বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


সাভারে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের পাশে রঞ্জিত ঘোষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>

সাভারে প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব আর পবিত্র মাহে রমজানে তারাবি পড়ানো হাফেজরা পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন চরম সঙ্কটে। লকডাউনে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেমন কাটছে তাদের দিন কাল সে খবর রাখিনি কেউ। এমন পরিস্থিতিতে মানবতার দূত হয়ে এগিয়ে এলেন সাভার পৌর এলাকার ঘোষপাড়ার বীরেন কুমার ঘোষের ছেলে রঞ্জিত ঘোষ

আজ রোববার দুপুরে সাভার সরকারি কলেজ মাঠে আড়াই শতাধিক মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন আর খতিবদের হাতে তুলে দেন ১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী।

সাভারে সব শ্রেণীর মানুষের মুখে এখন রঞ্জিত ঘোষের নাম। ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, টাকা লাগছে না। বিনামূল্যে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ইফতারের পূর্ব মূহুর্তে কর্মহীন অসহায় রোজাদার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নত মানের খাবার। এছাড়াও চাল, ডাল , লবণ, চিনি, আলু , পেঁয়াজসহ ১৪ আইটেমের নিত্যপণ্যের ১৪ কেজি ওজনের খাবার সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি।

আরকে এন্টারপ্রাইজ, আরকে জুয়েলার্স, আরকে ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, আরকে ইমিগ্রেশনের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান জানান, মহামারী করোনার সূচনা থেকেই মানবতার জন্য আমরা কাজ করছি। পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের দিনেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা খাবার পৌঁছে দিয়েছি। প্রতিদিন ৫০ জনের বিশেষ একটি দল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত করে এবং আরেকটি দল তা বিতরণ করে। এখন পর্যন্ত ৪২শ’ মানুষের প্রত্যেককের ১০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি করে ওএমএসের চালের দাম আড়ালে থেকে পরিশোধ করেছেন রঞ্জিত ঘোষ। ২৬ হাজার মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে চাল, ডাল, ছোলা, লবণ, চিনি, সাবানসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজানো ১৪ কেজি ওজনের উপহারের প্যাকেট।

সভার কলেজ মাঠ থেকে রঞ্জিত ঘোষের পাওয়া উপহারকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে ব্যাংক কলোনী মসজিদের একজন মুয়াজ্জিন জানান, হতে পারেন তিনি অমুসলিম। কিন্তু আমাদের মত আলেম,ইমাম, মুয়াজ্জিনদের উনি সাদরে ডেকে যেভাবে সমাধান করেছেন তা সত্যিই নজিরবিহীন।

সাভার পৌর এলাকার লালবাগের একটি মসজিদের ইমাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের রান্না করা খাবার যেমন, মাছ, তরকারি ইত্যাদি খাওয়া ইসলামে জায়েজ। তবে শর্ত হলো খাবারটি কোনোভাবেই হারাম না হতে হবে।

হাদিস থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। তাদের রান্নাকৃত খাবার খেয়েছেন। তাদের দেওয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৬১৫)

তিনি বলেন, একজন ভিন্নধর্মের হয়েও তিনি মুসলিম ধর্মের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, হাফেজদের যেভাবে সম্মানিত করেছেন তার প্রতিদান নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দেবেন।

এই করোনাকালে সকলেই বিপর্যস্ত। রমজান মাস এলে অনেকে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় মসজিদগুলোতে দীর্ঘদিন জামায়াতে বিধিনিষেধ থাকায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের পরিবার নিয়ে কি নিদারুণ কষ্টে রয়েছে তা কেউ খবর রাখেন নি। অথচ এগিয়ে এসেছেন একজন অমুসলিম ভাই।

তিনি বলেন, সবার আগে মানবতা। সেটাই তিনি দেখিয়েছেন। এই মহাদুর্যোগ রঞ্জিত ঘোষের উপহার সামগ্রী ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক না হওয়ায় তা গ্রহণে কোন সমস্যা নেই বরং ইসলামের তা জায়েজ করা হয়েছে। (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব: ২৪/২)

আমরা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য প্রার্থনা করি তিনি যাতে এভাবে মানবতার জন্য সব সময় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন- কৃতজ্ঞতা চিত্তে জানান মাওলানা ইউসুফ নামের এক মুয়াজ্জিন।

যোগাযোগ করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান (এমপি) জানান, ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষ সত্যিকারের মানবতার দিশারী। তার চোখে কোন ব্যক্তি বিশেষ নয়। বেদে, হিজড়াসহ সকল মানুষের জন্য তিনি অকাতরে এগিয়ে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকেই যখন সংকটে মুনাফার কথা ভাবেন তখন তিনি ব্যতিক্রম। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন মানবতার কল্যাণে। এই রঞ্জিত ঘোষরাই বাংলাদেশের আসল হিরো।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ