বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


উইঘুর মুসলমানদের প্রত্যেক জুমাবার জোর করে শুয়োর খাওয়ায় চীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর নারী সায়রাতুল সৌতবায়। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিয়ানজিয়ান প্রদেশে তথাকথিত পুনর্শিক্ষণ শিবির থেকে দুই বছর আগে ছাড়া পেয়েছেন। আটককালে তার বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতা, অপদস্ত-অপমানের দুঃস্বপ্ন এখনও তাড়া করে বেড়ায় দুই সন্তানের এ জননীকে। সৌতবায় পেশায় একজন চিকিৎসক, শিক্ষবিদ।

বর্তমানে সুইডেনে বসবাস করছেন তিনি। সম্প্রতি তার একটি বই প্রকাশ হয়েছে। যাতে তার অগ্নিপরীক্ষার বিস্তারিত উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে, কাছ থেকে দেখা নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণসহ নানাধরনের নৃশংসতার বর্ণনা।

সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে চালানো চীনা সরকারের নির্মমতা বিশেষভাবে উত্থাপন করেন তিনি। উঠে আসে ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হয় উইঘুর মুসলমানদের। সৌতবায় বলেন, প্রতি শুক্রবার আমাদের জোরপূর্বক শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হতো। তারা সচেতনভাবে মুসলমানদের কাছে অতি এ পবিত্র দিনটিকে বেছে নিয়েছে শুয়োরের মাংস খাওয়ানোর জন্য। যদি আপনি শুয়োরের মাংস প্রত্যাখ্যান করেন, আপনাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

‘এই কাজটি করা হতো আটক উইঘুররা যাতে মুসলমান হওয়ার কারণে অপমানবোধ করে, নিজেকে অপরাধী মনে করে। শুয়োরের মাংস খাওয়ার সময় আমাদের কতটা খারাপ লাগতো, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’ বলেন তিনি।

‘নিজেকে আমার কাছে অপরিচিত একজন মানুষ মনে হতো। চারপাশে ঘুটঘটে অন্ধকার থাকতো সবসময়। সত্যি বলছি, ভয়াবহ এ পরিস্থিতি আমি কখনো মেনে নিতে পারিনি।’

সৌতবায় এবং অন্য সাক্ষাতকার প্রদানকারীদের বর্ণনায় উঠে আসে জিনজিয়ানে ২০১৭ সাল থেকে আটক কেন্দ্র তৈরি, নজরদারিসহ নানারকম নির্মমতার মাধ্যমে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কিভাবে চীনা সরকার মুছে ফেলছে। যদিও এ নৃশংসতাকে উগ্রবাদবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে চীন।

তবে আল জাজিজার কাছে যেসব তথ্য প্রমাণ এসেছে এবং জার্মানি অ্যানথ্রোপোলজিস্ট এবং উইঘুর স্কলার অ্যাড্রিয়ান জেন্সের বক্তব্য অনুযায়ী বেইজিংয়ের কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনাও উইঘুরদেরকে তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে দূরে সরানোর পদক্ষেপের অংশ। জেন্সের বক্তব্য, নথিপত্র এবং চীনের রাষ্ট্রীয় অনুমোদিত নিবন্ধে উইঘুর মুসলমাদের অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মেলে। উইঘুরদের অভিযোগ, জিনজিয়ানে শুয়োরের খামার স্থাপন এবং বিস্তৃতকরণে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বেইজিং।

২০১৯ সালের নভেম্বরে জিনজিয়ানের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহরাত জাকির বলেন, স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটি শুয়োর উৎপাদনের বৃহত্তর কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। উইঘুররা বলছেন, এটি তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

মে মাসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধনের বরাতে জেন্স জানান, দক্ষিণাঞ্চলীয় কাশগরে একটি নতুন খামার করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যেখান থেকে প্রতিবছর ৪০ হাজার শুয়োর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তাদের।

চীনা ভাষার ওয়েবসাইট সিনা জানিয়েছে, কাশগরের কোনাক্সাহার কাউন্টি, বর্তমানে ওই কাউন্টির পরিবর্তিত নাম শুফু, সেখানে ওই প্রকল্পের জন্য ২৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা গ্রহণ করা হচ্ছে।

২৩ এপিল রমজানের প্রথমদিন শুয়োর উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। রমজান মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস। সে সময় কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে জানায়, রফতানির জন্য শুয়োরের খামার তৈরি করা হচ্ছে না। কাশগরে শুয়োর সরবরাহ নিশ্চিত করতেই খামার স্থাপন করা হচ্ছে।

কাশগর এবং এর আশপাশের বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশই মুসলমান। আল জাজিরাকে জেন্স বলেন, জিনজিয়ানের মানুষের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস চিরতরে মুছে ফেলার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে সরকার। উইঘুরদের ধর্মনিরপেক্ষ বানানো, তাদেরকে কমিউনিস্ট পার্টির শিক্ষা দেওয়া, তাদেরকে নাস্তিক বা অবিশ্বাসী বানাতে এ পরিকল্পানা। যোগ করেন জেন্স।

২০০৯ সালে আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকিতে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাঙ্গার পরই এ পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে চীন। তাদের এ নীতি, তিনটি কুফল মোকাবিলার জন্য বলেও দাবি করে তারা। যে তিনটি কুফল মোকাবিলার জন্য এ নীতি, বেইজিংয়ের দাবি অনুযায়ী সেগুলো হলো উগ্রবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ।

জিনজিয়ানে চীনের তৈরি আটক কেন্দ্র ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘ। যদিও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, এ সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। তবে এসব দাবি অস্বীকার করে আসছে বেইজিং। তারা বলছে, আটক কেন্দ্র নয়, এগুলো ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার। যেখানে উইঘুরদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হাতে কলমে দক্ষতা বাড়াতে নতুন নতুন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সৌতবায়ের মতো উইঘুরের ব্যবসায়ী নারী জুমরেত দাউয়ুতকেও বন্দিশালায় আটক থাকার সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চে তার জন্মস্থান উরুমকি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

বন্দিশালায় তাকে দু’মাস আটকে রাখা হয়। এসময়ে তার স্বামীর জন্মভূমি পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। জিজ্ঞাস করা হয়, তার সন্তান কতজন? তারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছে কিনা? কুরআন পড়তে জানে কিনা? তিনি বলেন, তাকে অব্যাহতভাবে অপদস্ত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে একবার মনপুত উত্তর না পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তাকে কাগজের মোটা রোল দিয়ে পিটিয়েছিল।

আরেক বার, আটক কেন্দ্রের পুরুষ কর্মকর্তাদের কাছে তিনি অনুয়ন-বিনয় করে বলেন, যেন তাকে বিশ্রাম কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়। এসময় শুধু হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। যতক্ষণ টয়লেটে ছিলেন, সে দৃশ্য পুরো সময় ধরে কর্মকর্তা দেখেছে বলেও জানান তিনি। তাকে প্রতিদিন শুয়োরের মাংস খেতে দেওয়া হতো বলেও জানান তিনি।

‘বন্দিশালায় কি খাবেন, আর কি খাবেন না, তা আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন না। বেঁচে থাকার জন্য শুয়োর মাংস খেতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’ দোভাষীর মাধ্যমে আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। এ বর্বর অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে হার মানিয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, একটু আগে যা ঘটেছে সে অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে যা ঘটবে তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা আপনার জন্য অসম্ভব।

তিনিসহ আরও অনেক নারীকে সন্তান জন্মদানক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বন্ধ্যা করা হয়েছে। বিতর্কিত এ ঘটনা নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র।

সৌতিবায় ইলির বাসিন্দা। আটকের পর তিনি সেখানে ছিলেন। পরে যখন কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তার স্বামী দুই সন্তানসহ ২০১৬ সালে প্রতিবেশী কাজাখাস্তান চলে যায়, তখন তাকে অন্য বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী, সন্তানদের সঙ্গে কাজাখাস্তানে যাওয়া পরিকল্পনা ছিল তারও। কিন্তু তার মধ্যেই কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে দেয়। এরকম আরও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।

সৌতিবায়ের যেহেতু মেডিকেলের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল এবং প্রিস্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল। তাই তাকে অন্য বন্দিদের চীনা ভাষা শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে উইঘুরদের সঙ্গে কি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।

উত্তর জিনজিয়ানের একটি শহর আটলে। সেখানকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তখন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। পরে সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের জন্য সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠায়। বলেন সৌতিবায়। কিন্ডারগার্টেনের মুসলিম শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূলে খাবার দেওয়ার একটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। তাদের অজান্তেই খাবারে শুয়োরের মাংস দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মুসলিম শিশুরা ছোটবেলা থেকে যাতে হারাম খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠে সেজন্য এসব করা হচ্ছে। উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করতে চীন নানা ধরনের পদ্ধতি, পরিকল্পনা, নীতি ব্যবহার করেছ, বলেন সৌতিবায়।

গেল বছর ইতালি ভিত্তিক এশিয়ানিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা ছয়, সবশেষ চীনা লুনার বছরকে ‘শুয়োরের বছর’ আখ্যা দেয়া হওয়। ইলির কর্মকর্তারা মুসলমানদের ঘরে সরাসরি শুয়োরের মাংস পাঠায়। উৎসবের সময়ে ঘরবাড়ি সাজানোর জন্য মুসলমানদের বাধ্য করে। ‘হারাম বস্তুকে কৌশলে স্বাভাবিক করা হচ্ছে’

তুরস্কভিত্তিক উইঘুর মানবাধিকারকর্মী ও উইঘুর পুনরুদ্ধার সমিতির মহাসচিব আরসলান হিদায়াত আল জাজিরাকে বলেন, চীনা সরকার চায় মুসলমানরা শুয়োর উৎপাদন করবে, শুয়োরের মাংস খাবে, মদ খাবে। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো মুসলমানদের নিষিদ্ধ কাজে স্বাভাবিক করে গড়ে তোলা। জিনজিয়ানে তারা সেই কাজটাই করছে।

২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে জিনজিয়ানের সরকার ঘোষণা দেয় এ অঞ্চলের হালাল রেস্তোরাঁগুলো রমজান মাসে অন্যান্য সময়ের মতো স্বাভাবিক নিয়মে পরিচালনা করতে হবে। যা গেল বছরের সাথে সাংঘর্ষিক। ওই সময় রমজান মাসজুড়ে হালাল রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল।

সে সময় জিনজিয়াংয়ের সরকারি ওয়েবসাইটটে মুসলিম ফুড এস্টাবলিস্টমেন্টের সঙ্গে করা একটি সমঝোতা প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, রমজান মাসে স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে জেন্স জানান, সরকার নিশ্চিত করতে চেয়েছে উইঘুররা রমজানে রোজা রাখে না, তারা খাওয়া-দাওয়া সবকিছু করছে। চীনা ভাষায় লেখা আরও দুটি সরকারি নথি তিনি আল জাজিরাকে দেখিয়েছেন। দেখা যায়, সরকার কাশগড়ে রমজান মাসে অধিকাংশ মুসলমানের জন্য খাবার সরবরাহের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।

জেন্স বলেন, ইসলামে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে হালাল অনুসরণ এবং হারাম বর্জনের কথা বলা হয়েছে। চীনা সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে হালালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। ২০১৮ সালে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, উরুমকিতে হালালবিরোধী একটি প্রচারণাও হয়। সেখানে ইসলামী জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ জীবনধারাকে উৎসাহী করা হয়। বলা হয়, ইসলাম উগ্রবাদকে উস্কে দিচ্ছে।

উইঘুর বিষয়ে চীনের সামগ্রিক নীতি নিয়ে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন বেইজিংভিত্তিক চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনার তানগেন। বলেন, চীনা সরকার খুব ভালোভাবে অনুধাবন করেছে যে, জিনজিয়ানের বাসিন্দাদের অনেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উগ্রবাদী হয়ে গেছে।

চীনের দৃষ্টিতে জিনজিয়ান সংকট সমাধানের একটাই পথ তাদেরকে ছোটবেলা থেকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। শিবিরগুলোতে সে শিক্ষাই দেওয়া হচ্ছে। বলেন আইনার। তিনি আরও বলেন, সরকার যা বলছে তা হলো, তারা সাধারণ মানুষকে শিক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসছে। তাদের দক্ষতা, ভাষা, ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারে।

তবে মানবাধিকারকর্মী হিদায়েত বলেন, বেশ কয়েকজন উইঘুর আছেন, যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা চীনের হান সম্প্রদায়ের মতো জীবনধারণের চেষ্টা করেছেন। তাদেরও বন্দিশালায় নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে।

তানগেন দাবি করেন, কয়েক বছরের মধ্যে জিনজিয়ানের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। মানুষের জীবনমান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তাদের গড় আয়ু বেড়েছে। বেড়েছে সুযোগসুবিধাও।

আরো বলেন, পশ্চিমারা সবসময় বিতর্ক তৈরি করছে। বলে আসছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। জীবনযাপনের জন্য অর্থনীতি, খাবার অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অধিকারের গুরুত্ব খুব বেশি না।

জোরপূর্বক শুয়োর খাওয়ানো হচ্ছে সুনির্দিষ্ট এ অভিযোগের বিষয়ে তনগেন বলেন, এ তথ্য সত্য কিনা তা আমি জানি না। যদি সেরকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে তা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির অন্তর্গত নয়।

বন্ধ্যাকরণের নথিপত্র আল জাজিরা পেয়েছে। এপি এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বিষয়ে তানগেন বলেন, আমি নিশ্চিত এমন কিছু ঘটছে, যা হওয়া উচিৎ নয়। তবে আমার কাছে তথ্য প্রমাণ না থাকায়, অভিযোগের সত্যতা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, চীনে বহু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তাদের কেউ কেউ অপরাধ করে থাকতে পারেন। মূল বিষয় হচ্ছে, তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে খুব কম কথা বলেছে। যদিও জিনজিয়ান প্রশাসন সৌতবায় এবং দাওয়তের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

জার্মান অ্যানথ্রোপোলজিস্টের বিরুদ্ধে মিথ্যচার এবং তথ্য বিকৃতির অভিযোগ ‍তুলেছে বেইজিং। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডানপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। চীনা পর্যবেক্ষকরাও জিনজিয়ান এবং উইঘুর ইস্যুতে তার আকস্মিক দক্ষতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চেয়েছে আল জাজিরা। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। চীনা ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্যাল সাইন্স অ্যান্ড ল’র ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের কাছেও মন্তব্য চেয়েছে, প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত তারাও কোনো উত্তর দেয়নি।

উইঘুরের ব্যবসায়ী নারী দাওয়ুত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। বলেন, বন্দিশালায় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংসতাই তিনি বর্ণনা করেছেন।

কাজাখ মেডিকেল ডাক্তার সৌতবায় বলেন, আমি আমার নির্মম কাহিনী শুনিয়েছি যাতে, এখনও যারা বর্বরতার শিকার হয়ে চুপ করে আছেন, তারা যাতে মুখ খোলার শক্তি পান, সাহস পান। তিনি আরও বলেন, বন্দিশিবিরে আমার সাথে যা হয়েছে তা কখনও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। সারজীবন আমাকে এ যন্ত্রণা বয়ে বাঁচতে হবে। আল জাজিরা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ