শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মকতবস্কুল শুরু করলাম ১১৩০ টাকা দিয়ে (৩য় পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সালাহ্উদ্দীন জাহাঙ্গীর।।
আজকে ছিল আমাদের মকতবস্কুলের গল্প বলার দিন। কিছু গল্প আমি বলেছি, কিছু গল্প বলেছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা। আজকে যেহেতু বৃহস্পতিবার, এ দিনটি বরাদ্দ করেছি গল্প বলা, ছড়া আবৃত্তি, নানা আনন্দকর্ম ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। শেষে অবশ্য নামাজ মশকের ব্যবস্থা ছিল। ছেলে-মেয়ে উভয়ের নামাজ আলাদা আলাদা করে শেখানো হয়েছে। কার কয়টা সুরা-দোয়া শেখা আছে সে হিসাবও নেয়া হয়েছে। নামাজের তাগিদ ছিল সবার প্রতি।

বাচ্চাদের মায়েরা যারা হাজির ছিলেন তাদেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে নামাজের জন্য। কেননা মা-বাবাকে নামাজ পড়তে দেখলে বাচ্চাদের মনে স্বাভাবিকভাবে নামাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। শুধু আমরা সচেতন হলেই তো চলবে না, অভিভাকদেরও দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।

আমার মকতবস্কুল কার্যক্রম দেখে অনেকেই হয়তো মনে করছেন, এ আর এমন কি! গ্রামের কিছু ছেলেপুলেকে একাট্টা করে পড়াশোনা করানো হচ্ছে। ও তো হররোজ কত গণ্ডায় করে থাকে। তাই না?

আপনাদের যেহেতু জানানো হয়নি তাই আপনারা দেখছেন গাজরের উপরের কয়েকটা সবুজ পাতা, নিচে কী বিশাল লাল রংয়ের গাজর উৎপন্ন হয়ে আছে, সে ব্যাপারে আপনারা এখনও ধারণা পাননি। এ দোষ আপনাদের দিচ্ছি না, আবার দোষটা আমি নিজের কাঁধেও চাপাচ্ছি না। বরং আমি বিরাট স্বপ্নের শুরুটা খুব সাদামাটা করে বয়ান শুরু করেছি মাত্র।

যেহেতু কথা বলার লোকের অভাব নেই, কাজের লোক অল্প তাই অল্প স্বল্প করে কথাগুলো বলছি। কিছু কাজের কথা বলছি, অকাজের কথাই বলছি ঢের। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে স্বপ্ন সাজিয়ে নিচ্ছি আলগোছে। কিছু প্রেরণা নিচ্ছি নিজে, কিছু প্রেরণা ছড়িয়ে দিচ্ছি।

মকতবস্কুল নিয়ে যে দুটো লেখা প্রকাশ করেছি, এ দুটো সেইসব তরুণের জন্য যারা নতুন কিছু করতে আগ্রহী কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে মনে করেন, কিছু একটা শুরু করতে নানা পরিকল্পনা সাজাতে হয়, অনেক টাকা হাতে নিয়ে নামতে হয়, শুরু করলে এই সমস্যা হবে সেই অসুবিধা সামনে আসবে-এমন নানা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ মনোভাব নিয়ে যারা হতাশার আড়ালে ভীত হয়ে বসে আছেন, এ লেখাগুলো তাদের জন্য এক বাস্তব নমুনা।

মকতবস্কুল একটা শুরু মাত্র। শুরুটা আমি সাধারণভাবে করেছি। শুরু করার আগে নানামুখী কোনো পরিকল্পনা করিনি, কোনো ফান্ডের চিন্তা করিনি, বড় কারও মুখাপেক্ষীও হইনি। আমার নিজের যা সম্বল ছিল তাই দিয়ে শুরু করে দিয়েছি। সফল হব কি হব না-এ চিন্তা এখন করছি না।

কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যদি আমি দরদ দিয়ে, মেধা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে ছাত্রদের পড়াতে পারি তাহলে কেন আমি সফল হব না? যারা প্রাথমিক বিদ্যালয় চালাচ্ছে, যারা কিন্ডারগার্টেন-এ পড়াচ্ছে, তারাও তো ছাত্রই পড়াচ্ছে। তো আমি যদি তাদের চেয়ে ভালো করে পড়াতে পারি, অভিভাবকরা কেন আমার মকতবস্কুলে তাদের সন্তানদের দেবেন না? বরং আমি তো অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছি। তারা একমুখী শিক্ষা দিচ্ছে, আমি একসঙ্গে আধুনিক ও ইসলামি শিক্ষা দিচ্ছি। এটা আমার বড় প্লাস পয়েন্ট।

আমার মাইনাস পয়েন্ট যেটা, আমার স্কুল একেবারে নতুন এবং এখন পর্যন্ত এটির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দাঁড়ায়নি।অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার জায়গা এটি। আমার স্কুলের অবকাঠামো বলতে একটি পুরোনো টিনের ঘর, যেটিকে কোনোরকমভাবে স্কুল হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।

তবে এই সমস্যা আমি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে চাই। আপাতত এ ঘরটিকে যথাসম্ভব একটি আধুনিক স্কুলঘরের মতো করে সাজাতে চাই। কিছু ডেকোরেশন করব, যেগুলো বাচ্চাদের আনন্দও দেবে আবার শিক্ষার মাধ্যমও হবে। এছাড়া একটি স্কুলের আনুষঙ্গিক যেসব বিষয় আছে সেগুলোও ধীরে ধীরে যুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আল্লাহ সহায়।

তবে আমি যদি আমার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে ঠিক থাকি তাহলে ছাত্র সংকুলানের জন্য খুব শিগগির হয়তো আমাকে আরও বড় পরিসরের চিন্তা করতে হবে। তখন কী হবে? হ্যাঁ, তখনের জন্যও আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বাড়ির কাছেই রাস্তার পাশে প্রায় ১৭ শতাংশ জমি আছে আমাদের। মকতবস্কুলের জন্য ওই জায়গাটার কথা ভেবেছি। তাছাড়া আমাদের বাড়ির সামনের উঠোনেও ৮-১০ শতাংশের মতো জায়গা খালি পড়ে আছে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে সেখানে বা ওই রাস্তার পাশের জমিতে দু-তিন তলা স্কুল ভবনের কাজ শুরু করে দেবো। যদিও ছাত্রদের বসার জন্য কার্পেট বা ফ্লোর ক্লথের ব্যবস্থা করতে পারছি না এখন, আমি তবু ভয় করি না।

ভয়ের আভিধানিক অর্থ আমার কাছে অন্যরকম। স্বপ্নের শুরু যেহেতু আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে হয়েছে, এ স্বপ্নের সকল কার্যক্রম আল্লাহর নামেই উৎসর্গিত। আল্লাহ যদি সহায় থাকে ভাবনা কিসের, কিসের ভয়...!

মকতবস্কুল কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফেসবুক এবং অনলাইনে শত শত মানুষ উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের উৎসাহ এবং প্রার্থনাই আমাদের বড় সম্পদ। অনেকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন, আবার অনেকে ইতোমধ্যে সহযোগিতা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে বারবার সাহসী করে তুলছে। এই অনুপ্রেরণা জারি রাখবেন আশা করি।

মকতবস্কুলের বেঞ্চ বানানোর খরচ হিসেবে ম্যানচেস্টার থেকে দুলাভাই ইতোমধ্যে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। দুলাভাই শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, মনেপ্রাণে হামেশা অনুপ্রেরণার শিখা জ্বালিয়ে রাখছেন। আশ্বাস এবং পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আরও অনেকে। আপনাদের সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা থাকবে সবসময়।

তবে আমি আরও খুশি হবো যদি দেখি, আমার এই সামান্য প্রয়াস দেখে কোনো তরুণ তার গ্রাম বা মহল্লায় এমন একটি মকতবস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের এই মকতবস্কুল প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্যই এটা-এই স্কুল যেন আরও হাজারও স্কুলের পথিকৃৎ হয়। সেই আশায় রইলাম।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ