শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মুসা আল হাফিজের ‘দুঃসময়ের বধ্যভূমিতে উত্থানের চাষাবাদ’ পাঠোন্মোচন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহিল বাকি।।

গিয়েছিলাম শুক্রবার মাহাদুল ফিকরি ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়ার কম্পারেটিভ রিলিজিওন কোর্সের ক্লাসে। ক্লাস করিয়েছেন ওস্তাদ মুসা আল হাফিজ। তিনি যেন ক্লাস করান না, প্রতিটি ছাত্রের মস্তিষ্কে গুঞ্জন তুলে দেন চেতনার পংক্তিমালার।

এটা ছিল বাইরের ছাত্রদের জন্য তার পক্ষ থেকে ঢাকায় দ্বিতীয় কোর্স। প্রথম কোর্স হয়েছিল গত ২৫ অক্টোবর ২০১৯ এ। এবারের মতোই তিন মাসব্যাপী। তখনো তিনি চিরাচরিত গতানুগতিক ঐতিহ্যবাহী ধারায় অভ্যস্ত ছাত্রদের মস্তিষ্কে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন উত্থানের স্বপ্নময় বীজ। বাতলে দিয়েছিলেন ঐতিহ্যের জারিত রসে ভবিষ্যতকে উজ্জল সিক্ত করবার পথ ও পাথেয়। সেই মূল্যবান মুখ নিঃসৃত কথামালা অনুলিখনের মাধ্যমে প্রকাশের আলো দেখেছে ‘দুঃসময়ের বধ্যভূমিতে উত্থানের চাষাবাদ’।

ওস্তাদ সাধারণত নিজের ব‌ই পড়ার সাজেস্ট করেন না। কিন্তু বুভুক্ষ মেধার চেতনার খোরাকের জন্য সকলের হাতে তুলে দিলেন এই বই এবং অধ্যয়ন করতে বললেন।

এই গ্রন্থে তিনি তুলে ধরেছেন সোনালী ঐতিহ্যের স্তুতিগাঁথা। ক্রন্দন করেছেন বর্তমানে মুসলমানদের জাতিগত অভ্যন্তরীণ পচন এবং বাহ্যিক পতনের দরুন। সাথে সাথে দেখিয়ে দিয়েছেন ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতায় আলোকিত হয়ে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করার আর্কিটেকচার।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দীন হিসেবে এর সামগ্রিক ক্ষেত্রগুলোতে উদ্যমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ইসলাম একটি প্রাণশক্তির নাম। এটা যখন কোথাও আসে, সমগ্র জীবনকে জাগ্রত করে, প্রদীপ্ত করে, ঊর্ধ্বগামী করে, শেকড়যুক্ত করে এবং বিকশিত করে। জীবনের যা শক্তি, যা সৌন্দর্য, যা আবেদন—সবকিছুই পেখম মেলে একই সাথে। ... তো আমাদের অনেকেই মনে করি যে, কতিপয় দায়ী তৈরি হয়ে গেলে আমাদের সংকটের সমাধান হয়ে যাবে। কতিপয় আলেম যদি তৈরি হয়ে যান, সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে ইসলামের দাওয়াতের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, দ্বীনি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ইতিহাস যদি দেখি, তাহলে দেখবো সবগুলো শাখায় একসাথে কাজ করা হয়েছে। এটা একটা মৌলিক পয়েন্ট।” (২০ পৃ.)

এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন এসব প্রশ্নের উত্তর “প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি জাগরণ বলতে কী বুঝায়? দৃষ্টিভঙ্গির মেরামত করতে হবে এবং তা কিভাবে করতে হবে? আপনাদের লক্ষ্য কী এবং কেমন হবে? কিভাবে কাজ করতে হবে? তার দিকনির্দেশনা কেমন? যুগ প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্বে কিভাবে আত্মনিবেদন করতে হয়? আমাদের কাজের পরিসরগুলো কী কী হওয়া উচিত? কোথায় আবেগের ব্যবহার করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে? এবং সমাজ বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা কিভাবে প্রণয়ন করতে হবে? ভবিষ্যতের সৈনিক তৈরির জন্য কিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে? পারিবারিক ক্ষেত্রের ভূমিকা কেমন হবে? নিজেকে কিভাবে উৎসর্গ করতে হবে?” (৪৩ পৃ.)

মুসলমানদের পতন দেখে তিনি ইসলামের প্রতি আস্থা হারাননি। বরং পতন থেকে উত্থানের যাত্রা ত্বরান্বিত করতে ফিরে যেতে বলেছেন ইসলামের দিকেই, “ইসলাম একটি জীবন্ত বিপ্লবের নাম। ইসলাম এমন এক প্রাণশক্তি, কোনোকালেই যা দুর্বল হয় না। দুর্বল হয় মুসলিমরা। পতন হয় তাদের। জয়-পরাজয় তাদের হয়, তাদের পরাজয় মানেই ইসলামের পরাজয় নয়। ইসলাম চিরকালই বিজয়ী। চিরকালই শ্রেষ্ঠ, মহীয়ান।” (৪৭ পৃ.)

কিভাবে আমরা আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবো, সেটার কোর‌আনিক সমাধানের দিকে নিয়ে যান তিনি আমাদের, “মুসলিমরা হয়তো আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় পরাজিত। কিন্তু এ পরাজয়কে বিজয়ে রূপান্তরিত করার পরিপূর্ণ সামর্থ্য রয়েছে ইসলামের। ইসলাম আবারো মহিমান্বিত বিজয় মানবতাকে উপহার দিতে চায়। কিন্তু ইসলামের শক্তি ও সৌন্দর্যকে ধারণে অপ্রস্তুত মুসলিমদের মাধ্যমে সেটা হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা ইসলাম রাখেনি। ঈমান ও আমলে সালেহা এমন দুই শর্ত, যা জীবনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছুকে ঘিরে আবর্তিত, সেই শর্ত পূরণের মধ্য দিয়ে মুসলিমরা আজ‌ই মুসলিম হই, ইসলাম আবারও আমাদের মধ্য দিয়ে তার শক্তি প্রদর্শন করবে। ইনশাআল্লাহ!” (৬৪ পৃ.)

এছাড়াও পুরো বই’র মধ্যে ছড়িয়ে আছে কবিতা দর্শন রুহানিয়াত ইতিহাস-ঐতিহ্য ধর্ম বুদ্ধিবৃত্তি রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এখানে যেমন উঠে এসেছে ইমাম রাজি, গাজালির কথা, বাদ পড়েনি প্রাচ্যবিদ টমাস কার্লাইল, আধুনিক কবি অক্টাভিউ পাজের কথাও। বইটা পড়লে মনে হয় না কোন বক্তৃতার অনুলিখন, মনে হয় স্বতন্ত্র কোন গবেষণামূলক বই পাঠ করছি। আল্লাহ এই বইকে কবুল করুন এবং পৌঁছে দিন স্বপ্নাবিষ্ট সকল তরুণের হাতে।

এক নজরে বই-

বই- দুঃসময়ের বধ্যভূমিতে উত্থানের চাষাবাদ
লেখক- মুসা আল হাফিজ
প্রকাশনী- আমন্ত্রণ প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য-২০০
রকমারি মূল্য- ১২০

ঘরে বসে ৪০% ছাড়ে রকমারি থেকে কবি মুসা আল হাফিজের এ বইটি পেতে ক্লিক করুন। এছাড়াও থাকছে ক্যাশঅন ডেলিভারি ও ৭ দিন পর্যন্ত হ্যাপি রিটার্নের সুযোগ।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ