শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে একুশের ভাবনা ও প্রত্যাশা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যে কেটে গেলে ২০২০ সাল। এটা বিশ না বিষ ভাববার বিষয়। এইভাবে একুশও কেটে যাবে আমাদের মাঝ থেকে। তাই একুশ নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর ভাবনা নিয়ে সাজিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ এর শিক্ষার্থী মুহাম্মদ নাজমুচ্ছাকিব ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এর শিক্ষার্থী রুখসানা খাতুন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাহিদ আহসান বলেন, করোনা প্রভাবিত একটি দুঃসহ বছর পার করে পা দিলাম ২০২১ এ। প্রত্যাশার প্রথম পর্বেই থাকবে করোনা মহামারী থেকে মুক্তি। আল্লাহর দরবারে অবরিত প্রার্থনা। অতিদ্রুত যেন বিশ্বজুড়ে করোনা ভ্যাকসিন চলে আসে।দ্বিতীয়ত করোনা সংলগ্নতায় যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠাটা সময়ের সব থেকে বড় আরজি হিসাবে পরিগণিত। তাবৎ দুনিয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজ নীতির ধরণ শতভাগ পাল্টে গেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে যদি এই পাল্টে যাওয়া যদি সুখের থেকে কষ্টের বেশি হয় তাহলে তাহবে খুব দুঃখজনক। তাই পরবর্তী সময় যেন সুখের হয় সে দিকে খেয়াল্ল রাখা অতীব জরুরি। প্রত্যাশার কাতারে বয়ান দিতে গেলে এর সমাপ্তি হবে না।মানুষ যত পাইবে, তত চাইবে।

তবে আমি একজন বাংলাদেশি হিসাবে  তিনটি চাওয়া চাইব।বাংলার মুখের সুখ আর সমৃদ্ধির জন্য বাকি চাওয়াগুলা না হয় অন্য কেউ চাইবেন।

বাংলাদেশে গত একবছরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় সহস্রাধীক নারী।যার মধ্যে গণ-ধর্ষণ ছিলো ।ধর্ষণরোধে বড় নিয়ামক কঠোর আইন এবং দ্রুত তার বাস্তবায়ন। ধর্ষকের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ধর্ষণ বন্ধ আদৌ সম্ভব হবে না। নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সকল ধর্ষণের ঘটনার কঠিন শাস্তি বাস্তবায়ন এর দাবি জানাচ্ছি।

কেবল মাত্র ২০২০ এ বাংলাদেশ-ভারত সিমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি বিএসএফ এর গুলিতে নিহিত হয়েছে। গত দশকের সংখ্যা হিসাব করলে তা চার-শতাধিক হয়ে যাবে। ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম সিমান্ত হত্যা। অনতিবিলম্বে সিমান্ত হত্যা রোধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর কর্ম সূচি গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমান মাথাপিছু ঋণ ৭৯ হাজার টাকা। এর মূল কারণ উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বহিঃবিশ্ব থেকে ঋণ আনা, অসাধু শিল্পপতিদের অর্থ পাচার, এবং লাগামহীন দুর্নীতি। সদ্য সমাপ্ত হওয়া পদ্মা সেতুর বাজেট ছিল দশ হাজার কোটি টাকা। কাজ এখনো শেষ হয় নাই কিন্তু সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি ত্রিশ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে।আমাদের এ বিষয় মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে কোন ভাবেই দেশ অর্থনৈতিক হুমকির ভিতরে না পড়ে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল্লর, কুষ্টিয়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তালহা আকাশ বলেন, খাঁটি সোনা যেমন আগুনে পুড়ে পুড়ে আরো খাটি হয়।ঠিক তেমন ২০২০ সালটাকে আমরা আমাদের এই সুক্ষ জীবনকে সমৃদ্ধ করতে এবং বাকী জীবন চলার পথেয় হিসাবে নেওয়ার শিক্ষাই দেয়।

করোনা মহামারির ২০২০ সাল প্রথমেই আমাদেরক্র যে শিক্ষাটা দিয়েছে তা হচ্ছে প্রযুক্তির উপরে নির্ভরশীলতা।তাই সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রতি আমাদের আরো দক্ষতা বৃদ্ধি ও ইন্টারনেটের উচ্চগতি সহ সকলের ব্যাবহারের জন্য তা সহজলভ্য করার প্রত্যাশা করছি। অন্যায় ও পাপ কাজ মানুষের চেহারাকে কলুষিত করে। ঠিক তেমন দুর্নীতি একটি দেশের সার্বিক অবস্থাকে কলুষিত করে। করোনা সেটা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই দুর্নীতি নির্মুলের জন্য দেশের সকল ক্ষেত্রে সচ্ছ জবাব্দিহিতার খুটি দাড় করানো হবে এমনটাই প্রত্যাশা করি। ক্ষণস্থায়ী এ-জীবনে আমি নয় আমার হওয়ার শিক্ষা করনা আমাদের দিয়েছে।যা আমাদের প্রত্যেকের নিজ জীবনে ও চরিত্রে স্থাপন করা জরুরি।

আমি প্রত্যাশা করি খুব শিঘ্রই করোনা ভাক্সিন আবিষ্কার হবে।করোনার ধোয়াশা কাটিয়ে ২০২০ এর এই সকল শিক্ষা শুধু ২০২১ এ নয় বরং আমাদের প্রত্যাহিক জীবন থেকে শুরু করে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যাবহার করতে হবে।যদি সঠিক ও যথাযত ভাবে প্রয়োগ ক্করতে পারি তাহলে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবে রূপ নিবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বদরুল আলম সাঈফি বলেন, একুশ সংখ্যাটি আমাদের জীবনের একটি মহাকাল। কেননা কৈশর কাটিয়ে মানব সন্তান যুবতে পদার্পন করে এই সংখ্যা থেকেই। শুরু হয়েছে সেই একুশ সাল অর্থাৎ নব চেতনার এক সাল।সদ্যগত হওয়া বীস যেন শুরু হয়েছিল বিষ দিয়ে, আর বিষাচ্ছন্ন করে রেখেছিল গোটা বিশকে।করোণা নামক এ বৈশ্বিক মহাবিপদে দেখেছি তারুণ্যের এক উদ্ভাসিত এক আলোক উজ্জ্বলরূপ।হাতে হাত রেখে তরুণরা চেষ্টা করেছে এই মহামারীতে তার পাশে বাস করা মানুষটা যেন কোন বিপদের সম্মুখীন না হয়।ক্ষুধা পেটে থাকে না যেন কোন মানব সন্তান। তাই তো তরুণরা নিজ জীবনের ঝুকি নিয়ে চেষ্টা করেছে তার আয়ত্বের মানুষকে সুখে রাখার। আশাবাদী যে, একুশ আমাদের জন্য আর্শিবাদের মাধ্যমে নব-চেতনা নিয়ে হাজির হয়েছে।কেনণা আমি মনে করি বিশ ছিলো তরুণদের শ্বাসরুদ্ধকর প্রশিক্ষণের এক মহারূপ।আর সেটারই মৌলিক প্রতিফলন শুরু হয়েছে একুশে, তারা তাদের দায়িত্ববোধ থেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান বলেন, বিশের বিষ! কথাটি বললে ভুল কিছু বলা হবে না। এ বছর বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। ২০২০ এর প্রায় পুরো বছরটাই আমাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অন্য রকম পরিস্থিতির সংঙ্গে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ সব কিছুর ধারা পাল্টে দিয়েছে। রয়ে গেছে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

নতুন বছরের প্রত্যাশা অনেক। একুশের আগমনে সুস্থ হয়ে উঠুক পৃথিবী। করোনার বিষাক্ত ছোবল থেকে বেরিয়ে কাটিয়ে উঠুক সব অপূরণীয় ক্ষতি। নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ভাবে জীবনযাপন করুক সবাই। না পাওয়ার সব গ্লানি মুছে নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্য্যে,সৃষ্টি আর কল্যানে ভরে উঠুক। নতুন বছর সবাই সুস্থ এবং সুন্দর ভাবে শুরু করুক সেই প্রত্যাশা।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ফারহানা আমবেরীন লিওনা বলেন, যে প্রত্যয়ে প্রায় ৫০ বছর আগে আমাদের, "এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ স্বাধীনতা এসেছিলো,সে প্রত্যয়ে ফাটল ধরেছে। সে প্রত্যয় মনে ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রকিব মিশর বলেন, ২০২০ সালটা ছিল একটা ভয়াবহ স্বপ্নের মত। করোনা মহামারী অসংখ্য মানুষের জীবন কেঁড়ে নিয়েছে। কেঁড়ে নিয়েছে হাজারও শিশু, বৃদ্ধ, যুবকের প্রাণ। কেঁড়ে নিয়েছে অসংখ্য পরিবারের আনন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা বন্ধ ২০২০ এর মার্চ থেকে। এই একটা বছর সকল স্তরের মানুষের জন্য একটা ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল। আজ ২০২১ সালের প্রথমদিন, ইংরেজি নববর্ষ। নতুন বছরটা আশা করি সুন্দর ভাবে শুরু হবে, আশা করি সবার কাছে চলে যাবে জীবনঘাতি করোনার টিকা। গত বছরের যত দুঃখ এবং দুঃস্বপ্ন ছিল সব চলে যাবে, নতুন বছর নিয়ে আসবে নতুন স্বপ্ন এবং আনন্দ। পুরোনো সকল স্মৃতি ভুলে গিয়ে নতুনভাবে বাঁচার প্রত্যাশা আমাদের সবার।

-এটি


সম্পর্কিত খবর