শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


হেফাজতের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়: আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ ইশতিয়াক সিদ্দিকী
হাটহাজারী প্রতিনিধি>

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কোন ভূমিকা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা সরকার বা দেশবিরোধী নই। ইসলাম, মুসলমান, দেশ ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী আমরা। আমরা বাতিল ও নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী, কোন দল বা পার্টির বিরুদ্ধ নই। ইসলাম বিরোধী অপশক্তি, এবং রাসুলের দুষমন নাস্তিক মুরতাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের ভূমিকা ছিলো,আছে থাকবেই থাকবে।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) হাটহাজারী পার্বতী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে বৃহত্তর চট্টলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি ও সেবামূলক সংগঠন 'আল আমিন সংস্থা'র ব্যবস্থাপনায় শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ রহ., আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ তৈয়ব রহ., ও আল্লামা ইদ্রীস রহ. এর জীবন, কর্ম ও অবদান শীর্ষক আলোচনা ও ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল সমাপনী দিনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।

আল আমিন সংস্থার নেতৃবৃন্দ মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা হাফেজ রিজওয়ান আরমানের ধারাবাহিক সঞ্চালনায় শুক্রবার বাদ জুমা মাওলানা মুফতী জসীম উৃদ্দীনের উদ্বোধনী আলোচনার মাধ্যমে সমাপনী দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

আমিরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আমরা মুসলমান, ইসলাম আমাদের ধর্ম,মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদের প্রভু, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কলিজার টুকরা নবী, মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম আমাদের একমাত্র সংবিধান। যারা এসবে বিশ্বাসী তারা মুসলমান ও আস্তিক। আর যারা এসবে বিশ্বাস করে না তারা নাস্তিক ও বেঈমান।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পুরো বিশ্বে আস্তিক আর নাস্তিকের লড়াই চলছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোন লড়াই নেই, শুক্রবারের জুমার নামাজে তারাও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন হয়, মুসলমান হিসেবে সকলেই ভাই ভাই। কিন্তু আস্তিক আর নাস্তিক কখনো এক হতে পারে না। বিশ্বজুড়ে চলা আস্তিক আর নাস্তিকের এ লড়াইয়ে নাস্তিকদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মদীনার সনদে দেশ চলবে। প্রধানমন্ত্রীর এ কথার সাথে সহমত পোষণ করছি। আমরাও চাই মদীনার সনদে দেশ চলুক। এই দেশ আমেরিকার সনদে চলতে পারে না,রাশিয়ার সনদে পারে না, ভারতের সনদে চলতে পারে না, ফ্রান্সের সনদে চলতে পারে না। ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশ মদীনার সনদেই চলবে।

মদীনার সনদে দেশ চললে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে,সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে ওঠবে। এ সনদের আলোকেই পৃথিবীতে আদর্শ ইসলামি সমাজ ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সরকারের উদ্দেশ্যে আমিরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী বলেন বলেন, আমরা আপনার দুশমন নই, আপনার আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকা রাম-বাম আর নাস্তিক মুরতাদরাই আপনার প্রকৃত দুশমন। তারা আপনাকে ইসলামের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে তৌহিদি জনতা ও আপনার মধ্যে দূরত্ব তৈরী করতে চায়। ওদেরকে চিহ্নিত করুন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কোন পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে না। হেফাজতে ইসলাম আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, ঈমান- আকিদা ভিত্তিক একটি সংগঠন। মসজিদের ইমাম মুসল্লিগণ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, ভার্সিটির ধর্মপ্রাণ ছাত্র- শিক্ষক ও দেশের সকল পরহেজগার মুসলমান হেফাজতের কর্মী ও সদস্য।

কাদিয়ানী বিষয়ে আমীরে হেফাজত বলেন,কাদিয়ানী, খ্রীস্টান মিশনারী, ইস্কন এরা ইসলাম ও মুসলমানের চরম দুষমন। এদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। আমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে আল্লাহর কথা বলব, নবীর উম্মত হিসেবে নবী (সা.) এর শান ও মানের কথা বলবো। এসব কথা বলতে গিয়ে যদি জেল জুলুমের শিকার হতে হয় তাও হবো কিন্তু চুল পরিমাণ পিছুপা হবো না।

ফ্রান্স বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাসূল সা. এর অবমাননা করে চরম অপরাধ করেছে ফ্রান্স। রাসূলের দূষমন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বমুসলিমের কাছে ক্ষমা না চাইবে তাদের পণ্য আমরা বর্জন করবো। তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। নবী প্রেমিকের এই বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস থাকতে পারে না। নবীজি সা. এর অবমাননার প্রতিবাদ হিসেবে বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন,কাদিয়ানীরা নিসন্দেহে ইসলামের শত্রু। তারা শুধু ইসলামের বিরুধী নয় তারা দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বেরও বিরুধী। তাই অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদে বিল পাশ করে কাদিয়ানেদেরকে সরকারিভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। ইস্কনের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে।

চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে আমিরে হেফাজত বলেন, সম্প্রতি একটি মহল ওলামায়ে কেরামের শানে বিষোদগার ও কটুক্তি করছে। ওলামায়ে কেরামের শানে বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী শ্লোগান দিয়ে মিছিল করছে। নায়েবে নবী ওলামায়ে ওলামায়ে শানে বিষোদগার ও কটুক্তি করে এবং বিভিদন্ন জায়গায় কোন অজুহাত ছাড়া কুরআনের মাহফিল বন্ধ করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করা হচ্ছে। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা হচ্ছে। সারা দেশে নির্বিঘ্নে ওয়াজ মাহফিলের পরিবেশে তৈরী করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে কুরআনের কোন মাহফিলের উপর হস্তক্ষেপ করা হলে এর পরিণতে শুভ হবে না। কুরআনের মাহফিল বন্ধ হলে তৌহিদি জনতা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলতে বাধ্য হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. কে রাজাকার ডাকার কড়া সমালোচনা করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় আলেম মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এসব অবমাননা সহ্য করা হবে না। অনতিবিলম্বে এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। একজন নায়েবে নবী আলেমকে নিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড কখনো মেনে নেওয়া যায় না।

-এএ


সম্পর্কিত খবর