শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


খেলাফত মজলিসের ‘করোনা ভাইরাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ শামাল দিতে সাংগঠনিক সামর্থকে কাজে লাগিয়ে খেলাফত মজলিস ‘করোনা ভাইরাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করেছে। করোনার সংক্রমণ রোধ এবং এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপণায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শাখায় শাখায় ১২ দফা নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়েছে।

সংগঠনের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের প্রেরিত নির্দেশনায় বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জনজীবন আজ স্থবির। অজানা আশংকায় দিনাতিপাত করছে বিশ্ববাসী। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবাই প্রদেশের উহান শহর থেকে এই করেনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। চীনের পরে ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারা বিশ্ব আজ আক্রান্ত।

২৮ মার্চ পর্যন্ত ৬ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত এবং ২৭ হাজারেরও বেশী মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে কোভিড-১৯ এ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশও করোনভাইরাসের আক্রমনের শিকার। এ পর্যন্ত ৪৮ জন আক্রান্ত ও অন্তত: ৫ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিগণও আক্রান্ত হচ্ছেন এ ভাইরাসে। এ ভাইরাসের এখনো কোন প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি। করোনভাইরাস দমনে সারা দুনিয়ার মানুষের সকল প্রচেষ্টা থমকে আছে। মানুষ সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট এ দুর্যোগ ও মহামারি থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্যই একমাত্র ভরসা। করোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীর পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে হবে। বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার করতে হবে। একই সাথে করোন ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (হু) এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। আতঙ্ক নয় সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এ অবস্থায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে খেলাফত মজলিস ইতোমধ্যেই ঘোষিত ২০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল-এর সাংগঠনিক পক্ষের কার্যক্রম স্থগিত করে করোনাভাইরাস সচেতনতা অভিযান শুরু করেছে। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন শাখায় লিফলেট বিতরণসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচী পরিচালনা করা হয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষকে ঘরের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্য সংকটসহ নানা ধরণের সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ শামাল দিতে সাংগঠনিক সামর্থকে কাজে লাগানোর জন্য খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ‘করোনা ভাইরাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- সংগঠনের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, বায়তুলমাল ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মুহা. মিজানুর রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলহাজ আবু সালেহিন ও ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজীজুল হক।

করোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সংক্রমণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা সহায়তা ও পরামর্শ, তহবিল সংগ্রহ ও অভাবগ্রস্থ মানুষের সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে সম্ভাব্য তৎপরতা পরিচালনা সময়ের দাবী।

এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের সকল শাখা ও জনশক্তির প্রতি করণীয় নির্দেশনাসমূহ: ১. বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্যে আল্লাহর সাহায্য কামনা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও তাওবাহ ইস্তিগফার করা। ২. ঘরে থাকা অবস্থায় নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত এবং সবাই অন্তত একবার পবিত্র কুরআন খতমের চেষ্টা করা।

৩. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা। যেমন- নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধৌত করা- অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে, অপরিস্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ না কারা, বেশি বেশি হালকা গরম পানি পান করা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা (৬ ফুট), হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা- হাতের বাহু ব্যবহার করা, অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মাছ-গোশত-ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া, বাইরে বের হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা হত্যাদি।

৪. নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্য সতর্কতা প্রতিপালনে অপরকে সচেতন ও সতর্ক করা। ৫. ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা ও আত্মোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো। ৬. পারিবারিকভাবে তালিম ও দোয়া করা। ৭. পরিমিত ব্যায়াম করা। ৮. জনশক্তির খোঁজ-খবর নেয়া। ৯. আশেপাশের অসহায় মানুষ ও অভাবগ্রস্থ পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসা।

১০. কেন্দ্রীয় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল’ সমৃদ্ধ করতে সকল জনশক্তি, সুধী-শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা। ১১. প্রত্যেক জনশক্তি ইনফাক ফিসাবিলিল্লাহর নিয়্যতে সংগঠনের দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা তহবিলে সাধ্যমত দান করা। ১২. করোনা ভাইরাস সচেতনতা অভিযান অব্যাহত রাখা।

-এএ


সম্পর্কিত খবর