বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

ইসলামে সালামের গুরুত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক সৌহার্দ্য ব্যতীত মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সমাজে বসবাস করতে পারে না। আর সামাজিক সৌহার্দ্য সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সালাম আদানপ্রদান করা। সালাম আদানপ্রদানের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সৌজন্যপূর্ণ হয়। সালাম মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বীজ বপন করে। এর মাধ্যমে পারস্পরিক শত্রুতা দূরীভূত হয়।

“সালাম” একটি আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো শান্তি। এর দ্বারা নিরাপত্তা, কল্যাণ ও সুরক্ষাও বোঝানো হয়ে থাকে। “সালাম” আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহের একটি। আসসালামু আলাইকুম - অর্থ হলো, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সুতরাং কেউ কাউকে সালাম দেওয়ার মানে হলো - আপনি আমার কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ, এবং আমার আপনার ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য নেই।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব ও নবী আদম আ. সর্বপ্রথম সালাম প্রদান করেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে সৃষ্টি করার পর তাকে ফেরেশতাদেরকে সালাম দিতে আদেশ করেন। তাই আল্লাহর নির্দেশক্রমে তিনি ফেরেশতাদের সালাম দেন।

যদিও “আসসালামু আলাইকুম” বলার দ্বারাই সালাম আদায় হয়ে যায়, তবু “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” -অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক - বলে সালাম দেওয়াই উত্তম।

সালামের জওয়াবও সালামের মতোই। সালামের জবাবে কমপক্ষে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” বলা আবশ্যক। তবে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলে সালামের জবাব দেওয়া সর্বোত্তম।

নবীজী সা. বলেছেন, দুই ব্যক্তির মধ্যে সেই-ই উত্তম যে আগে সালাম দেয়। (নববী)। তিনি সা. আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই ব্যক্তি অধিক ঘনিষ্ঠ যে আগে অন্যকে সালাম দিয়ে অভিবাদন জানায়। -আবু দাঊদ।

আগে সালাম দেওয়া সুন্নাত; তবে সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন- কেউ যখন তোমাদের সালাম দেয় ও শুভেচ্ছা জানায়, তখন তোমরা তার চেয়েও ভালোভাবে সালামের জবাব এবং শুভেচ্ছা জানাবে অথবা অনুরূপভাবেই জবাব দেবে। আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। সূরা নিসা: আয়াত ৮৬। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, এক মুসলিম ভাইয়ের উপর অপর মুসলিম ভাইয়ের পাঁচটি হক রয়েছে। ১. সালামের জবাব দেওয়া; ২. অসু¯থ হলে দেখতে যাওয়া; ৩. মারা গেলে জানাযায় অংশগ্রহণ করা; ৪. নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা; ৫. তার হাঁচির উত্তরে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (আপনার উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন) বলা। বুখারী: ১২৪০।

সালামের উত্তর দেওয়া আবশ্যক। নবীজী সা. সালামের উত্তর না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আব্দুর রহমান ইবনে শাইবা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দেয়, এটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যে সালামের উত্তর দেয় না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সালাম আদানপ্রদানের মাধ্যমে সহজেই অনেক নেকি হাসিল করা যায়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, এক ব্যক্তি নবীজীর সা. পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যখন তিনি (নবীজী সা.) কিছু লোকের মধ্যে বসা ছিলেন। নবীজীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লোকটি তাঁকে “ আসসালামু আলাইকুম” বলে সালাম দিলেন। অত:পর নবীজী সা. বললেন, সে দশটি নেকি পেয়েছে। এরপর আরেক জন ব্যক্তি অতিক্রম করলেন, এবং নবীজী সা. কে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে সালাম দিলেন। অত:পর নবীজী সা. বললেন, সে বিশটি নেকি পেয়েছে। এরপর আরো একজন ব্যক্তি অতিক্রম করলেন, এবং নবীজী সা. কে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলে সালাম দিলেন। অত:পর নবীজী সা. বললেন, সে ত্রিশটি নেকি পেয়েছে। বুখারি: ৫৮৬।

উল্লেখ্য যে, কয়েকটি সময়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। যেমন- যখন কেউ প্রশ্রাব বা পায়খানারত অবস্থায় থাকে, যখন কেউ ঘুমায়, কেউ যখন গোসলখানায় থাকে, যখন কারো মুখের মধ্যে খাবার থাকে। কেউ যখন কুরআন তেলাওয়াত করে, তখন তাকে সালাম দেওয়ার অনুমতি আছে; তবে এমতাবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। দুয়া ও নামাযরত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ারও একই হুকুম।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, সালাম দেওয়ার সময় যাতে মাথা না ঝুঁকে। কেননা মুসলমান একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকটই মস্তক অবনত করে; অন্য কারো কাছে নয়। আর সালামের জবাবে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” না বলে কেবল ভ্রু উঁচু করা, হাত নাড়ানো, মুচকি হাঁসি দেওয়া অথবা চোখ দিয়ে ইশারা করা - কোনোটিই করা যাবে না।

সামাজিক সৌহার্দ্য রক্ষায় সালাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মুসলমানদের মধ্যে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের জন্ম দেয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা ইমান আনবে। আর তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বলবো যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? (সেই জিনিসটি হলো) তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। মুসলিম: ৫৪

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ