শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সরকারি বিদ্যুতে ওয়াজ-মাহফিল ও ব্যাডমিন্টন খেলার হুকুম কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি জাবের কাসেমী
মুহাদ্দিস ও খতীব

শীত মৌসুমে আমাদের দেশে ওয়াজ মাহফিল ও ব্যাডমিন্টন খেলার প্রচলন রয়েছে। যদি এই খেলা শরীয়তের অন্যান্য নীতিমালা লঙ্ঘন না করে (যেমন সতর খোলা, জুয়া, সালাতের ব্যাপারে বেখেয়াল ইত্যাদি) এবং নিছক শারীরিক কসরত বা শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে এটা জায়েজ হবে।

অনুরুপ ভাবে ওয়াজ-মাহফিল করতেদ গিয়ে যদি শরীয়তের বিধানের প্রতি খেয়াল রাখা না হয় তাহলে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। বিশেষভাবে যারা রাতের বেলা লাইট জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলেন ও ওয়াজ-মাহফিল আয়োজন করেন তাদের ক্ষেত্রে একটি ভয়ংকর গুনাহের আশংকা রয়েছে। আজকে এ বিষয়ে কিছু লিখব ইনশাআল্লাহ!

সন্ধ্যার পর যখন ব্যাডমিন্টন খেলা হয় তখন বেশির ভাগ সময়েই মেইন লাইন তথা সরকারি লাইনের থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে হাই ভোল্টেজের লাইট জ্বালানো হয়। অনুরূপভাবে অনেকে ওয়াজ মাহফিলে ও মেইন লাইন থেকে অনুমতি ছাড়াই বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। অনুমোদনহীন এই বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সরকারের খরচ হয় হাজার হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ। যা জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

প্রশ্ন হচ্ছেঃ অনুমতি ছাড়া সরকারি লাইনের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কেউ ব্যাডমিন্টন খেললে এবং ওয়াজ মাহফিলের আলোকসজ্জা করলে বা অন্য কোনো কাজ করলে সেটা জায়েজ আছে কিনা?

উত্তর হলোঃ
এটা পুরোপুরি নাজায়েজ ও হারাম একটি কাজ। কারণ এটা রাষ্ট্রের বা পুরো জাতির সম্পদ। এই সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা কোনোক্রমেই জায়েজ হবে না। এর সাথে সারা দেশের মানুষের হক জড়িত।

কোনো একজন ব্যক্তির থেকে কোনো সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, ঐ ব্যক্তি যদি কখনো মাফ করে দেয় তাহলে আল্লাহ ঐ আত্মসাৎকারীকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু দেশের বা জাতীয় সম্পদ যদি কেউ জবরদখল করে বা আত্মসাৎ করে তাহলে পুরো দেশবাসীর কাছেই অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। এটা অসম্ভব যে, দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করে দিবেন। তাই কিয়ামতের দিন পুরো দেশবাসীই ঐ আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন। অকল্পনীয় বিধায় এ অন্যায়ের গুনাহ অনেক বেশি।

হাদিসে আছে, হজরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে খায়বার যুদ্ধে গমন করি। যুদ্ধে আমরা গণিমত হিসেবে কোন স্বর্ণ বা রোপ্য লাভ করিনি। তবে বিভিন্ন মালামাল, খাদ্যদ্রব্য ও কাপড়-চোপড় লাভ করেছি। এরপর আমরা এক উপত্যকায় চলে যাই। রাসূলুল্লাহ সা. এর সঙ্গে তাঁর একটি গোলাম ছিল। গোলামটি তাঁকে জুযাম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি উপটৌকন হিসেবে দিয়েছিল। উপত্যকায় পৌঁছে আমরা যখন কাফেলা থেকে অবতরণ করলাম তখন সেই গোলামটি উষ্ট্রবহরে অবস্থান করছিল। এমন সময় কোথা থেকে নিক্ষিপ্ত একটি তীর তার শরীরে বিদ্ধ হয় এবং তাতে তার মৃত্যু ঘটে। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! লোকটির কী সৌভাগ্য! সে শাহাদাতের মর্যাদা পেয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, কখনো নয়। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, নিশ্চয় সেই লম্বা চাদরটি আগুন হয়ে তার দেহ দগ্ধ করছে যেটি সে খায়বার দিবসে গণিমত বণ্টনের পূর্বে গোপনে তুলে নিয়েছিল।

বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবিগণ এ কথায় ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং যার কাছে একটি বা দু’টি জুতার ফিতা ছিল তাও এনে জমা দেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, একটি জুতার ফিতা আগুনের অংশ, দু’টি জুতার ফিতা-এগুলোও আগুনের অংশ।- (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুনযিরী)।

হজরত যায়দ ইবন খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোন দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সা. নিজে তার জানাযা পড়াননি। বরং বললেন, তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাসী করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেলাম যার মূল্য হয়তো দুই দিরহাম হবে। (মুয়াত্তা, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুনযিরী, ইবনে মাজা)।

তাই বান্দার হকের ব্যাপারে আমাদের যেমন সচেতন হতে হবে, একই রকম ভাবে আমরা দেশের বা সমাজের কোনো সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছি কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। যারা সরকারি রাস্তা, সরকারি গাছ, সরকারি জমি ইত্যাদি; ছলে, বলে, কৌশলে ভোগ-দখল করেন; কিয়ামতের দিন তাদের কত কোটি মানুষের মুখোমুখি হতে হবে তা চিন্তা করা যায় কী?

তাই আসুন, ব্যাডমিন্টন খেলা এবং ওয়াজ মাহফিলে বা এরকম কোনো প্রয়োজনে আমরা নিজেদের বাসা-বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করি। অন্যের বাসা বা দোকান থেকে সংযোগ নিলে তাদের পেমেন্ট করি। অনুরোধ করে আবদার করে হলেও তাদের অনুমতি ক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। অন্যথায় লক্ষ-কোটি মানুষের দাবীর নিচে আমাদের থাকতে হবে। কিয়ামতের দিন নিজেদের নেক আমলগুলো ঐসকল দাবীদার দিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যান দান করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মাহমুদিয়া ইছহাকিয়া মানিকনগর মাদরাসা, ঢাকা-১২০৩

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর