শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


নামাজে দাড়ালেই মনোযোগ চলে যায়? বৈজ্ঞানিক সমাধান জানতে পড়ুন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: নামাজে দাঁড়ালেই মনোযোগ থাকে না। এমন অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য মানুষের। ‘হুজুর! নামাজে দাঁড়ালেই শয়তান আমাদের ধোঁক দেয়। কিংবা মনোযোগ চলে যায় অন্যদিকে। এখন কিভাবে মনোযোগ রক্ষা করতে পারি?’ এমন প্রশ্ন শোনেন প্রায় অনেক উলামায়ে কেরাম। সেক্ষেত্রে কিভাবে মনোযোগ রক্ষা করতে পারি সে বিষয়টি জানা দরকার আমাদের সবার। আজ এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক আলোকে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত নামাজ। নামাজকে বলা হয় মোমিনের মিরাজ। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে কথোপকথন হয়ে থাকে। নামাজ মানুষকে যাবতীয় পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে। নামাজের অসংখ্য ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট না হলেও নামাজে দাঁড়ালেই নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এটি শয়তানের কাজ। নামাজের সময় হলে যেমন অন্য কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়, তেমনি নামাজে বারবার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই, কিন্তু নামাজে কী পড়ছি, রুকু-সেজদা ঠিক মতো হচ্ছে কি না সেসব সম্পর্কে খুব কমই খেয়াল রাখি। নামাজ তো কেবল ওঠা-বসার নাম নয়, নামাজে আত্মার সংযোগ থাকতে হয়। সে জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা। তাই নামাজকে কেন্দ্র করে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের প্রস্তুতি হতে পারে।

মানসিক প্রস্তুতি
সারাদিনের কর্মপরিকল্পনা নামাজকে কেন্দ্র করে তৈরি করুন। অর্থাৎ দিনের কাজ-কর্মের ফাঁকে ফাঁকে নামাজকে না ঢুকিয়ে আগে থেকেই প্ল্যান করে নিন যেন নামাজের সময়সূচিকে ঘিরে কাজকর্ম করতে পারেন।নামাজের সময় সূচি মেনে চলুন। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়ে ফেলুন। সামান্য কারণে নামাজ পড়তে দেরি করবেন না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করুন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু দাও’। (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৩)। এর দ্বারা জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে সব অবসাদ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।নামাজে কোন কোন সুরা পড়বেন তা নামাজে দাঁড়ানোর আগেই ঠিক করে নিন।

শারীরিক প্রস্তুতি
নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া প্রভৃতি জৈবিক কাজ সেরে নিন। পরিচ্ছন্ন অবস্থায় নামাজ আদায় করুন। সে জন্য সঠিকভাবে অজু বা গোসল সম্পন্ন করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় শান্ত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করুন। মনসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কিছু সামনে রাখবেন না।

নামাজ অবস্থায় করণীয়
নামাজে তাড়াহুড়া করবেন না। মনে রাখবেন আপনি বিশ্বজগতের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান। অতএব ধীর-স্থিরভাবে নামাজ সম্পন্ন করুন। নামাজের প্রতিটি ধাপ যেমন রুকু, সেজদা সঠিকভাবে আদায় করুন। নামাজে আপনার মস্তক অবনত রাখুন এবং দৃষ্টিকে সেজদার স্থানের দিকে নিবন্ধ রাখুন।

চেষ্টা করুন নামাজে কী আয়াত পড়ছেন তা অনুধাবন করতে। কারণ আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে তা মনসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সে জন্য কিছু বহুল পঠিত সুরা এবং দোয়ার বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে নিন। নামাজে মনসংযোগের জন্য এটি অনেক গুরুত্ব রাখে।

নামাজ পড়ার সময় মাথায় রাখুন হয়তো বা এ নামাজই আপনার শেষ নামাজ। অতএব জীবনের শেষ নামাজ কি মনোযোগের সঙ্গে পড়তে চাইবেন না? নামাজের মধ্যে মনোযোগ ছুটে যেতে চাইলে কল্পনা করুন যে আপনি পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার নিচে জাহান্নামের ভয়ানক আগুন, সামনে জান্নাত আর ওপরে মহান আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। কল্পনা করুন জান কবজ করার জন্য আপনার পিছনে মৃত্যুদূত হজরত আজরাইল (আ.) দাঁড়িয়ে আছেন, এ অবস্থায় কি মনোযোগ ছুটে যাওয়া সম্ভব? সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনে করতে হবে আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গেই কথা বলছি, তবেই নামাজে আসবে মনোযোগ ও একাগ্রতা।

উল্লেখ্য, উত্তমভাবে ওজু করার ফলে মানুষ অনেক গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কারণ হক আদায় করে ওজু করলে হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত দ্বারা করা গোনাহ পানির সঙ্গে চলে যায়। এমনিভাবে প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সঙ্গে সে অঙ্গের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোনাহও ধুয়ে মুছে ওজুকারী ব্যক্তি পাক-সাফ হয়ে যায়। আর তাতে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায়ে সুন্দর ও উত্তমভাবে ধীরস্থিরতার সঙ্গে ওজু করার তাওফিক দান করুন। নামাজে মনোযোগী হয়ে শুধু মহান আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ