শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে মুসলমানদের যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার একটি অন্যতম উদ্ভাবন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রত্যেক ব্যক্তিই নানা কারণে ও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে ব্যয় করে। কেউ এটি ব্যবহার করে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে যোগযোগ করার জন্য, কেউ ব্যবহার করে নতুন নতুন বন্ধু বানাবার জন্য, কেউবা ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞান আহরণের জন্য আবার কেউবা ব্যবহার করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য।

মুসলমান হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি কর্মের ফল পরকালে আমাদের ভোগ করতে হবে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহরের ক্ষেত্রে আমাদের নৈতিকতা অক্ষুণ্ন রাখা অতীব জরুরি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকালে নিজেদের নৈতিকতা ঠিক রাখতে হলে আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত: দৃষ্টির হেফাজত করা। আর এ বিষয়টি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তব ক্ষেত্রে দৃষ্টি হেফাজত করার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সময় দৃষ্টি হেফাজত করা তুলনামূলক বেশি কঠিন। এক্ষেত্রে দৃষ্টি হেফাজত করা মানে হলো, বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে অযথা চ্যাটিংয়ে না যাওয়া এবং স্ক্রীনে ভেসে ওঠা হারাম ছবি ও ভিডিও থেকে দ্রুত স্ক্রল করা। প্রয়োজনে অশ্লীল পেজ আনলাইক করে দিতে হবে ও অশ্লীল গ্রুপ থেকে লিভ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের যথার্থতার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। একথা সত্য যে, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে সকল খবরাখবর জানা যায়। তবে এ মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদ কিংবা খবরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্ছণীয়। সম্প্রতি একটি জরিপে উঠে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা সংবাদগুলোর শতকরা প্রায় ৫০ ভাগেরই কোনো সত্যতা নেই। সুতরাং এখানে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া গেলে তা শেয়ার করার পূর্বে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। অন্যথায় গুজব ছড়ানোর গুনাহ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

তৃতীয়ত: কাউকে ফলো করার পূর্বে তাকে ভালো করে জেনে নেওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নৈতিকতাবিবর্জিত কোনো ব্যক্তিকে ফলো করার মাধ্যমে তার পোস্ট করা যবতীয় অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বিষয়গুলো টাইমলাইনে ভেসে ওঠে যা অনেক সময় আমাদের ইমানকে দুর্বল করে দেয়। নিজের ইমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন ব্যক্তিকে অবশ্যই আনফলো করতে হবে।

চতুর্থত: কোনো কিছু পোস্ট কিংবা শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের কোনো কাজই আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টি এড়ায় না; এবং আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব সংরক্ষণ করার জন্য সর্বদা ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন। আর তাই নিজের টাইমলাইনে কোনো কিছু পোস্ট করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অশ্লীল ও অনৈতিক কোনো কিছু পোস্ট করলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতি অন্যের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হবে।

প মত: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন জরুরী; বিশেষত ধর্মীয় বিষয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ইসলামবিরোধি কোনো কিছু পোস্ট করলে সাধারণভাবেই মুসলমান হিসেবে আমরা অত্যন্ত রেগে যাই এবং উক্ত ব্যক্তির পোস্টে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রাগ ও ক্রোধ প্রকাশ করি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আমার রাগ ও ক্রোধ কি আসলে ইসলামের পক্ষে যাচ্ছে নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষের কাছে নিজের ধর্মকে একটি অসহি ু ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করছি। মনে রাখতে হবে, এই মাধ্যমটি একটি ‘গণজমায়েতের’ জায়গা; এখানে প্রতিবাদের ভাষা বাস্তবে প্রতিবাদের ভাষা থেকে অনেকটাই ভিন্ন হতে হবে।

ষষ্ঠত: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমার কোনো ফায়দা হচ্ছে কি নাকি নিছক সময় কাটানোর জন্য এটা ব্যবহার করছি - নিজেকে এই প্রশ্নটি করা। দিনভর ফেইসবুক চালানোর পর দিনশেষে নিজের দেশ ও পৃথিবী সম্বন্ধে কোনো তথ্যই জানা গেলো না - বিষয়টি যদি এমন হয়, তাহলে বুঝতে হবে, এটা আমার কোনো উপকারেই আসছে না। বরং আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধুমাত্র বিনোদনের স্বার্থেই ব্যবহার করছি। সুতরাং এটা এমনভাবে ব্যবহার করতে জানতে হবে, যাতে করে নিজেরও উপকার হয় ও অন্য ব্যক্তিও আমার থেকে উপকৃত হতে পারে।

সপ্তমত: মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমরা এতোটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়ি যে, আমরা আমাদের অফলাইন কাজকর্মগুলো করতে ভুলে যাই। কখনো কখনো এমনও হয়, ইন্টারনেট চালাতে চালাতে আমরা সালাত আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও ভুলে যাই।

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এ অতি নিমগ্নতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার আন্তরিকতাকে বিনষ্ট করে; এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এটি সংসার ভঙ্গেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউবা মোবাইলে অত্যধিক সময় দেওয়ার কারণে নিজের চাকরিটা পর্যন্ত খোঁয়ান। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোনো ভালো কিছুও ভালো নয়।

মুসলিমইংক ডট কম থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ