শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


যে থানার গ্রামগুলো আহলে বাইত ও সাহাবাদের নামে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবুল ফাতাহ কাসেমী: দেশের দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলায় রয়েছে চরফ্যাশন নামে থানা। সে থানার গ্রামগুলোর নাম করণ করা হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহলে বাইত ও সাহাবাদের নামে। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য আমরা তুলে ধরছি সে এলাকার কিছু গ্রামের নাম।

ভালো অর্থবোধক নাম রাখা ইসলামের শিক্ষা। নাম ব্যক্তি, স্থান কিংবা স্থাপনার যারই হোক। ভালো নামের অর্থ ব্যক্তির মাঝে প্রভাব ফেলে। স্থানীয় জনতার মাঝে বেশ প্রভাব ফেলার ব্যাপারেও আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে হাদীসের পরিভাষায় তাফাউল (تَفَاؤُلٌ) বলা হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻛﺎﻥ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺘﻔﺎءﻝ ﻭﻻ ﻳﺘﻄﻴﺮ، ﻭﻳﻌﺠﺒﻪ اﻻﺳﻢ اﻟﺤﺴﻦ. ﺭﻭاﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭاﻟﻄﺒﺮاﻧﻲ، ﻭﻓﻴﻪ ﻟﻴﺚ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻴﻢ، ﻭﻫﻮ ﺿﻌﻴﻒ ﺑﻐﻴﺮ ﻛﺬﺏ

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভ লক্ষণ পোষণ করতেন, অশুভ লক্ষণ মনে করতেন না। আর তিনি সুন্দর নাম দ্বারা মুগ্ধ হতেন।’ [মুসনাদে আহমাদ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৯২, হাদীস: ১২৮২৭]

একটি ভালো নামের মাধ্যমে শীলনতা প্রকাশ পায়। ব্যক্তিত্বের আভিজাত্য ফুটে উঠে। তাই কেউ কোন দিন নিজ সন্তানের নাম ‘হাবিল’, ‘কাবিল’ রাখেনি। কোন অধিবাসী তাদের স্থানের নাম ‘বালাবাক্কু’ রাখেনি।

এক ব্যক্তি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কী দায়িত্ব? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘যখন কারো ঘরে সন্তান জন্ম লাভ করে তখন সে সন্তানের সুন্দর নাম রাখবে। ইসলামের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নাম রাখবে।’ কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ও পিতার নামে ডাকা হবে। অতএব কদু, বদু, আপেল, কমলা, আকাশ, বাতাস, সনি, শনি, অর্ক, শর্ক ইত্যাদি এ জাতীয় অসুন্দর অর্থহীন দূর্বোদ্ধ নাম রাখা উচিত নয়। এ জাতীয় নামে ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে না। এ জাতীয় নামে ইসলাম ধর্মের স্বকীয়তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

আজকাল ডাইজেস্ট দেখে নাম চয়ন করার ফ্যাশন শুরু হয়েছে। নামের এ সৌন্দর্য যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে। স্থান, স্থাপনা বা জায়গার ক্ষেত্রেও একই বিধান। যদি কোন মুসলিম এলাকার নাম রাখা হয় ‘দেবীদ্বার’। তাহলে একজন আগন্তুকের জন্য এ এলাকার পরিবেশ নির্ণয় কিছুটা কষ্টকর হবে। তাই একটি সুন্দর সুকুমার নাম শুচিময় রুচির পরম পাওয়া। এটা ইসলামের সৌন্দর্য। ধর্মের অনন্য স্বকীয়তা।

‘মুহাম্মাদ’। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নাম। গুগলের ভাষায়ও বেস্ট ন্যাম মুহাম্মাদ। মুহাম্মাদ অর্থ প্রশংসিত। কেউ মুহাম্মদ বলে গালি দিলেও মনের অজান্তে প্রশংসা করে ফেলে। হ্যাঁ। এটাই ইসলাম। এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য।

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মন্দ নামে ডেকো না’ (সুরা, হুজরাত:১১)। তাই কাউকে মন্দ নামে ডাকা জায়েজ নেই। এমনকি কেউ কাউকে তাচ্ছিল্য করার জন্য ব্যঙ্গাত্মকভাবে যেমন বরিশাইল্যা, নোয়াখাইল্লা- নামে ডাকাও জায়েজ নেই।

মক্কা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন। মদিনার পূর্ব নাম ছিল ‘ইয়াসরিব’। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পর এ এলাকার নাম ‘মদিনাতুল মুনাওওরা’ হয়। যার অর্থ ‘আলোকিত শহর’। কেউ কেউ বলেছেন, ‘মদিনাতুর রাসুল’ তথা ‘রাসুলের শহর’। ইসলামের খলিফাগণ কোন এলাকা জয় করার পর প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করতেন এবং এলাকার সুন্দর একটি নামও রাখতেন।

চোখে ভাঁজ পড়ার মতো ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা ভোলার একটি থানা ছাড়া সব থানার নাম সুন্দর এবং সুন্দর। যেমন ভোলাগাজি নামক এক দানশীল ব্যক্তির নামেই ‘জেলা সদর ভোলা’। হাজি দৌলতখানের নামে ‘দৌলতখা’। বুরহানুদ্দিন নামক এক ব্যক্তির নামে ‘বুরহানুদ্দিন’ থানা। জনাব হাজি মেহেরমিয়ার নামে ‘মেহেরগঞ্জ’ (লালমোহন)। জনাব তজুমদ্দিন মিয়ার নামে ‘তজুমদ্দিন’ থানা ইত্যাদি।

আর এ জেলারই চরফ্যাশন থানায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আহলে বাইত ও খুলাফায়ে রাশেদিনের রা. এর নামে বিভিন্ন জায়গার নামকরণ করা হয়েছে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে আছে ‘রসুলপুর’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাবার নামে আছে ‘আবদুল্লাহপুর’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মার নামে আছে ‘আমেনাবাদ’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ের নামে আছে ‘ফাতেমাবাগ’। হযরত আবু বকর রা. এর নামে ‘আবুবকরপুর’। হযরত উমর রা. এর নামে ‘উমরপুর’। হযরত উসমান গনী রা. এর নামে ‘উসমানগঞ্জ’। হযরত আলী রা. এর নামে ‘আলীগাও’। হযরত খাদিজাতুল কুবরার নামে ‘খাদিজাবাগ’। হযরত আয়েশার নামে ‘আয়েশাবাগ’। উম্মে কুলসুমের নামে ‘কুলসুমবাগ’। বিবি হালিমার নামে ‘হালিমাবাদ’। হযরত হাসান রা. এর নামে ‘হাসানগঞ্জ’। বিখ্যাত পীর কারামত আলী জৌনপুরির নামে ‘কারামতগঞ্জ’। খান বাহাদুর নুরুজ্জামানের নামে ‘নুরাবাদ’ ইত্যাদি। এসব সুন্দর অর্থবহ নাম সু্ন্দর চর্চার জানান দেয়। আমাদেরকে শীলন চর্চা শেখায়।

একটি সুন্দর নামে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনতার চিন্তা চেতনা, রুচিবোধের প্রকাশ পায়। সুন্দর নাম ও নামের চিন্তক মানুষগুলোর মননের দিকটি ভাস্বর হয়ে থাকুক কালে কালে। নাম অনন্য সৌন্দর্যে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকুক যুগে যুগে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ