শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


জীবনের পথ রাঙাতে নিজেকেই ‍উদ্যোগী হতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ আশরাফ হুসাইন।।

জীবন মানে সংগ্রাম, সাধনা। সাধনার পথে আছে দুঃখ, ব্যাথা। সেসব দুঃখকে উপহাস করে এগিয়ে যেতে হবে। হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাভ নেই। কারো দয়া পাওয়া যাবে হয়ত, সফলতার দেখা পাওয়া যাবে না। ফিলিপ সিডনী বলেছেন- জীবনের সকল পথ যদি রুদ্ধ হয়, আমি একটা তৈরি করে নিতে পারি- পুরুষের জন্য মুক্তির পথ আছেই।

অবিশ্বাসী, পরমুখাপেক্ষী, বিশ্বাসহীন মানুষের জন্য মুক্তির পথ নেই। আল্লাহর নামে সহিষ্ণু হয়ে পরিশ্রম করো, তুমি ছোট হবে না। না খেয়েও মরবে না। বরং মুক্তির পথ খুলে যাবে। সন্দেহ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষ মারা যায়।

সফলতার জন্য ভাগ্যের দিকে না তাকিয়ে, শক্তি-বুদ্ধি ব্যবহার করো। যে নিজের শক্তিকে মূল্যায়ন না করে অন্যের কাছে দয়া ভিক্ষা করে সে অপদার্থ। মানুষ কেন মানুষের কাছে ভিক্ষা করবে? আল্লাহ সবাইকে দু’টি হাত, দু’টি পা আর মুখের ভাষা দিয়েছেন।

কাজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি না হলে, আনন্দ অনুভব না করলে বিশেষ ফল হয় না। অনিচ্ছায় সারারাত পড়লে কোন লাভ হবে না। শারীরিক শক্তি দিয়ে কাজ করা হয়, তবে মন তাতে সায় দেয়া লাগে। মন সায় না দিলে সে কাজ বেশি দূর এগোয় না। পরিশ্রমের সঙ্গে কোন আশা পোষণ করা মন্দ নয়- আশায় মানুষ পর্বত লংঘন করে।

আল্লাহ কুরআনে কারীমে বলেছেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার নিস্কৃতির পথ করে দিবেন। ( সূরা তালাক:২) অন্য আয়াতে আল্লাহ এটাও বলেছেন, অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমা: ১০)

এই আয়াতে আল্লাহ রিজিক তালাশ করতে বলেছেন। ভাগ্যের উপর নিভর্র করে ঘরে বসে থাকতে বলেননি।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, পরকালীন জীবনে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যা দান করবেন আপনি তা অনুসন্ধান করুন। কিন্তু পার্থিব জীবনে আপনার ন্যায্য অংশের কথা ভুলে যাবেন না। (সূরা কসাস:৭৭)

নিজ হাতে কামাই-রোজগার ও হালাল উপার্জনের নির্দেশ কেবল সাধারণ মুসলমানদেরকে দেয়া হয়নি। বরং যুগে যুগে সব নবী-রাসূলরা এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন। পবিত্র কোরআনে এব্যাপারে এরশাদ করেন, হে রাসূলগণ !আপনারা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করুন এবং নেক কাজ করুন। (সূরা মুমিনুন: ৫১)

ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুগে যুগে এ নির্দেশনা মোতাবেক নবী-রাসূলগণ নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করেছেন। হযরত আদম আ. কৃষিকাজ ও তাঁতের কাজ করেছেন। হযরত ঈদ্রিস আ. দর্জির কাজ করেছেন। হযরত হুদ ও ছালেহ আ. ব্যবসায়ী ছিলেন। হযরত দাউদ আ. নিজ হস্তে উদরান্নের সংস্থান করতেন। হযরত ইব্রাহিম ও লুত আ. কৃষি পেশা গ্রহণ করেছিলেন। হযরত শোয়াইব আ. পশু বিচরণ করেছেন এবং তার দুধ বিক্রি করতেন। হযরত দাউদ আ. লোহা দিয়ে নানা ধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতেন। প্রিয় মহানবী মোহাম্মদ সা. বকরি পালন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেছিলেন।

মহানবী সা. এর পরিবার ক্ষুধার তাড়নায় যখন ব্যাকুল, তখনও তিনি বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করতে যাননি। কাউকে নিজের অভাবে কথাও বলেননি। বরং শিক্ষা দিয়েছেন কাজ করার।

ইসলামী শরীয়তে নিজ হাতে উপার্জিত খাবার গ্রহণে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাবার থেকে উত্তম কোন খাবার নেই। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন। (বুখারী হাদীস নং: ২০৭২)

মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে হালাল উপায়ে অর্থোপার্জনের যত পথ-পন্থা আছে রাসূল সা. সেগুলো অবলম্বনে উৎসাহিত করেছেন। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, মুমিন যখন গাছ লাগায় অথবা কৃষিজ ফসল ফলায়, অতঃপর তা থেকে কোন পাখি, মানুষ বা পশু আহার করে সেটি তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। (বুখারী হাদীস নং:২৩২০)

ব্যবসার ক্ষেত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সত্যবাদিতা নিয়ে যারা ব্যবসা পরিচালনা করবে তারা কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক শহীদদের সঙ্গে উঠবে। (তিরমিজ হাদিস নং:১২০৯) হযরত আলী রা. বলেছেন- আমার রাত কাটে এবাদতে আর দিন কাটে পরিশ্রমে।

তুর্কি সম্রাট সেলিম সারাদিন কাজ করতেন। রাত্রিতে অল্পই ঘুমাতেন। সারারাত্রি বসে তিনি পড়তেন। জীবনে কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে তার আনন্দ ছিল না। শিবনাথ শাস্ত্রী প্রত্যহ বিশ ঘন্টা করে পড়তেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ঘুমে পড়া নষ্ট হবে এই ভয়ে বালিশ মাথায় দিতেন না। মাইকেল অ্যাঞ্জেলা কাজ না করতে পারলে অস্থির হয়ে যেতেন। কোন কোন সময় দুপুর রাতে জেগে ওঠে তিনি কাজ শুরু করে দিতেন।

অর্থ পাবার লোভেই সকলে কাজ করে না। কাজ সবাই করতে হবে। সাহিত্য বিজ্ঞান এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করা দরকার। সম্রাট ষোড়শ লুই একটি বই উৎসর্গে সম্মানের লোভে স্পেনোজকে পেন্স দিতে চাইছিলেন।স্পেনোজ চশমার পাথর সাফ করে জীবিকা অর্জন করতে। তবুও সম্রাটের এই দান তিনি গ্রহণ করেননি- বইও উৎসর্গ করেননি। তিনি এত পড়তেন যে কোন সময় থাকে অনবরত দুই-তিনদিন ঘরের মধ্যে বসে থাকতে দেখা যেত। হাঙ্গেরির জনৈক গণিতজ্ঞ গ্রীষ্মকালের ঘন্টা এবং শীতকালে চার ঘন্টা মাত্র শুতেন। বেলি প্রতিদিন চৌদ্দ ঘণ্টা করে চল্লিশ বছর ধরে পরিশ্রম করেন।

যে জাতির মানুষ পরিশ্রম করে। যারা জ্ঞান-সাধনায় আনন্দ অনুভব করে, তারাই জগতের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। কর্তব্য জ্ঞানহীন, নিতিজ্ঞানশূন্য আলো সে মানুষের স্থান জগতে সকলের নিচেই হয়ে থাকে। তারা জগতে অবজ্ঞার ভার, অসম্মানের অগৌরব নিয়ে বেঁচে থাকে। জগতে ধন-সম্পদ জয় করতে হলে, জীবনের কল্যাণ লাভ করতে হলে, পরিশ্রম ও সাধনা চাই।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ