শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


টকশো: মসজিদে নামাজ আদায় নিয়ে যা বললেন ড. মুশতাক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক>

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক, জামিয়া শায়খ যাকারিয়ার প্রিন্সিপাল ড. মুশতাক আহমদ বলেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে মসজিদে না আসাটাই ইসলাম সম্মত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বৈঠক করছেন।

১৮ মার্চ একাত্তর টেলিভিশন একটি টক-শো'র আয়োজন করে। টকশোর বিষয়বস্তু ছিলো ‘করোনায় জুম্মা, কী বলছেন আলেম সমাজ’। অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি আনিসুল হক ও ডিডি ডক্টর মোস্তাক আহমদ।

ড. মুশতাক আহমদকে প্রশ্ন করা হয়, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি, সারা বিশ্বের সকল ধর্মের বিভিন্ন উপাসনালয়ে গন-জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা এ-ও দেখছি, কোনভাবে ধর্মীয় উপাসনালয়ের (মসজিদ, মাহফিল ইত্যাদি) ওপর নিষেধাজ্ঞা মানা হবে না। ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে আপনি কোন আহ্বান জানাতে পারেন কিনা যে কোন না কোনভাবে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে?

প্রতি উত্তরে ড. মোস্তাক আহমদ বলেন, শরীয়তের মধ্যে রুখসত দেওয়া আছে। যেভাবে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য মসজিদে জমায়েত হওয়ার হুকুম, তেমনিভাবে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় এবং এরকম রোগ বা ভাইরাস আসে তখন, শরীয়তে এরকম রুখসতের বিধানও রাখা আছে। (মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ আদায় করা)।

হাদিসের মধ্যে আমরা দেখি, যখন কোন সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে, তখন আজানের সময় বলে দেওয়া হয়- صلوا في رحالكم. صلوا في بيوتكم অর্থাৎ আজান হয়ে গেছে। এটা জানানো হলো। তোমরা নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করে নাও। এরকম জটিল সময় সবাইকে মসজিদে আসতে হবে -এরকম কোন আবশ্যকীয়তা নাই। শরীয়তে সুযোগ রয়েছে। বিধান হলো দুই রকম। আজিমত ও রুখসত।

আজিমত হলো, যখন কোন সমস্যা নাই তখন আমরা মসজিদে আসবো, জামাতের সাথে নামাজ পড়বো। আর যখন এরকম কোন বিপদ বা সমস্যা চলে আসে, তখন শরীয়ত মানুষের উপর কোন জটিলতা আরোপ করে না।

কুরআনে পাকে আল্লাহ পাক পরিষ্কার বলেছেন يريد الله بكم اليسرى ولا يريد بكم العسر অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের জীবনকে জটিল বানানোর পক্ষে নন। আল্লাহপাক চান মানুষ সুন্দর ও সুস্থভাবে চলবে।

সুস্থতা একটি বড় নিয়ামত। মানুষের জীবন আল্লাহ পাকের দেয়া বড় আমানত। এই আমানতের হেফাজত করা জরুরি। আমি নিজে সুস্থ থাকব। আক্রান্ত হব না। এবং আমার দারাও কাউকে আক্রান্ত হতে দিব না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন।

এজন্য বলা হয়েছে তোমরা রোগীদেরকে সুস্থদের মাঝে উপস্থিত করবে না, যেন ওই রোগীর কারণে সুস্থরাও আক্রান্ত হয়ে যায়। لاضرر ولا ضرار অর্থাৎ আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হব না এবং অন্য কেউ আমার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ করব না।

তার দীর্ঘ বক্তব্যের পর উপস্থাপিকা বলেন, ডক্টর মোস্তাক আহমদ আপনি খুব পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলছেন, যে এটি (মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমা সাময়িক বন্ধ রাখা) সম্পূর্ণরূপে ইসলামের বিধান মোতাবেক। যে এরকম একটি পরিস্থিতিতে বা দুর্যোগে, যখন সকলেই আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে, তখন ইসলামই আসলে নির্দেশ দিচ্ছে প্রয়োজনে আমরা ঘরে নামাজ আদায় করতে পারি।

আমরা নিজের মতো করে ইবাদত-বন্দেগী করতে পারি। তাহলে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এরকম কোন নির্দেশনা আসছে না কেন, যে আপনারা যতটা সম্ভব, ভিড় এড়িয়ে চলুন, সেটা যদি মসজিদ বা এ জাতীয় কিছুও হয়!

"শুক্রবার জুমার সময় অনেক মানুষ পাশাপাশি একসাথে নামাজ আদায় করে, যেখানে খুব সহজ হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে সৌদি আরবে পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জুমার নামাজ। এছাড়াও অন্যান্য ইসলামী দেশগুলোতেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং আপনিও বলছিলেন, ইসলামে আছে, "আজান হয়েছে, তুমি তোমার ঘরে নামাজ আদায় করো"। তাহলে ইসলামী ফাউন্ডেশন কেন এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না?

উত্তরে ডক্টর মোস্তাক আহমদ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সচেতন আছি। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে বারবার বসা হচ্ছে। ডিজি মহোদয় এ ব্যাপারে খুবই সচেতন। এবং যথাযথ কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে মন্ত্রী মহোদয়সহ আমরা এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছি।

একাত্তরের উপস্থাপিকা ডক্টর মোস্তাককে শেষ প্রশ্ন করেন, লক্ষ্মীপুরে যে জনসমাবেশ হলো, যেখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন আমরা দেখেছি। করোনাভাইরাস নিয়ে তিনি কথা বলবেন, এজন্য তিনি গন-জমায়েতটি করেছিলেন। এটি আসলে কতটা ঠিক হয়েছে বলে আপনি মনে করছেন?

এর উত্তরে শাইখুল হাদিস মাওলানা ড. মোস্তাক আহমদ বলেন, আমরা এটাকে কোনভাবেই ঠিক মনে করিনাG আমি বিনয়ের সঙ্গে আরেকটু বলবো যে শরীয়ত আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছে রুখছত অবলম্বন করার জন্য। বলা হয়েছে তোমরা আযানের মধ্যে একথা জানিয়ে দাও "صلوا في رحالكم" মসজিদে আসতেই হবে এরকম জটিল সময়ে কোন জরুরী বিষয় না।

এমনকি মসজিদে যারা ইমাম ও মোয়াজ্জিন থাকেন তারা প্রটেকশন নিয়ে থাকবেন। এবং তারা মসজিদের জুমার নামাজ পড়বেন। এর মাধ্যমে জুমা আদায় হয়ে গেল। আর অন্যরা যাদের আসতে সমস্যা, কিংবা রাস্তাঘাট আমরা এখনো নিরাপদ বানাতে পারিনি, তারা নিজ নিজ গৃহে ইবাদত-বন্দেগি করবে। আল্লাহ পাকের কাছে ইস্তেগফার করবে, দোয়া করতে থাকবে।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ