বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


শরয়ি দৃষ্টিকোণে মাস্ক পরে নমাজ আদায়ের হুকুম?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমি।

বর্তমানে মাস্ক ব্যবহার করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এমনকি মাস্ক ব্যবহার না করার কারনে প্রশাসনের পক্ষ হতে অর্থদন্ডসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসচেতন মহল স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়েই ব্যবহার করছে। মসজিদে নামাজরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে দুই ধরনের পরিবেশ। কেউ মাস্ক খুলে রাখছেন,আবার কেউ মাস্ক পরেই নামায পড়ছেন।স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে- মুখে মাস্ক লাগিয়ে নামাজ পড়ার হুকুম কী?নামায হবে কিনা? নামাজে কোন ত্রুটি হবে কিনা?

আসলে মাস্ক ব্যবহার করার কারনে নাক-মুখসহ চেহারা ঢেকে যায়। আর নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই নামাযে স্বাভাবিক অবস্থায় চেহারা ঢেকে রাখা বা চেহারা ঢেকে নামাজ পড়া মাকরুহ। তাই মাস্ক পরেও নামায পড়া মাকরূহ। আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহতে হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্নিত- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يغطي الرجل فاه في الصلاة রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত অবস্থায় চেহারা ঢাকতে নিষেধ করেছেন।

খতীব শারবীনি রহ. বলেন- وأن يصلي الرجل متلثما والمرأة متنقبة -أي يكره ذلك নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই চেহারা ঢেকে নামায পড়া মাকরুহ(মুগনীল মুহতাজ১৪৫/১)। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ার নামাযের মাকরু অনুচ্ছেদে রয়েছে- ويكره التلثم وهو تغطية الانف و الفم في الصلوة নামাযে নাখ-মুখ ঢেকে রাখা মাকরুহ(হিন্দিয়া:১৬৫/১।)

ইমাম নববী রহ. বলেন-أنها كراهة تنزيهيه لا تمنع صحة الصلاة মাকরুহ হলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে(আল-মাজমু'।)

তবে শরীত সমর্থিত কোন ওযরের কারণে চেহারা ঢেকে নামায পড়তে হকে মাকরূহ হবেনা। হযরত ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন-
أجمعوا على أن على المرأة أن تكشف وجهها في الصلاة والإحرام، ولأن ستر الوجه يخل بمباشرة المصلي بالجبهة والأنف ويغطي الفم، وقد نهى النبي صلى الله عليه وسلم الرجل عنه، فإن كان لحاجة كحضور أجانب فلا كراهة، وكذلك الرجل تزول الكراهة في حقه إذا احتاج إلى ذلك

কোন ওযরের কারনে ঢাকতে হলে যেমন নারীদের ক্ষেত্রে নামাযের সময় কোন গাইরে মাহরাম এসে গেলো ইত্যাদি কোন ওযর থাকলে নারী-পুরুষ কারো জন্যই মাকরুহ হবেনা।

বর্তমানে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।ভিন্ন কারো সামনে কাছাকাছি অবস্থানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।তাই নামাযের কাতারে খুব কাছাকাছি দাঁড়ানোর কারনে মাস্কের ব্যবহার একটা ওযর হিসেবে গন্য হবে এবং এর কারনে নামায মাকরুহ হবেনা।

প্রকাশ থাকে যে,ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস হচ্ছে কোন ব্যাধিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রামক নয়।বরং বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে আল্লাহ তা'আলা চাইলে অপরজন পর্যন্ত সংক্রমিত হতে পারে।আল্লাহর ইচ্ছার বাহিরে সংক্রমিত হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।তাই করোনা ভাইরাস সম্পর্কেও সর্বাবস্থায় সংক্রমিত হবেই-এই ধারনা-বিশ্বাস মোটেই সঠিক নয়।তবে বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করা তাকওয়া-তাওয়াক্কুল এবং শরীয়তের চাহিদা পরিপন্থি না হওয়ায় তা অবশ্যই করা উচিৎ।

লেখক, পরিচালক- মারকাযুদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া-ঢাকা ও উস্তাযুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া-ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ