বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


দেনমোহর নারীর অধিকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।

ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা। প্রতিহত করেছে জুলুম-অত্যাচার। মানব হিসেবে পুরুষের মতোই সম্মানের আসনে আসীন করেছে বংশের আধার ও গর্ভের ধারক নারীকে। সম্মান-মর্যাদার খাতিরে বানিয়েছে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারী। নারীদের ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি এবং মানব রক্ষার সম্মান প্রকাশ করার জন্যই ইসলাম পুরুষদের ওপর আবশ্যক করে দিয়েছে তারা দেনমোহরের বিনিময়ে নারীদের বিয়ে করবে। সন্তুুষ্টচিত্তে পরিশোধ করে দিবে এই দেনমোহর। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।

ইসলামে দেনমোহরের গুরুত্ব অপরিসিম, এ ছাড়া নারীর সতিত্বই বৈধ হয় না। দেনমোহর না দেওয়ার নিয়তে বিয়ে ব্যাভিচার সমতুল্য। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছ।’ সুরা আহজাব : ৫০।

মোহরানা বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় সব আলেমগণ একমত, বিয়েতে ইজাব-কবুলের সময় দেনমোহরের আলোচনা না হলেও স্ত্রী মোহর ঠিকই পাবে। অন্তরে পরিশোধের নিয়ত না থাকলে তার ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর পরিশোধের ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাকের নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’ মুসনাদে আহমদ।

বিয়ের পর নির্জনবাসে যাওয়ার আগেই স্ত্রীকে দেনমোহরের কিছু হলেও দেওয়া মুস্তাহাব। রাসুলে আকরাম (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেওয়ার আগে বিবির কাছে যেয়ো না। হজরত আলী (রা.) ওজরখাহি করলেন, আমার কাছে তো কিছুই নেই। রাসুলে করিম (সা.) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি ছিল সেটি কোথায়? ওটাই ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দাও। সাহাবী হজরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার পূর্বেই বর্মটি ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দেন।’ আবু দাউদ।

বিয়েতে দেনমোহর অত্যাবশ্যকীয়। তবে তা নির্ধারণে ভারসাম্য কাম্য। অত্যধিক দেনমোহর নির্ধারণ ভালো নয়। খুব সহজে স্বামী পরিশোধ করতে পারে এতটুকু দেনমোহরই উত্তম। এ প্রসঙ্গে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প-স্বল্প।’ মুসনাদে আহমদ। দেনমোহর বেশি হওয়া যদি কাম্য হতো এবং বিষয়টি পছন্দনীয় হতো তাহলে মহানবী (সা.)-এর বিবিগণ এবং তাঁর কন্যাদের দেনমোহর বেশি হতো নিঃসন্দেহে।

অথচ নবীর স্ত্রীদের মোহরও বার উকিয়া (পাঁচশো দিরহাম) তথা ১৫০ তোলা রূপার অধিক ছিল না। একমাত্র হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)-এর মোহরানা চার হাজার দিরহাম ছিল। আবিসিনিয়া সম্রাট নাজ্জাশি তা পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। নবীকন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) এর মোহরানাও পাঁচশো দিরহামই ছিল। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর জামানায় লোকেরা অত্যধিক দেনমোহরের প্রতিযোগিতা শুরু করলে তিনি শুনে অনেক কঠিন সতর্কবাণী শোনানোর কথা হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। ফাতেমা (রা.)-এর দেনমোহর হিসেবে মোহরে ফাতেমী ধার্য করার যে রীতি সমাজে চলমান তা কিন্তু সুন্নত নয়। সুন্নত হলো স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে মহিলার সম্মানও যাতে ঠিক থাকে এ পরিমাণ দেনমোহর ধার্য করা।

মোটকথা দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য। তবে সামর্থ অনুযায়ী মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি এবং অহঙ্কার প্রদর্শন একেবারেই অনুচিত। এই দেনমোহর বিয়ের সময় বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুশিমনে দিয়ে দেওয়া কর্তব্য। টালবাহানা করা, বা একেবারেই না দেওয়া স্ত্রীর ওপর এক ধরনের জুলুম। যা কোনভাবেই জায়েয নয়।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ