বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনার টিকা: বিজ্ঞ আলেমদের মতামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

করোনার টিকা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে দেশের মানুষের মনে। ভীতিও কাজ করছে অনেকের মাঝে। কেউ কেউ টিকা নেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন, বিপক্ষেও আছেন অনেকে। সত্যিকারার্থে করোনার টিকায় কোনো সমস্যা আছে কী? অথবা টিকা নিলে শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে? বিজ্ঞ আলেমরা জনগণকে টিকা নিতে উৎসাহিত করে বলছেন, করোনার টিকা যারা অনুমোদন দিয়েছে, তারা জেনে শুনে ও গবেষণা করে করোনার টিকা অনুমোদন করেছেন। তারা বিজ্ঞ ডাক্তার। তাই সব ভয় কাটিয়ে টিকা নিতে পারে জনগণ। করোনার টিকা গ্রহণে শরিয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? এ বিষয়ে দেশে প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ


দেশের বিজ্ঞ আলেম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন এ বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিনে কী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে যদি হারাম কোনো কিছু ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে এর ব্যবহারে আলেমদের ফতোয়া লাগবে। কেননা চিকিৎসার ক্ষেত্রে হালাল জিনিস পাওয়া না গেলে হারাম জিনিসের অনুমোদন দেয় শরিয়ত। আর যে কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে শরীয়ত কখনো নিষেধ করে না। বরং রোগ হলে চিকিৎসা নেয়া আল্লাহর রাসূল সা. এর সুন্নাত।

সুতরাং করোনার প্রতিষেধক হিসেবে আবিস্কৃত করোনার টিকা নেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। তাই দেশের জনগণ নির্ভয়ে টিকা নিতে পারেন। কেননা ভ্যাকসিন যারা তৈরি করেছেন তারা অনেক গবেষণা ও রিসার্চ করার পরেই ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়েছেন। করোনার প্রতিষেধক হিসেবেই ডাক্তাররা এটাকে অনুমোদন দিয়েছেন।

ইসলামেও রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। সুতরাং সাধারণ জনতার ছড়ানো গুজবে কান না দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়াটাই জরুরি বলে মনে করছি। আর ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে এটা কোন জায়গার ভ্যকসিন সেদিকে তাকানোর প্রয়োজনবোধ মনে করছি না।

কথা বলেছিলাম মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের সঙ্গেও। তিনি বলেন, করোনার প্রতিষেধক হিসেবে বিজ্ঞানীগণ অনেক রিসার্চ ও গবেষণা করে ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছেন। শরীয়তের দিক থেকে বলা আছে, আল্লাহ রোগ দিয়েছেন আল্লাহই ভালো করবেন। এ আকিদা পোষণ করে যদি কেউ পথ্য বা ঔষধ গ্রহণ করে তাহলে এটাই আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত। রাসূল সা. বলেছেন, ‘প্রত্যেক রোগের শেফা রয়েছে।’ মানুষ হয়তো গবেষণা করে সে রোগের ঔষধ বের করতে পারে অথবা পারে না।

এখন ডাক্তাররা গবেষণা করে যে টিকা আবিস্কার করেছেন সে বিষয়ে আমি বলবো, অন্তরে এ বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহই রোগ ভালো করবেন। তবে ঔষধ উসিলা হিসেবে সেবন করার ক্ষেত্রে ইসলামে কোন বিধিনিধেষ নেই।

কথা বলেছি বিশিষ্ট ইসলামি দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহর সঙ্গে। তিনিও করোনার টিকা নিতে উৎসাহ দিয়েছেন জনগণকে। তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো রোগ হওয়ার পূর্ব থেকে সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সতর্কতা হিসেবে যেটিকে আমরা বর্তমানে ভ্যাকসিন বা টিকা বলছি এটি ইসলামে সম্পূর্ণ অনুমোদিত একটি বিষয়। আমাদের নবী করীম সা. বলেছেন, কেউ যদি সকালবেলা ৭ টি আজওয়া খেজুর খায় তাহলে তাকে কোনো রোগ স্পর্শ করবে না। এই যে রোগ হওয়ার আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা-এটি এ হাদিস থেকে প্রমাণিত। বিধায় টিকা কিংবা ভ্যাকসিন নেয়া তাওয়াক্কুল বিরোধী কোনো কাজ নয়। বরং এটা ইসলামের শিক্ষার মধ্যে পড়ে। ইসলামের শিক্ষা থেকে কিংবা রাসূলে করীম সা. এর হাদিস থেকে অনুমোদিত হিসেবে বুঝা যায়।

এরপর বর্তমানে কোভিড-১৯ এর যে ভ্যাকসিন বাজারে এসেছে এটিতে শুকরের জেলেটিন থাকতে পারে এমন বিষয় ধারণা করা হচ্ছে। হতে পারে জেলেটিন আছে কিংবা নেই। যেটাই থাকুক না কেনো শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি কোনো রোগের ঔষধ বা প্রতিষেধক হালাল পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা করা জায়েজ নেই। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘কোনো রোগ এমন নেই, যার প্রতিষেধক বা ঔষধ সৃষ্টি করেননি। তোমরা হারাম বস্তু দ্বারা বানানো ঔষধ বা প্রতিষেধক গ্রহণ করবে না।’

তবে যদি কোনো রোগের হালাল কোনো প্রতিষেধক বা ঔষধ পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে হারাম প্রতিষেধক বা ঔষধ গ্রহণ করা মানুষের জন্য জায়েজ রয়েছে। এটাই হচ্ছে সারাবিশ্বের ইসলামী স্কলারদের মত। আর জনমনে যে বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক কাজ করছে ভ্যাকসিন বিষয়ে এটা দূর করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বাকি ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে এটা সম্পূর্ণ জায়েজ। এর ব্যবহারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

সবশেষে কথা বলেছিলাম, মসজিদে আবু হুরায়রা নিউইয়র্ক-এর ইমাম মুফতি হাফেজ মোহাম্মদ ফায়েকুদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। মানুষ ও মানুষের জীবন ঘনিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদির সুন্দর সমাধান রয়েছে এ জীবন বিধানে। এ জীবন বিধান মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সাবলীল করার জন্য। তাইতো ইসলামের বিভিন্ন ফরজ বিধি-বিধান যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তি সঠিকভাবে পালন করতে না পারে, তখন তার জন্য ভিন্ন একটি পদ্ধতি বলে দেয়া হয়। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো জোরাজোরি করা হয় না।

এখন যদি আমি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের কথায় আসি, করোনা মহামারীর কারণে পৃথিবী এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, মানুষ এ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য হাহাকার করছে। জীবনের নিভু নিভু আলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাচ্ছে। এটা জীবনের কোন বিনোদনের বিষয়ের মত নয়; যে আনন্দ বিনোদনের জন্য এটা গ্রহণ করা হচ্ছে। এখানে বাঁচা-মরার প্রশ্ন। আর জীবন রক্ষা করা ইসলামে ফরজ করা হয়েছে। তাই জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ব্যবহার একটি ভিন্ন বিষয়। শরীয়তের একটি স্বতঃসিদ্ধ উসুল আছে, ‘প্রয়োজন কখনো কখনো নিষিদ্ধ কোন কিছুকে সাময়িক সময়ের জন্য বৈধতা প্রদান করে।’ তাই এই উসুলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন ব্যবহারে ইসলামের কোন বাধা নেই। যদিও এতে হারাম কিছু থাকে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ