শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


শাইখুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া কান্দলভি রহ. একটি ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মহিউদ্দীন খান তানজীম।।

মুহাম্মদ জাকারিয়া ইবনে মুহাম্মদ ইয়াহিয়া সিদ্দিকি কান্ধলভি শাহারানপুরি মুহাজির মাদানি ছিলেন দেওবন্দি ধারার একজন হানাফি আলেম। তিনি হাদিসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তার চাচা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ছিলেন দীনি তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ফাজায়েলে আমল নামক গ্রন্থের লেখক। এটি উর্দুতে লিখিত হলেও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

জন্ম ও শৈশব: ২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ ইংরেজি। তারাবীহ'র নামাজের বেশ কিছুক্ষণ পর ভারতের উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত কান্দালাতে জন্মগ্রহন করেন তিনি। ইতিহাসে যিনি শাইখুল হাদিস হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।যিনি ছিলেন একাধারে লেখক, শিক্ষক,গবেষক, পীর, ও বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন । শাইখুল হাদীস আল্লামা জাকারিয়া কান্দলভী রহ শিশুকাল থেকেই কঠোর তারবিয়াত আর পিতৃস্নেহের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন।এসম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন,-আব্বাজান রহ খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়েও খুব শাসন করতেন। এগুলো তখন খুব খারাপ লাগলেও এখন মনে হয় প্রতিটা শাসনই ছিল রহমতস্বরূপ।

শিক্ষাজীবন: ওনি পাঁচ বছরেই দেওবন্দি ধারার শিক্ষা সিলেবাস দরসে নেজামী এর সমস্ত কিতাব পড়ে ফেলেন। ওনার শিক্ষকদের মধ্যে ছিল ওনার পিতা মাওলানা ইহইয়াহ রহ,,মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরী রহ, মাওলানা ইলিয়াছ রহ, মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী রহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওনার পিতার কাছে তিনি সিহাহ সিত্তাহ বা হাদিসের সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ ছয় কিতাব অধ্যয়ন করেন। হজরত ইয়াহইয়া রহ. ছিলেন একজন জগদিখ্যাত মুহাদ্দিস।

তিনি শাইখুল হাদিসকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, তুই হলে বেয়াদব। মানতিক (তর্কবিদ্যা) ,ফালাসাফা(দর্শন) এগুলো উস্তাদদের বেয়াদবীর কারণে তর থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তবে হাদীসের কিতাব যাতে তর থেকে হারিয়ে না যায়, এইজন্য এগুলো আমি পড়াব।

ইলমে দ্বীনের প্রতি আগ্রহ: ওনি বলেন,আমি ছব্বিশ ঘন্টায় মাত্র দু ঘন্টা ঘুমাতাম। দুই-তিনদিন না ঘুমিয়ে কাটানো-আমার জন্য একদম স্বাভাবিক ছিল। যোহর থেকে ইশা পর্যন্ত ইস্তেঞ্জার(প্রস্রাবের) কোন হাজত দেখা দিত না। প্রতিদিন শুধু একবেলা খাবার খেতাম। খেলাধুলা কাকে বলে আমি জানতাম না।আমার একমাত্র খেলাধুলা ছিল শ্লোকবাজী।একজন একটি শ্লোক বলতো,ঐ শ্লোকের শেষাক্ষর দিয়ে আমি আবৃত্তি করতাম"

বড়দের প্রতি সম্মানবোধ: উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক চিকিৎসক খ্যাত হযরত থানভী রহ. এর কাছে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন। শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. যখন সাহরানপুরে আসতেন,তখন রাত জেগে তিনি তার জন্য অপেক্ষা করতেন। মতভিন্নতায় কারো সাথে কোন বাকবিতণ্ডে লিপ্ত হতেন না। সর্বোচ্চ আদবের দিকে খেয়াল রাখতেন বড়দের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে।

কর্মজীবন ও রচনাবলী: ১৩৩৫ হিজরীতে তিনি শিক্ষক নিযুক্ত হোন মাজাহেরুল উলূম সাহরানপুরে। এরপর থেকে একাধারে ১৩৮৮ হিজরী সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছর শিক্ষতার পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এসময় তিনি ছরফ,নাহু, বালাগাত, মানতিক,হাদীস,ফিকাহের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী পাঠদান করেন। মাঝখানে কিছুদিন মদিনায় জামেয়া শারইয়্যাহ নামক একটি মাদ্রাসায়ও শিক্ষকতা করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বব্যাপী পরিচিত দাওয়াতী কাফেলা তাবলীগ জামাত এর পৃষ্ঠপোষক।

মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি আলফিয়াতুল হাদীস নামে তিনখন্ডের একটি হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখে ফেলেন। তার বিশাল রচনাসম্ভার উম্মতের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। তিনি প্রায় তিরাশিটি কিতাব লিখেগেছেন বলে নিজ আত্নজীবনী আপবিতীতে উল্লেখ করেছেন।এর মধ্যে "ফাজায়েলে আমল -যেটি কুরআনের পরে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে সত্তরটিরও বেশী ভাষায় অনুদিত হয়েছে এটি।যুগ যুগ ধরে যেটি পথহারা মানুষদের সঠিক দিশা দিচ্ছে। এছাড়াও বিখ্যাত হাদীসের কিতাব "মুয়াত্তা মালেক" এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ "আওযাজুল মাসালিক(আরবি)" এবং "সামায়েলে তিরমিযী"এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ "খাসায়েলে নবুওয়াহ(উর্দূ)" শিরোনামে ওনার আরো দুটি কিতাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মৃত্যু: এ মহান সাধক ২৮ মে ১৯৮২ সালে মদিনা শরীফে ইন্তেকাল করেন। নিজ ওস্তাদ ও শায়খ আল্লামা খলিল আহমদ সাহরানপুরীর পাশে জান্নাতুল বাকীতে ওনাকে সমাধিস্থ করা হয়।

লেখক: শায়েস্তাগঞ্জ এম এ মডেল কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ