মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


মিয়ানমারের 'উন্মুক্ত কারাগারে' আটকে আছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমারের সংঘাত কবলিত রাখাইনে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নোংরা ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সংস্থাটির পক্ষ থেকে জোরপূর্বক, ঢালাওভাবে আটক করা রোহিঙ্গাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানায়।

এইচআরডব্লিউ জানায়, গণগ্রেফতারের শিকার অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমানকে উন্মুক্ত কারাগারের মতো ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। মিয়ানমার সরকার ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে গেলো ৮ বছর ধরে অমানবিক পরিস্থিতিতে আটকে রেখেছে। তাদের বাড়িঘর, কৃষি জমি এবং জীবিকা কেড়ে নেয়ো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়নের আশা খুবই ক্ষীণ বলে জানান এইচআরডব্লি‘র প্রতিবেদন লেখক শায়না বাউচনার।

২০১৭ সালের আগে মিয়ানমারে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করতো। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে তারা বসবাস করে আসছিল। কিন্তু দেশটির সরকার তাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের অভিবাসী বলে বিবেচনা করে। নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে। আখ্যা দেয় রোহিঙ্গা বলে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস সামরিক অভিযান চালায় মিয়ানমার সরকার। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ওই বর্বরতার কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গণহত্যার অভিযোগে বিচার চলছে।

আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারে থেকে যায়। ২০১২ সালের সংঘাতের আগে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশটির শিবিরে বসবাস করছে। এক লাখের মতো রোহিঙ্গা রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর সামরিক বাহিনীর অব্যাহত নজরদারির কারণে তারা শঙ্কা এবং ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী, রাখাইনের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যেকার সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এইচআরডব্লিউ’র প্রকাশ করা ১৬৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারে শিবিরে বসবাস করছে। তাদের অনেককেই চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করতে হয়। চলাফেরা, জীবনযাপনে তাদের নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। শিবিরে আটকে থাকা এক রোহিঙ্গা বলেন, এখানকার পরিবেশ কোনোভাবেই বসবাসের উপযোগী না। রাখাইনে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। পূর্বানুমতি ছাড়া সেখানে বিদেশি কোনো সাংবাদিক যেতে পারেন না। অনুমতি পেলেও সঙ্গে থাকে মিয়ানমারের সরকারি প্রতিনিধি।

আল জাজিরা জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে রাখাইনে তাদের প্রতিনিধি যায়। সেখানে রোহিঙ্গারা নোংরা পরিবেশে বসবাস করছে বলে জানানো হয়। বলা হয়, রোহিঙ্গারা সবসময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ভয়ে, আতঙ্কিত জীবন কাটাচ্ছে।

এইচআরডব্লিউ জানায়, রোহিঙ্গারা জীবনের হুমকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছে। উপেক্ষিত হচ্ছে তাদের অন্যান্য মৌলিক অধিকার। পুষ্টিহীনতাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় রোহিঙ্গারা ভুগছে বলেও বলা হয়।

মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ এবং নৃশংসতায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। ২০১৮ সালে সংস্থাটি প্রতিবেদন তৈরি শুরু করে। ৬০ জন রোহিঙ্গা এবং বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাতকার নেয়া হয়।

অধিকারহরণের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং তাদের গ্রামে তল্লাশি চৌকি এবং তারকাঁটার বেড়া তৈরির মাধ্যমে স্বাধীন চলাফেরাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করা। প্রতিনিয়ত সেখানে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। শিবিরের বাইরে যারা বেরিয়েছে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা নানাধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

আরেক রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পের জীবন খুবই যন্ত্রণাময়। স্বাধীনভাবে চলাফেরার কোনো সুযোগ নেই। স্বাধীনতা বলতে আমাদের কিছুই নেই। এইচআরডব্লিউর অভিযোগ, রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের সম্প্রদায় থেকে আলাদা করার জন্য ২০১২ সালে সংখ্যালঘু এ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘাত চাপিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার।

২০১৭ সালের এপ্রিলে এক বিবৃতিতে শিবির বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। এইচআরডব্লিউ জানায়, পরবর্তীতে মিয়ানমার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ শুধুমাত্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আলাদকরণে ব্যবহার হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ভিটেমাটিতে ফেরার অধিকার দেয়নি সরকার। তৈরি করে দেয়া হয়নি বাড়িঘর। ফেরত দেয়া হয়নি চাকরি, কাজকর্ম। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে দেশটির সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিবিরে আটকে পড়াদের হতাশা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। সাক্ষাতকারে এ অবস্থার অবসান ঘটবে কীনা তা নিয়ে কোনো আশাবাদও ব্যক্ত করতে পারেনি রোহিঙ্গারা।

এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, এটা চিরস্থায়ী পদ্ধতি। কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না। যা বলা হয়েছে শুধু মুখের কথা। করোনা পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির সরকার তাদের চলাফেরায় আরো কঠোর বিধিবিধান আরো করে।

মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দেয়ার জন্য প্রতিবেদনের লেখক বাউচনার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মিয়ানমার সরকার দাবি করে যে তারা সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ করছে না, কিন্তু তাদের এই দাবি ফাঁকা বুলির মত শোনাবে যদি তারা রোহিঙ্গাদের পূর্ণ আইনি সুরক্ষাসহ ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে না দেয়। বলেন শায়না বাউচনার।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ