শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


শিবঘাতুল্লার নামে একটি স্কুল খুলতে চান আসানসোলের ইমাম ইমদাদউল্লাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে নাবালক পুত্রকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন তিনি। তবু পুত্রশোক তাকে ইসলামের স্বরূপ থেকে বিচ্যুত করেনি। মর্মান্তিক বেদনা বুকে চেপে শুনিয়েছেন শান্তির বার্তা।

আজ যখন নির্বাচনি অশান্তির আশঙ্কা আরও একবার দেখা দিয়েছে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, তখনও সেই অহিংসাকেই পাথেয় করছেন আপন আদর্শে নিষ্ঠ মানুষটি। তিনি মুহাম্মদ ইমদাদউল্লাহ রশিদি। আসানসোলের নূরানি মসজিদের ইমাম।

রশিদি বলছেন, দেশজুড়ে ঘৃণার বাতাবরণ দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। ধর্মে-ধর্মে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের অভাব প্রকট হচ্ছে। প্রেমের আবহ ছড়িয়ে পড়ুক দেশে, শান্তিতে থাকুন দেশবাসী।

বছর খানেক আগে রামনবমীর মিছিল ঘিরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছিল ইমামের নাবালক ছেলে মুহাম্মদ শিবঘাতুল্লার। নিতান্তই দু'পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে নিহত হয় বছর ষোলোর ছেলেটি। এমন ঘটনায় স্বভাবতই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা উসকে ওঠে। তারাও পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতে চান। কিন্তু রুখে দাঁড়ান সদ্য পুত্রহারা ইমাম রশিদি। এমন সংকটকালেও একা গলা তুলে কার্যত নির্দেশ দেন, 'কোনও প্রতিশোধের পথে হাঁটবে না কেউ। এই মুহূর্তে এলাকায় শান্তি বজায় রাখা জরুরি।'

একমাত্র ইমামের কথায় সেদিনের মতো বড়সড় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল আসানসোল। শুধু আসানসোল নয়, বলা ভালো গোটা পশ্চিমবঙ্গই। আর ওই পরিস্থিতিতে একেবারে ব্যতিক্রমি বার্তা দিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন ইমাম ইমদাদউল্লাহ রশিদি।

সেই ঘটনার পর একবছর কেটে গেছে। আসানসোল তথা রাজ্যের পরিস্থিতি পাল্টেছে অনেক। এসেছে লোকসভা নির্বাচন। এই সময় দাঁড়িয়েও ইমাম তার আদর্শে মেরুদণ্ড ঋজু রেখে দিয়ে চলেছেন শান্তির বার্তা। বলছেন, 'যা হয়েছে, তা ভুলে যেতে হবে। নতুন করে জীবন শুরু হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই পারস্পরিক ভালবাসা, আস্থার জায়গা থাকা উচিত্‍। সব ধর্ম তার নিজের ভালো দিকগুলো ছড়িয়ে দিক। এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের ভালবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় হোক।'

কথায় কথায় জানা গেলো, তিনি ছেলে শিবঘাতুল্লার নামে একটি স্কুল খুলতে চান এলাকায়। সেখানে সর্বধর্মে সমন্বয়ের বাতাবরণ থাকবে। পড়ুয়াদের মধ্যে সম্প্রীতির পাঠ দেবেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রশ্ন, ভোট দেবেন কাকে –এর জবাবে ইমাম জানালেন, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ভোট দেওয়া। সেই নাগরিক অধিকার পালন করা উচিত্‍। একজন নাগরিক হিসেবে তিনিও নিজের কর্তব্য করবেন। কিন্তু কাকে সরকারে চাইছেন? কেমন সরকারই বা প্রত্যাশিত?

রশিদি বলছেন, 'সরকার যে-ই গঠন করুক, তারা যেন সহিষ্ণুতার বার্তা দেন। প্রেম, সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেন দেশজুড়ে। নাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।'

আসানসোলের নূরানি মসজিদের ইমামই এখন এলাকার সবচেয়ে বড় শান্তির প্রতীক, এলাকাবাসীর আদর্শ, অনুপ্রেরণা। ইমাম রশিদির সংস্পর্শে থেকে তারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন, প্রতিশোধস্পৃহার জোর ততটা নেই, যতটা আছে সংযত আচরণের মধ্যে। যতটা আছে দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যাওয়ার মধ্যে।

কেপি


সম্পর্কিত খবর