওয়া।

৪. গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা। ৫. বর-কনেকে একসাথে বসিয়ে গোসল করানো। ৬.বর-কনে কে বসিয়ে গ্রামের মহিলাদের দ্বারা গান গাওয়ানো। ৭. নাচ-গান এর আয়োজন করা। ৮. বউ-জামাইকে একসাথে বসিয়ে দুধ ভাত খাওয়ানো। ৯.কনের কপড়ে গিট্টু দেওয়া। ১০. বিয়ের গেইট করে বর পক্ষ হতে থেকে টাকা আদায় করা।

১১. দুলাভাই শালিকে কোলে নেওয়া। ১২.জামাইয়ের হাত ধুয়ে টাকা নেওয়া। ১৩. লোক দেখানোর জন্য মহরের টাকা সামর্থ্যের ঊর্ধ্বে ধার্য্য করা। ১৪. বিভিন্ন মৌসুমে মৌসুমি ফল দেওয়া। ১৫. কোরবানির সময় মেয়ে পক্ষ থেকে ছেলে পক্ষ কে গরু দেওয়া। ১৬. সন্তান হলে মেয়ের পরিবার পক্ষ থেকে আকিকার জন্য গরু দেওয়া। ১৭. দেবর ভাবিকে ঘরে তোলা।

হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে, আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওই বিয়ে সবচেয়ে বেশি বরকত হয়,যেই বিয়েতে ব্যয় বা খরচ কম হয় (বায়হাকি) পরিশেষে বলি, এরকম হাজারো প্রথা আমাদের সমাজে চলমান যা পরিহার করা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ডিভোর্স এর সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে।

তাই আসুন আমরা সবাই একসাথে সমাজের প্রচলিত এসব কু-প্রথা বর্জন করি।কুরআন-সুন্নাহের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।দাম্পত্য জীবন সুখীময় করতে কুরআন-সুন্নাহের দিক-নির্দেশনা মেনে চলি। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুক এবং সাথে সাথে তা আমল করারও তৌফিক দান করুক আমিন।

লেখক: কলামিস্ট, গবেষক, মোহাদ্দেস, দারুলউলুম মোহাম্মদ পুর কওমি মাদ্রাসা। চাটমোহর, পাবনা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ