শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বাইতুল্লাহর খুতবা: শ্রেষ্ঠ ওসিয়ত ও উপদেশ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম

১৭ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি মসজিদে হারামের প্রদত্ত খুতবার সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ
খতিব,শায়খ ড. আব্দুল্লাহ আওয়াদ জুহানী
অনুবাদ: মুহাম্মদ ইশরাক

প্রথম খুতবা
হে মুসলমানগণ! আল্লাহ তায়ালা রাসূলগণকে কিতাব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। বে শরীক খোদার একনিষ্ঠ তাওহীদের প্রতি মানুষকে ডাকার জন্য। তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলো এবং গোমরাহি থেকে হেদায়াতের পথে বের করার জন্য।

আল্লাহর অসংখ্য রহমতের অন্যতম, তিনি এই শেষ উম্মতের নিকট শ্রেষ্ঠ ও সেরা নবী, আমাদের প্রিয় রাসূল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। যিনি রাসূলগনের মধ্যে আল্লাহর মনোনীত ও সমর্থিত । যেমন তাঁর উম্মত সমস্ত উম্মতের মধ্যে নির্বাচিত ও বাছাইকৃত।

তাঁর বর্ণিত বিষয় মেনে চলা এবং বারণকৃত ও তিরস্কৃত বিষয় এড়িয়ে যাওয়াই একমাত্র সরল পথ ও সৌভাগ্যের সিড়ি । তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি মানা ছাড়া আল্লাহর ইবাদত করা সম্ভব নয়।

হে মুসলমানগণ! আল্লাহর রাসূল ছিলেন,দয়াময় ও স্নেহশীল এবং উম্মতের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,'তোমাদের নিকট এসেছে,তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে অসহ্যকর । তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। এসত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই -আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।'( সূরা তওবা:১২৮-১২৯)

ওসিয়ত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সুন্নত। এর অর্থ ওয়াদা, প্রতিজ্ঞা বা চুক্তি ইত্যাদি। 'ওসিয়ত' শব্দের মূল উপাদানের সম্পর্ক 'ওসল' বা 'পৌঁছা' অর্থের সঙ্গে। ওসিয়ত সম্পদ বা অন্য যে কোন বিষয়ে হয়ে থাকে। সম্পদের ওসিয়ত শরীয়ত সংশ্লিষ্ট বিষয়। যার আলোচনা ফিকাহশাস্ত্রে রয়েছে।আর এক্ষেত্রেই 'ওসল' বা 'পৌঁছা' অর্থ উদ্দেশ্য। ওসিয়তের মধ্যে 'ওসল' বা 'পৌঁছা' অর্থ রয়েছে। কেননা ওসীয়তের মাধ্যমে ওসিয়তকারী ওসিয়ত গ্রহণকারীর স্থানে পৌঁছে যান। অর্থাৎ কেমন জানি, ওসিয়তের মাধ্যমে তিনি নিজের মাল নিজেই পৌঁছে দিলেন।

সম্পদ ব্যতিত অন্য অন্যান্য ক্ষেত্রে ওসিয়তের অর্থ, তাওজীহ তথা স্পষ্টকরণ, নাসিহাহ তথা উপদেশ, ইরশাদ তথা পথ দেখানো বা উপকার ও অপকার রোধের মাধ্যমে করো কল্যাণ করা। যেমন ধরুন বললেন, 'আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তাকওয়ার ওসিয়ত করেছেন।' যেমন সাহাবীগণ (রা.)বলতেন, 'রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ এ কাজের ওসিয়ত করেছেন।'

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিয়ত ও উপদেশগুলো গভীরভাবে পরোক্ষ করলে, স্বতন্ত্র ও বৈচিত্রেঘেরা এমন অনেক বিষয় উদ্ভাসিত হবে। যেগুলোর সারাংশ ইহকালে ও পরকালে মানব অঙ্গনের প্রতিটি পদরেখায় বিচরণ করে। তবে পরকালীন বিষয়ে এগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অলৌকিকতা ও নাতিদীর্ঘতায় ভূষিত।

কালামুল্লাহর তেলাওয়াত এবং সে অনুযায়ী আমল,নবীজির সেই ওসিয়তগুলোর অন্যতম। আবু যর (রা.)বলেন,'আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম,আমাকে ওসিয়ত করুন। নবীজি বললেন, তুমি কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকো কেননা এটি তোমার জন্য জমিনে নূর আর আসমানে খাজানা। (ইবনে হিব্বান থেকে বর্ণিত)

মহাগ্রন্থ আল কোরআন সার্বিক দিক থেকে মানবজীবনকে মজবুত মানহাজ ও সঠিক পন্থায় সাজিয়েছে। কোরআনে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার রিশতা ও সম্পর্ক স্থাপনে প্রভুত্বের আকিদাগুলো এবং এ সংশ্লিষ্ট ঈমানের ছয় রুকনের গায়বি বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বর্ণনা রয়েছে ।
ইবাদত সম্পর্কে রয়েছে বিস্তর আলোচনা অতঃপর মানুষের পারষ্পরিক আচার আচারণ ও লেনদেনের নিয়ম নীতিও বর্ণিত হয়েছে।

মহাগ্রন্থ আল কোরআন মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে অনন্য করে তুলেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'মুমিনরা তো পরষ্পরে ভাই ভাই।'(সূরা হুজুরাত:১০)

কোরআন দয়া-মায়া, স্নেহ-ভালাবাসার এবং পারষ্পারিক অধিকার ও কর্তব্যের ভিত্তিপ্রস্তরের উপর নিমার্ণ করেছে পারিবারিক বন্ধন। বর্ণিত হয়েছে,' আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর । আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। (সূরা বাকারা:২২৮)

কোরআন জীবন ধারনের জন্য জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বর্ণিত হয়েছে,'অতএব, তোমরা জমিনের কাঁধে বিচরণ কর এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।'( সূরা মুলক:১৫)

কোরআন ন্যায়নীতির মাফকাঠি স্থাপন করেছে। বর্ণিত হয়েছে,'আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।'( সূূূরা হাদীদ:২৫)

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আইন,বিচার,কার্যকর; এই তিন ক্ষমতাকে সুস্পষ্ট করে বর্ননা করা হয়েছে। এরচেয়ে বড় কথা হলো,এগুলো আয়াতের প্রত্যেকটিতে রয়েছে উন্নত ও মানসম্মত অর্থ, প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যাখ্যা এবং সঠিক ও সুস্পষ্ট শিক্ষা।

আল্লাহ তাআলা যথার্থই বলেছেন, এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। সূরা ইসরা:৯

দ্বিতীয় খুতবা

আল্লাহ তায়ালার তাওফিকপ্রাপ্তদের জন্য কোরআন হলো নূর। আল্লাহ সুবহানাহু কোরআনের মাধ্যমে কোন জাতিকে সম্মানিত করেন আবার কোন জাতিকে লাঞ্ছিত করেন। সুতরাং যারা এটা গ্রহণ করবে এবং আমল করবে তারা আল্লাহর নিকট সৌভাগ্যদের অন্তর্ভুক্ত । আর যারা কোরআন পরিত্যাগ করবে এবং এ থেকে বিমুখ হবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জাহানে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত এবং চরম হতভাগা হিসেবে বিবেচিত ।

ইমাম জাওযী (র).বলেন, "দুনিয়া হারুত মারুতের চেয়েও বড় ভেলকিবাজ। কেননা হারুত মারুত শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ফাটল ধরাতো। আর দুনিয়া তো বান্দা ও তাঁর রবের মধ্যে ফাটল ধরায়।

আপনি যখন নানান ধরন ফেতনা ফাসাদের সম্মুখীন হবেন। আর এগুলোর প্রখরতায় অস্থির হয়ে যাবেন। বিশেষ করে এই শেষ জামায়। তো তখন এ কথা স্বরণে রাখুন,'নিশ্চয় আল্লাহর কিতাব আল কোরআন আপনাকে হকের পথে অবিচল রাখবে।' কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 'অনুরুপ আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে।'( সূরা ফুরকান:৩২)"

অন্তরের প্রশান্তি সৌভাগ্যের থেকে উত্তম। কারণ সৌভাগ্য সাময়িক একটা বিষয় পক্ষান্তরে অন্তরের প্রশান্তি সার্বক্ষণিক বিষয় যা মসিবতের সময়েও বিদ্যমান থাকে। প্রশান্তি প্রাপ্তির অন্যতম উৎস হলো, মহান আল্লাহর জিকির। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। সূরা রাদ:২৮"

যে ব্যক্তি জিকির আদায়ে কোরআনে মশগুল থাকার কারণে দোয়া করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা তাকে দোয়াকারীদের থেকে উত্তম জিনিস দান করেন। আল্লার শ্রেষ্ঠত্ব সৃষ্টির উপর যেমন কালামুল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মাবনুষের উপর তেমন।

উমর ইবনে আবদুল আজিজ( র.) নিজ কর্মকর্তাদের চিঠিতে জানালেন,'আমার কোন কাজে আহলে কোরআন ছাড়া অন্য কাউকে নিয়োগ দিবে না।'

তারা প্রতিত্তোরে লিখলেন,'আমরা আহলে কোরআনদের নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মাঝে দুর্নীতি দেখা দিয়েছে।'
আমিরুল মুমিনীন পুনরায় চিঠিতে লিখলেন, তোমরা আহলে কোরআনদেরই নিয়োগ দাও কারণ তাদের মাঝে কল্যাণ কিছু না থাকলে অন্যদের মাঝে তো সর্বাগ্রে কল্যাণ না পাওয়ার কথা।

আল্লাহর কাছে আমরা সকলের জন্য দোয়া করি যেন আমাদের সবাইকে আহলে কোরআন হিসেবে কবুল করেন। আহলে কোরআন তো আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও তাঁর বিশেষদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেকে কোরআন হেফজ ও যথার্থ তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। এ অনুযায়ী আমল করার ও হেদায়েত গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কালামুল্লাহর ওসিয়ত কতই না চমৎকার! কোরআনের ওসিয়তকারী কতই না কল্যাণকামী!

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,'এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ চিন্তা-গবেষণা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।'(সূরা সোয়াদ:২৯)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ