শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


নারীশিক্ষার অনন্য বাতায়ন ‘বালিকা মাদরাসা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যাকওয়ানুল হক চৌধুরী: যেখানে সুন্দর সুশৃঙ্খল মনোহর নিরাপদ পরিবেশে সমাজের সর্বস্থরের মেয়েরা ইসলামী জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায়। সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগ সচেতন আলেম,কারী,মুহাদ্দিস,লেখক তৈরি হয় নারীদের মধ্য থেকেও। সেই সঙ্গে প্রাথমিক,মৌলিক,সাধারণ সব ধরণের শিক্ষাটাও অর্জন হয়ে যায়। সময়ের আহবানে আরবি, বাংলা, উর্দু, ইংরেজি, গণিতসহ বেশকিছু অধ্যায় সঙ্গে নিয়েই সামনে বাড়তে থাকে।

এক সময় দেশের আলেম ঘরের মেয়েদেরও দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের সু-ব্যবস্থা ছিল না। তাই পর্দার বয়স পর্যন্ত স্কুলে পড়তে বা পড়াতে বাধ্য ছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডির পেড়িয়ে আর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হত না বিভিন্ন কারণে। কেউ আবার স্কুলে না দিয়ে সন্তানদেরকে নিজ ঘরেই প্রয়োজনীয় সুরা-ক্বেরাত, মাসআলা-মাসায়েল শিখিয়ে ক্ষান্ত হতেন। শুধু আলেম পরিবারগুলোই নয়, এ সমস্যার ভুক্তভোগী ছিল অসংখ্য রক্ষণশীল দ্বীনদার পরিবারের মেয়েরাও, নিরুপায় উৎকন্ঠিত ছিলেন অভভাবকরা।

তখনকার পুরুষ মাদরাসার পাঠদান পদ্ধতি বর্তমান সময়ের মত ছিল না। বরং সে সকল তৃষিত উৎসুক প্রাণ, যাদের ইলম তলবের আগ্রহ জাগত, শুধু তারাই নিজের পছন্দসই বরেণ্য আলেম,বুযুর্গ,পীর-মাশায়েখদের দরবারে হাজির হতেন। সে ক্ষেত্রে অজানা অচেনা সংযোগ-সম্পর্কহীন অনুকূল,প্রতিকূল প্রান্ত থেকে প্রান্ত কখনো পায়দলে কখনো জাহাজ চড়ে মাড়িয়ে যেতে হত। কিন্তু মহিলাদের জন্য ছিল না এমন কোন সুযোগ। সামর্থ্য হত না শত শত মাইল পেড়িয়ে যাওয়ার। অনেক পুরুষের জন্যেও তা ছিল সাধ্যাতীত। নিজ এলাকাতেই যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকত, তাই গ্রহণ করতে হত, নয়তো নিজের বাপ-ভাইয়ের দ্বারা নামাজ কালাম শিখেই দিন কাৎ হত। সংসারের চিন্তা করতে হত।

সময়ের তালে তালে পুরুষের শিক্ষার ধরণটাও পরিবর্তন শুরু হয়। পুরনো ভাবধানায়, নব রূপে, নব আঙ্গিকে, নবীন সুরে,ভিন্ন প্লাটফর্মে ব্যক্তি বা সংগঠন কেন্দ্রীক চার দেয়ালের ভেতরে নির্দৃষ্ট জায়গায় স্থায়ীভাবে শুরু হয় পুরুষদের শিক্ষাব্যবস্থা মহান এ আয়োজন। শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন সময়ের শ্রেষ্ঠ, প্রাজ্ঞ,বিদ্ধান লোকেরা। এমন জ্ঞানের মার্কাজকে কেন্দ্র করে দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে থাকে। নব উদ্ভাবিত এ ধারা সর্ব মহলের কাছে মনঃপূত হয়। আহরণীদের সুবিধার্থে আবাসিক-অনাবাসিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নবরূপী ধারায় শুরু হয় নববী কানন মাদরাসাগুলোর দুর্দান্ত পথ চলা। সেই অতিত থেকে বর্তমানেও চলছে সে ধারায়।

সমাজের বড় একটি অংশ নারী। নারী যদি হয় ভ্রষ্ট, তাহলে খুটে খুটে পরিবার থেকে সমাজ ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়, হয় ধ্বংস-নোংরা। নারী যদি হয় জ্ঞানী, শিষ্ঠ-ভদ্র মার্জিত রুচির, তাহলে এর অসাধারণ শক্তি-প্রভাব ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত ছেয়ে যায়। একটা পুরুষ সমাজে ধাপট দেখিয়ে চলে, হুমকি-ধামকি দেয়, লোকেরা ভয়, তার কথা মান্য করে, তার সাথে উচু আওয়াজে কথা বলে না, অবনত চোখে তার সমানে দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু এই সাহসী, বীর, চোখরাঙ্গা পুরুষ যখন ঘরে যায়, তখন ঘরের মানুষটার কাছে অযাচিতেই দুর্বল হয়ে যায়, সেখানে তার ক্ষমতা চলে না, অনেকক্ষেত্রে ঘরের রাণীর সিদ্ধান্তই চূরান্ত বলে গৃহীত হয়। সুযোগ পেলে স্ত্রী উচ্চ আওয়াজেও কথা বলতে দ্বীধা করে না, তখনো সে ভয়ঙ্কর স্বামীকেও মুখটিপে হাসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। মোটকথা, একটা রাজ্ব শাসন করে রাজা, আর রাজাকে শাসায় রাণী। এখন এই রাণীটাই যদি হয় দ্বীনদার, পর্দানশীন, ক্বোরান-হাদিসে জ্ঞানী, ধারক বাহক। তাহলে পুরুষনামী সমাজপতির মন-মেজাজ হবে কোরআনী। সমাজ হবে কোরআনী,রাষ্ট্র হবে কোরআনী, দেশ হবে কোরআনী, পৃথিবী হবে কোরআনী।

তা ছাড়া নারীদের কথা কোমল, যাদুময়ী প্রভাব। যে কাউকে সহজেই গলিয়ে দেয়। মুখ চালু, বেশি কথা বলার যোগ্যতা দিয়েই আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন।

এ সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই গুণীজনের তীক্ষ্ণ গবেষণায় সতন্ত্র ব্যবস্থাপনায় সচেতন নারী গড়ার লক্ষে নিরাপদ মহিলা মাদরাসার প্রচলন ঘটল। শুরু হয় নতুন মিছিল,নতুন বিপ্লব, নতুন নারী জাগরণ, নারীরা খোঁজে পেল নতুন প্রেরণা। এ ব্যবস্থাপনা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। সবাই কাছে আসতে থাকে, মহান উদ্যোগকে ভালবাসতে থাকে। বাড়তে থাকে এর সংখ্যা, একটি দুটি করে এখন বাংলাদেশের এমন কোন ইউনিয়ন বা অঞ্চল পাওয়াই হয়তো মুশকিল, যেখানে ছোট বা বড় কোন মহিলা মাদরাসা নাই, গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত তার বিস্তৃতি রয়েছে, শহরগুলোতে এর প্রভাব গ্রামের চেয়ে আরও বেশী। এর সংখ্যা ও বিস্তৃতি দিনদিন শুধু বাড়ছেই বাড়ছে। এর পিছনে অন্যতম কারণ হল- নারী শিক্ষার এ দ্বীনি কার্যক্রমটি সমাজের সর্বমহলের মানুষের কাছে ব্যপক গ্রহণযোগ্যতা। এতো এতো মহিলা মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্রী তো শুধু আলেম পরিবার থেকে নয়, সব ধরণের পরিবার থেকেই আসছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসছে।

নারী মুক্তি বা নারী স্বাধীনতার অন্তরায় হিসেবে যখন এক শ্রেণীর ষড়যন্ত্রকারীরা ইসলামকেই দায়ী করে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত, ঠিক তখন দেশে ও সমাজে নারীদের ইসলামী শিক্ষার এ অভাবনীয় জোয়ার ও জনপ্রিয়তা সেই সব ষড়যন্ত্রকারীদের গালে সুস্পষ্ট চপেটাঘাত নয় কি?

সেই ঘুমন্ত হৃদয়গুলো জাগ্রত হোক। ভাবুক নিরপেক্ষভাবে মন উজার করে। ওরা জানুক বুঝুক এখানে চর্চা করা হয় প্রকৃত শিক্ষা,চরিত্র এবং পবিত্রতার। লজ্জিত হোক তাদের মন্দ ধারণা।

কেয়ামাত অবধি এ পুষ্পালয়গুলো অব্যাহত থাকুন। যাদের আইডল হল আয়শার দরসগাহ। এগুলো সেটারই প্রতিবিম্ব। যে দরসগার প্রধান শিক্ষক ছিলেন সাদিকুল মাসদুক সাঃ, পরবর্তীতে আয়শা রাযিঃ। যা কায়েম হত আয়শার নিজ কামরায়। শিক্ষার্থী হিসেবে ছিলেন সে সময়ের শিশু থেকে নিয়ে বৃদ্ধা মহিলারা।

সেটারই প্রতিচ্ছায়া বর্তমানের এই পুষ্পকেন্দ্র মহিলা মাদরাসাগুলো খোদার মদদে শিকড় থেকে সফলতার শিখরে পৌঁছুক।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ