শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


নবি দুশমন কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যা: ইতিহাসের শিক্ষা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ আল আমিন।।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের কথা। মুসলিম উম্মাহর চিরশত্রু ইয়াহুদীদের তৎকালীন এক নেতা ছিলো কা’ব ইবনে আশরাফ। জাতে ইয়াহুদী না হলেও নিজের হীন কর্মগুণে সে মদীনায় বসবাসরত বনু নাযীর নামক ইয়াহুদী গোত্রের নেতা বনে যায়।

প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি চরম ঘৃণা-বিদ্বেষ তার রক্ত মাংসে মিশে ছিলো। ইয়াহুদীদের সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কৌশলগত মিত্রতার চুক্তি থাকা সত্তে¡ও কুখ্যাত লোকটি মক্কার কাফেরদের সাথে মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত। মুসলিম নারীদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কবিতা আবৃতি করত।

বিশেষত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে জঘন্য কটূক্তি ও তাকে গালিগালাজ করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে ছিলো। তার নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑকা’ব ইবনে আশরাফ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে, তাকে শায়েস্তা করার জন্য কে প্রস্তুত আছে? মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. বললেন, তাহলে আমাকে (আপনার ব্যাপারে কৃত্রিমভাবে বিরূপু) কিছু কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. কা’ব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে সাদকা চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে নিপতিত করেছে।

তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম! পরবর্তীতে সে তোমাদেরকে আরোও অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমরা তো এখন তাকে অনুসরণ করছি। পরিণতি কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তার সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক (তৎকালীন আরবে প্রচলিত পরিমাপ বিশেষ) বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই।

কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে, তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি বন্ধক হিসেবে কী চান? সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুদর্শন পুরুষ, আপনার নিকট কী করে আমাদের স্ত্রীরদেরকে বন্ধক রাখব? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ।

তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি) তাহলে লোকেরা আজীবন বলাবলি করবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্যের বিনিময়ে আমরা সন্তানদের বন্ধক রেখেছি। এটা তো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়াবে।

তবে, আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। সে বলল, ঠিক আছে। অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা) তাকে পুনঃরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কা’ব ইবনে আশরাফের দুধ ভাই আবু নায়েলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা’ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিলো এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল ।

এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ অসময়ে তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নায়েলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি)। তখন কা’বের স্ত্রী বলল, আমার তো মনে হয় আমি এমন এক ডাক শুনছি, যা থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে। কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, আরে, এ তো মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং আমার দুধ ভাই আবু নায়েলা(তারা অপরিচিত কোন লোক নয়), ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলেও তার যাওয়া উচিৎ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তারা হলেন আবু আবস ইবনে জাবর, হারিস ইবনে আওস এবং আব্বদ ইবনে বিশর। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোনো বাহানায়) তার মাথার চুল ধরে শুকতে থাকবো। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। কা’ব চাদর জড়িয়ে নিচে নেমে আসলো। তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল।

তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আজকের মতো এতো চমৎকার সুগন্ধি আমি আর কখনো শুকিনি। কা’ব তখন সোৎসাহে বলে উঠলো, আমার নিকট আরবের সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই! এরপর তিনি তার মাথা শুকলেন এবং তার সাথীদেরকেও শুকালেন। তারপর তিনি পুনঃবার ঘ্রাণ নেবার আবদার করলেন, কা’ব সম্মত হয়ে মাথা এগিয়ে দিলো। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা করো। তাঁরা তার ঘাড়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে ফেলল । এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন। (বুখারি, হা: ৪০৩৭, মুসলিম, হা: ১৮০১)

এভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদের চরম শত্রæ কা’ব ইবনে আশরাফকে আল্লাহ শাস্তি দিলেন। কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করা হলেও আজও পৃথিবীতে কা’বের প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে ওদের আদি আদর্শ উথলে উঠে। মাতাল হয়ে ওঠে পামরের দল। সম্প্রতি গোটা ফ্রান্স কা’বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ^নবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ওরা নযিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, যেখানেই কা’বরা তাদের আস্ফালন দেখিয়েছে, সেখানেই পৌঁছে গিয়েছে রাসূলের ইজ্জত হেফাজতে বদ্ধপরিকর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার বাহিনী। বিশ^ আজ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার বাহিনীর অপেক্ষায়। ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি ইয়া রাসূলুল্লাহ!

লেখক: শিক্ষার্থী, ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ