বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসনের সাইড ইফেক্ট ও রোগীদের করনীয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা. জেসি হক, এমআরসিপি (ইউকে)
অনুলিখন: ডা.রিফাত আল মাজিদ

আমি আইভারমেকটিন কিংবা ডক্সিসাক্লিন নিয়ে বলবোনা। কারন এগুলোর তেমন সাইড ইনফেক্ট চোখে পড়ে নাই। তাই কেউক যদি মাইল্ড কেসে উপকার পায় তবে খেতে পারে। কিন্তু ডেক্সামেথাসন স্টেরয়েড নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকা গুলো যা করল, সেটা অনেক হতাশা জনক। এই ওষুধ টি কখনো মাইন্ড কেসে খাওয়া উচিত না, খাওয়া উচিত মডারেট অথবা সিভিয়ার কেসে। কিন্তু আপনার প্রব্লেম মডারেট নাকি সিভিয়ার সেটা সিন্ধান্ত নিবেন আপনার চিকিৎসক। এই ওষুধ নিয়ে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা বলি।

অভিজ্ঞতা-১. ২০১৭ সাল। রাজশাহি থেকে একজন লোক আসলেন। উনার ২ চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ২ চোখেই ক্যাটারাক্ট। মাত্র ২৮ বছরে ২ চোখে ক্যাটারাক্ট। আমি অবাক হয়ে গেলাম। পরে হিস্ট্রি নিয়ে জানতে পারলাম, উনি একটু চিকন। উনার তাই বিয়ে হচ্ছে না। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে উনি কোন ফল পান নাই। পরে এক ফার্মেসীর দোকানদার উনাকে ডেক্সামেথাসন ধরিয়ে দেন। উনি ১ বছর এটি খেয়েছেন। এরপর কিছুটা মোটা হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু হারিয়েছেন চোখের দৃষ্টি।

২০১৮ সাল। একজন মহিলা কে দেখলাম, ভয়ানক ব্যাথা নিয়ে এসেছেন কোমরে । পরে এক্সরে করে দেখা গেল compression fracture of vertebra. মহিলা ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। টেস্ট করে ফ্রাকচারের কারন পাওয়া গেল OSTEOPOROTIC fracture. পরে হিস্ট্রি নিয়ে জানতে পারলাম , উনি ২ বছর ধরে এক দোকান দারের পরামর্শে প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম করে স্টেরয়েড খেতেন knee joint er pain জন্য । পরে knee joint er X ray করে দেখলাম ওই মহিলার শুধু osteoarthritis ছিল। উনাকে সারা জীবন এই ভাঙ্গা যন্ত্রণা নিয়ে চলতে হবে।

২০১৮ সাল। এক রোগি হটাথ করে চোখে কিছু দেখছেন না। পরে হিস্ট্রি নিয়ে এবং সব টেস্ট করে জানা গেল Hydroxychlorquine toxicity. কলকাতা থেকে উনাকে প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন দেয়া হয়েছে। হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন হাই ডোজে খেয়ে চোখ নষ্ট হয়ে গেসে।

২০১৮ সাল। এক মহিলা এসেছেন গ্রাম থেকে। উনি বসা অবস্থা থেকে দাড়াতে পারছেন না ১৫ দিন যাবত। সব টেস্ট করে দেখা গেল, উনি অনেক দিন ধরে এজমা এর জন্য একজনের পরামর্শে ইনহেলার না নিয়ে স্ট্রেরেয়ড ট্যাবলেট খাচ্ছেন। এর জন্য পায়ের প্রক্সিমাল মাংস গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই উনি বসা থেকে আর দাড়াতে পারছেন না।

২০১৯। এক মহিলা এসেছেন। উনার ডায়াবেটিস কন্ট্রোল হচ্ছে না। উনি এসেছেন। উনাকে কোন ভাবেই ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। এখানে সেই অকারনে স্টেরয়েড প্রেসক্রিপশন।

২০১৮। এক মহিলা এসেছেন। কিছু ভাল লাগে না। শক্তি কম পান। অনেক প্রেসার। পায়ের মধ্যে পানি জমে ফুলে হা হয়ে গেছে। মুখ ফুলে গোল হয়ে গেছে। ঘাড় ফুলে গম্বুজের মত হয়ে গেছে। পরে হিস্ট্রি বের করে জানা গেল, উনি এজমা এর জন্য লাল বড়ি স্টেরয়েড খান।

এরকম শত শত উদাহরন দেয়া যাবে স্টেরয়েড নিয়ে। তবে আইভারমেক্টিন এবং ডক্সিসাইক্লিন নিয়ে আমার কোন কথা নাই। এই ২ টা ড্রাগ নিয়ে মাইল্ড কেস গুলোতে ট্রায়াল দেয়া প্রয়োজন। আর এই ২ ড্রাগের আমি খুব লাইফ থ্রেটিং সাইড এফেক্ট দেখি নাই তেমন। তাই ট্রায়াল দিয়ে দেখা যেতে পারে।

নতুন যে ঔষধটি ঘোষণা করেছে WHO এটি সুধু মাত্র Critical রোগীর জন্য এবং এটি সুধু মাত্র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাজেশন ছাড়া কেউ খাবেন না।

এটি কোন সাধারণ রোগীর জন্য নয় যদি কোন সাধারণ রোগী এটি খেয়ে থাকেন তাহলে হার্ট দুর্বল (Cardiomyopathy) , হাড় ক্ষয় কিংবা Sexual ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাই বলবো কেউ এই ঔষধ নিজে থেকে কিনে রাখবেন না এবং এটি নিজে নিজে প্রয়োগ করবেন না। এটি কোন Without Prescription এর ঔষধ না।

আবারও বলছি সুধু মাত্র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, Respiratory Medicine বিশেষজ্ঞ, Critical Care মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দের ডাইরেক্ট Supervision ছাড়া কেউ ব্যবহার করবেন না।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ